রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Menu
Menu

হাড়ের ক্ষয়রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

Facebook
Twitter

রূপালী বার্তা।।
অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয়রোগ হচ্ছে এমন একটি রোগ, যার ফলে হাড়ের ঘনত্ব নির্দিষ্ট মাত্রায় কমে যাওয়ায় হাড় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এতে হাড়ের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে যায়, হাড়ের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হয়ে ক্রমেই হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। ফলে হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়।

কারণ:
১. হাড়ের গঠন ও ক্ষয়ের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়া।
২. মহিলাদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোনের অভাব।
৩. থাইরয়েড এবং প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থিজনিত সমস্যা।
৪. পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ না করা।
৫. জেনেটিক বা বংশানুক্রমিক রোগ, যেমন- হাড়ের ক্যান্সার ইত্যাদি।

উপসর্গ ও লক্ষণ:
অস্টিওপোরোসিসে হাড় নীরবে ক্ষয় হতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে হাড় ভাঙার মাধ্যমে এর উপস্থিতি প্রথমে টের পাওয়া যায়। প্রধান লক্ষণ গুলো হলো-
১. হাড় ও পেশিতে ব্যথা।
২. ঘাড় ও পিঠে ব্যথা।
৩. খুব সহজে দেহের বিভিন্ন অঙ্গের হাড় (বিশেষ করে মেরুদণ্ড, কোমর বা কব্জির হাড়) ভেঙে যাওয়া।
৪. কুঁজো হয়ে যাওয়া।

যাদের ঝুঁকি বেশি:
১. মেনোপজ বা ঋতু বন্ধ-পরবর্তী মহিলা।
২. অপর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ করা।
৩. ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন করা।
৪. শরীর চর্চা না করা।
৫. রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গেঁটে বাত।
৬. এইডস, স্তন ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার ইত্যাদি রোগ এবং এসব রোগের ব্যবহৃত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়।
৭. দীর্ঘ দিন ধরে কর্টিকোস্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ সেবন করা।
প্রতিরোধ:
১. সুষম খাদ্য গ্রহণ করা।
২. পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ।
৩. নিয়মিত শরীর চর্চা করা (যেমন- নিয়মিত হাঁটা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা ইত্যাদি)।
৪. ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা।

চিকিৎসা: সঠিক সময়ে অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসা না নিলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গের হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক বিবেচনায় দুঃসহ জীবন যাপন করতে হয়। বিশ্বজুড়ে প্রতি পাঁচজনে একজন রোগী হাড় ভাঙার এক বছরের মধ্যে মারা যায়। কাজেই অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসা প্রয়োজনীয়তার দিকে আমাদের নজর দেওয়া উচিত। জীবযাত্রার সঠিক নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত। যেমন-
**নিয়মিত ব্যায়াম করা।
**ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন করা।
**শরীরের ওজন কমানো, ফাস্টফুড ও চর্বিজাতীয় খাদ্য এড়িয়ে চলা।
**পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ছোট মাছ, দুধ, ডিম ইত্যাদি গ্রহণ করা।
**চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রার ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ ট্যাবলেট গ্রহণ করা যেতে পারে।
**বয়স্ক পুরুষ বা নারী এবং মেনোপজ পরবর্তী মহিলাদের ক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’- এর পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাড় ক্ষয় প্রতিরোধকারী ওষুধ যেমন- বিসফসফোনেট, এলেনড্রোনিক এসিড-জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে।

অস্টিওপোরোসিসে হাড়ের ঘনত্ব কমে হাড় ছিদ্রযুক্ত, দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। সঠিক সময়ে এর প্রতিরোধ বা চিকিৎসা না নিলে একান্ত ব্যক্তিগত কাজকর্ম যেমন-নামাজ পড়া, গোসল করা, টয়লেটে যাওয়া, হাঁটাচলা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কাজেই অস্টিওপোরোসিস সম্পর্কে সবারই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

ডা: কে.এম. জাহিদুল ইসলাম
এমবিবিএস(ঢাকা), বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এমএস (অর্থোপেডিক সার্জারী) অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল) ঢাকা।

 

জনপ্রিয়