শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ২০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০
মো. খশরু আহসান।।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুর মতোই বদলায় অপরাধ। আইনের চোখে ধুলো দিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করার জন্য অপরাধীরা প্রতিনিয়ত অপরাধের ধরন বদলাতে থাকে। তথ্য-প্রযুক্তির যুগে বিভিন্ন ডিভাইসের সহায়তায় যেমন সেসব অপরাধের অনেকাংশই কমানো সম্ভব হয়েছে, তেমনি তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার করে অপরাধীরা অন্ধকারজগতের নতুন নতুন রাস্তাও খুঁজে বের করছে। এমন অন্ধকার জগতের নতুন বার্তাবাহক হিসেবে যুক্ত হয়েছে ডেটিং অ্যাপ্স। সঙ্গী খুঁজে নেবার সহজ পথ হলেও এখানে জালের মতো বিস্তৃত হয়ে ছড়িয়ে আছে প্রতারণার ফাঁদ; এমনকি প্রতি মুহূর্তে যেখানে রয়েছে বিপদের আশঙ্কা।
একদিকে আধুনিক পৃথিবীতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তা মানুষের স্থান-কাল ভেদে দূরত্ব যেমন কমিয়েছে; তেমনি অন্যদিকে একটি ভয়াবহ সত্য হলো, মানুষকে মানুষ হিসেবে চিনতে পারার প্রক্রিয়াকে অনেক বেশি কঠিন করে ফেলেছে। মানুষ হয়ে পড়ছে মুখোশধারী, চেনা মানুষ অথচ রঙিন আলোর ওপাশে অচেনা রূপ।
তথ্য-প্রযুক্তি নামক ঝাপসা পর্দার ওপাশ থেকে যাকে বিচার-বিশ্লেষণ করা ধারণার চেয়েও কঠিন পরীক্ষার মতো। প্রতারক চক্রের এক নতুন অপরাধজগতের সূত্রপাত হয়েছে ডেটিং অ্যাপ্স ব্যবহারের মাধ্যমে। মানুষের সঙ্গে মানুষের সখ্য কিংবা ভাবের আদানপ্রদান; অথবা প্রেম থেকে কখনো কখনো প্রণয়ের সম্পর্কের ডিজিটাল মাধ্যমকে এক কথায় ডেটিং অ্যাপ্স বলা যেতে পারে। অন্য অর্থে ডেটিং অ্যাপ্সকে প্রতারণার জগতের জলছাপ বললেও ভুল হবে না।
গণমাধ্যমের একাধিক তথ্যচিত্র বলছে, ডেটিং অ্যাপ্স ব্যবহারকারীর অধিকাংশই তরুণ বয়সি ছেলেমেয়ে, যাদের বড় একটি অংশের সবাই স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়~য়া। খুব সহজেই সঙ্গী খুঁজে পাওয়া যায় বলে এটি ধীরে ধীরে বিভিন্ন বয়সি মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সামনে থেকে কোনো মানুষকে চেনা-জানার জন্য সহজ উপায় হলো তার আচরণগত বৈশিষ্ট্য। আচরণগত বৈশিষ্টে্যর বিশ্লেষণ একজন মানুষের অভ্যন্তরীণ মানসিকতাকে আয়নার মতো প্রকাশ করতে পারে, তবে ভার্চুয়াল জগতে সেই সুযোগ একেবারেই নেই বললেই চলে। নিঃসন্দেহে বলা যায় অনলাইনের এই জগতে মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বাড়লেও একে অন্যের প্রতি মূল্যায়নের মান কমে গিয়েছে।
বাস্তব জগতে মানুষকে চেনাই যখন অনেক বেশি কঠিন, তখন ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষকে চিনতে পারার বাস্তবতার গাণিতিক সূত্র ঠিক কতটা কঠিন; তা আমার চেয়ে সুশীল সমাজের গুণীজনেরাই ভালো বলতে পারবেন। ভার্চুয়াল জগতে মানুষের অবাধ বিচরণ ক্রমেই মানুষকে হুমকির মুখেই ঠেলে দিচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ, অসচেতনতা এবং পাশাপাশি না বুঝে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করা।
ডেটিং অ্যাপ্স ব্যবহার করে তরুণ থেকে শুরু করে সব বয়সি মানুষই কম বেশি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাস্তব জগতে একে অন্যের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় ভার্চুয়াল জগতের দিকে মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভার্চুয়াল জগতের মতো এমন বৃহত্ পৃথিবীতে অচেনা-অজানা অসংখ্য মানুষের মধ্যে একদল অপরাধপ্রবণ অপরাধীদের জালে দুর্ভাগ্যবশত আটকা পড়ছে অনেকেই।
আগামী বিশ্ব প্রযুক্তিগত খাতে সমৃদ্ধির ইতিহাস তৈরি করতে চলেছে। অতএব সমস্যার সমাধান না খুঁজে প্রযুক্তিকে থামিয়ে রেখে কিংবা বাদ দিয়ে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা অসম্ভব। সেক্ষেত্রে এই ধরনের অ্যাপসের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে প্রশাসনকে। প্রতারণাকারী চক্রগুলোর বিস্তার ঠেকাতে আলাদা মনিটরিং সেল গঠন করা যেতে পারে।
পাশাপাশি সব স্থানীয় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন যেমন ‘বিট পুলিশিং’-এর মতো কার্যক্রমগুলো সরকারের হস্তক্ষেপে নিয়মিত আয়োজন করলে এসব অপরাধ অনেকাংশেই রোধ হতে পারে। এছাড়াও টেলিভিশন বা প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে প্রতারক চক্রের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করে জনসচেতনতা তৈরি করা অতি প্রয়োজন।
লেখক: শিক্ষার্থী, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি।