কে এম রিয়াজুল ইসলাম, তালতলী।।
পঞ্চাশোর্ধ বয়সের দিনমজুর আলকাছ ফরাজি তিন সন্তান পুত্র বধূ ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার।আলকাছ ফরাজির বাড়ি বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের লাউপাড়া গ্রামে। আলকাছ পেশায় করাত কল শ্রমিক। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও কাজ করে উপার্জনের টাকায় ভালোই কাটছিলো ছয় সদস্যের এই পরিবারটির।হঠাৎ এক ধমকা হাওয়ায় ওলট পালট করে দিলো পরিবারটির স্বপ্ন গুলো।
দুই ছেলে ও এক মেয়ে তার।বড় ছেলে রাজু, গ্রাজুয়েশন করেও বেকার,এরপরও সে সদ্য বিয়ে করেছে।মেঝ ছেলে রাব্বী,ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া বাম পা ভেঙ্গে দুই মাস ধরে শয্যাশায়ী।ছোট মেয়ে সানজিদা ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ে।
বিভিন্ন করাত কলে ঘুরে ঘুরে দিন মজুরির কাজ করে যা আয় হয় তাই দিয়ে তাদের সংসার চলে। সংসারে অভাব থাকলেও তাদের সংসারে ভালোবাসার ঘাটতি নেই। তবে প্রায় দেড় মাস আগে কাজ করতে গিয়ে ডান পা ভেঙ্গে যায় আলকাছের।তাই তিনি দেড় মাস ধরে কোনো কাজ করতে পারছেন না।দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় বিপাকে পড়ে যায় পরিবারটি।
পূর্বের জমানো টাকা দিয়ে কিছু দিন চললেও গত দুই সপ্তাহ ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধার দেনা করে কোনোরকমে সামান্য খাবার জোগার করে অর্ধ অনাহারে কাটাচ্ছেন।
মরার উপর খড়ার ঘা! করোনাভাইরাসের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সারা দেশে লকডাউন এর কারনে দোকান থেকে বাকি বিক্রিও কমে গেছে।কিছু দিন স্থানীয় বাজার থেকে বাকিতে কেনা কাটা করলেও টাকা পরিশোধ করতে পারছেনা পরিবারটি।অন্যদিকে মেঝ ছেলেটিও অসুস্থ, বাপ বেটা দুজনেরই চিকিৎসা করাতে হবে।নেই চিকিৎসার টাকা,ঔষধ কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন টাকার অভাবে।
সরোজমিনে প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে আলকাছ ও তার পরিবার বলেন,আমাদের সুখী সংসারে কষ্টের ছোয়া কখনো আচ করতে পারেনি।আমরা খুব ভালো ভাবেই দিন কাটাচ্ছিলাম।ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া খরচ দিনমজুর কাজ করে চালাচ্ছি, তবুও ছেলে মেয়েদের কখনো অভাব বুঝতে দেইনি।এখন আমি পা ভাঙ্গা অন্যদিকে করোনায় কোথাও ধার দেনাও পাচ্ছি না।বাপ ছেলের বরিশালে চিকিৎসা করাচ্ছি,আবার যেতে হবে।তাতে প্রায় পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার টাকার প্রয়োজন,টাকার অভাবে যেতে পারছি না।পারছিনা তিন বেলার খাবার তুলে দিতে ছেলে মেয়েদের মুখে।লোক লজ্জায় কারো দারস্থ ও হতে পারছি না।বড়োই মানবেতর দিন কাটছে আমাদের অর্ধাহারে অনাহারে।সময় মতো মোঝ ছেলের চিকিৎসা করাতে না পারলে লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।