স্পোর্টস ডেস্ক।।
১৯৯০ থেকে ২০০০-এর প্রথম দিকে ক্রিকেট বিশ্বে আলোচনা ছিল, কে সেরা, টেন্ডুলকার, না লারা। পরে এই দুজনের সঙ্গে দৃশ্যপটে উঁকি দেন রিকি পন্টিংও। সময় পাল্টেছে, যুগ বদলেছে। ক্রিকেট লিখিয়ে বা ক্রিকেট পন্ডিতদের কাছে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দুটি নাম-বিরাট কোহলি ও স্টিভ স্মিথ। এই প্রজন্মের সেরা ব্যাটসম্যানের প্রসঙ্গটি এলে এই দুজনের নামই সবার মুখে আগে আসে। যদিও ইংল্যান্ডের জো রুট ও নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন কদিন আগেও প্রবলভাবে ছিলেন শ্রেষ্ঠত্বের আলোচনায়।
জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার পোমি মুবাঙ্গাওয়া সম্প্রতি তার ইনস্টাগ্রাম লাইভ টক-শোতে সরাসরি জানতে চান সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার ব্রেট লির কাছে। কোহলি ও স্মিথের মধ্যে কে সেরা, এ নিয়ে প্রথমটায় নিজের কোনও মতই দিতে চাননি লি। অনেক চাপাচাপির পর সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার গেছেন স্মিথের পক্ষে। এমনকি সময়ের সঙ্গে স্মিথ স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের মতো ভালোও হয়ে উঠতে পারেন বলে মনে করেন লি। সংখ্যা বিবেচনায় অবশ্যই।
লি তার যুক্তিতে অবশ্য স্মিথকে একেবারেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী চিত্রায়িত করেননি, ‘খেলোয়াড় হিসেবে তারা দুজন ভিন্ন। কোহলি টেকনিকের দিক দিয়ে নিখুঁত, সে ‘ভি’-এর মধ্যে শট খেলে। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে অফ স্টাম্পের বাইরে ক্যাচ তোলার একটা প্রবণতা তার ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি সে ঠিক করে নিয়েছে, এখন আর অফ স্টাম্পের বাইরে বেশি ক্যাচ তোলে না।’
কোহলির নেতৃত্ব ও ফিটনেসের বিষয়টি যেমন লির বিবেচনায় এসেছে, তেমনি এসেছে বল টেস্পারিং বিতর্কে নিষিদ্ধ হওয়ার পর স্মিথের মানসিক দৃঢ়তা, ‘সে (কোহলি) শৃঙ্খলাপরায়ণ এবং সুপার ফিট… দুর্দান্ত একজন নেতা। আর গত দুইবছর ধরে স্মিথের ক্যারিয়ারে যা কিছু ঘটেছে, তার মধ্যেও শেষ এক বছরে উন্নতি করেছে খেলায়। সেও অসাধারণ ব্যাটসম্যান, ডাকাবুকো, দৃঢ়চেতা। সহজেই যে ভেঙে পড়ে না।’
গত দুই বছরের ঝড়-ঝাপটা সামলে যেভাবে আগের মতোই উঠে এসেছেন স্মিথ, সে কারণে তাকেই সেরা বলছেন লি, ‘এই মুহূর্তে আমি কোহলির বদলে স্মিথের নামই বলছি। যে সময়ের মধ্য দিয়ে সে গেছে এবং যেভাবে সবকিছু সামলেছে অবশ্যই সেই বিবেচনায়।’
এর পরই সাবেক ফাস্ট বোলার সেই কথাটি বলেছেন, যা শুনলে যেকোনও ক্রিকেট মনস্ক মানুষেরই ভ্রূ একটু কুঞ্চিত হবে। ‘আমার মনে হয় স্মিথ ডন ব্র্যাডম্যানের মতোই ভালো কিছু করতে পারবে। তা ছাড়া অন্তত সংখ্যাগতভাবে তার ব্র্যাডম্যানের মতো হয়ে ওঠার একটা আলোচনা তো চলছেই’-বলেছেন লি।
স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের ব্যাটিং গড় ৯৯.৯৪। ৫২ টেস্টের ৮০ ইনিংসে ৬৯৯৬ রান করেছেন ২৯টি সেঞ্চুরি সমেত। এই স্বর্গীয় অস্ট্রেলিয়ান প্রতিভার উত্তরসূরি স্মিথ ৭৩ টেস্টে ৭২২৭ রান করেছেন ৬২.৮৪ গড়ে। নামের পাশে অবশ্য ২৬টি সেঞ্চুরি যোগ হয়েছে এরইমধ্যে। যদিও ওয়ানডে ক্রিকেটে স্মিথ খব বড় কোনও নাম হয়ে উঠতে পারেননি, ১২৫ ম্যাচে ৪২.৪৬ গড়ে করেছেন ৪১৬২ রান।
অন্যদিকে ওয়ানডে ক্রিকেটে কোহলি ২৪৮ ম্যাচ থেকে ৫৯.৩৩ গড়ে ১১৮৬৭ রান করেছেন, যার মধ্যে সেঞ্চুরি ৪৩টি। আবার ৮৬ টেস্ট খেলে ৫৩.৬২ গড়ে করেছেন ৭২৪০ রান।
সীমিত ওভারে শ্রেষ্ঠত্বের পাশে টেস্ট ক্রিকেটেও এমন অভিজাত অর্জন বলে কোহলিকে পিছিয়ে রাখতে পারছেন না অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গতি তারকা, ‘আমি ভবিষ্যতে হয়তো কোহলির দিকেই যাবো, তবে এটা নির্ভর করবে তার মেজাজের ওপর। তারা দুজন এই সময়ের দুই গ্রেট, তাদের আলাদা করাটা আসলে কঠিন।’