সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১৭ আশ্বিন, ১৪৩০
লাইফস্টাইল।।
মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে! জীবন সুন্দর! যত কষ্টই থাকুক বেঁচে থাকা তবু আনন্দের। কথায় আছে, মানুষ নাকি বাঁচার জন্য ভাসমান খড়কুটোও আঁকড়ে ধরে। তাহলে কেন আত্মহত্যার মতো একটি কাণ্ড অবলীলায় ঘটিয়ে ফেলে সেই মানুষ?
দেশে প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এই শিক্ষিতদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। অর্থনীতিতে মন্দাসহ সমাজে যখন বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, যখন মানুষ বিষণ্ণতায় ভোগে, তখন আত্মহত্যার হারও বাড়ে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকে আবার বাধ্য হয়েও আত্মহত্যা করে; যেমন- দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীরা অনেক সময় আত্মহত্যা করে। অসুখের তীব্র যন্ত্রণা সইতে না পেরে এ পথ বেছে নেয়।
এ বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হকের সঙ্গে কথা হয়।
এই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মূলত হতাশা থেকেই শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করে। এটা শুধু বাংলাদেশে নয় সারাবিশ্বেও এমন দেখা যাচ্ছে। সাধারণত দুই ধরনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। ১. আগে থেকে পরিকল্পনা করে, আয়োজন করে, সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করেন অনেকে। যেটাকে বলা হয় ডিসিসিভ সুইসাইড। ২. হুট করে আবেগের রাশ টানতে না পেরে আত্মহত্যা করে ফেলেন অনেকে, যেটাকে বলা হয় ইমপালসিভ সুইসাইড। ডিসিসিভ সুইসাইড যারা করেন, তারা আগে থেকেই কিন্তু আত্মহত্যার ইঙ্গিত দিয়ে থাকেন।
এছাড়াও তারার বলেন, যৌতুক ও পারিবারিক নির্যাতন, আবেগ নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা, দাম্পত্য কলহ, উত্ত্যক্তকরণ, প্রেম ও পরীক্ষায় ব্যর্থতা, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব, আত্মহত্যার উপকরণের সহজপ্রাপ্যতা, মানসিক অসুস্থতা ইত্যাদি কারণে বেশির ভাগ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকে। প্রচারমাধ্যমে আত্মহত্যার সংবাদের অতিপ্রচার, অপপ্রচার বা অদায়িত্বশীল সংবাদ পরিবেশনের কারণেও কখনো কখনো আত্মহত্যার ঘটনা বাড়তে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে আত্মহত্যা একটি প্রতিরোধযোগ্য বিষয়। সঠিক সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে আত্মহত্যা ঠেকানো যায়। এটি প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি–
# প্রথমত আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে চাইলেই সমাজের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
# শিশুদের বিকাশের সময় তাদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা সফলতার মতো ব্যর্থতাকে মেনে নিতে পারে।
# বাবা-মায়েরও উচিত সন্তানদের আরও বেশি সময় দেয়া, তাদের বুঝার চেষ্টা করা, সন্তানদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে দূরত্ব কমানো।
# বিষণ্নতা, মাদকাসক্তি, ব্যক্তিত্বের বিকার, সিজোফ্রেনিয়াসহ সব মানসিক রোগের দ্রুত শনাক্ত করা ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
# পারিবারিক বন্ধনগুলো দৃঢ় করতে হবে আর পরিবারে প্রত্যেকের সঙ্গে গুণগত সময় কাটাতে হবে।
# আত্মহত্যার সংবাদ পরিবেশনের সময় গণমাধ্যমগুলোকে সব সময় অনুমোদিত নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে।
# সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোর ব্যবহারকারীদেরও সতর্কতার সঙ্গে আত্মহত্যার বিষয় নিয়ে মন্তব্য ও ছবি পোস্ট করতে হবে। এখানেও কোনও আত্মহত্যার ঘটনাকে খুব মহৎ করে দেখানোর চেষ্টা করা যাবে না। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোর কর্তৃপক্ষেরও নিজস্ব নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।
# যেকোনো ধরনের মানসিক সমস্যা বা আত্মহত্যার ইঙ্গিত পেলে দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
# আত্মহত্যা প্রতিরোধে একটি সার্বক্ষণিক হটলাইন এখন সময়ের দাবি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। যে হটলাইনে রোগী বা তার পরিবার যোগাযোগ করে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শসহ কাউন্সেলিংয়ের মধ্যে থাকতে পারে। যাতে সঠিক সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে পারে। এ জন্য সবাইকে যার যার ক্ষেত্র থেকে একযোগে কাজ করারও পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।