সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Menu
Menu

কনের সাজেই উদ্ধার হলো ৩৬০০ বছরের মমি

Facebook
Twitter

অনলাইন ডেস্ক।।
পনেরো বা ষোলো বছরের এক তরুণী। তার পুরো শরীর ভর্তি মূ্ল্যবান গয়না। হয়তো সে ছিল বিয়ের কনে। খুব কম বয়সেই মৃত্যুবরণ করে সে। সম্প্রতি এমনই এক তরুণীর মমি উদ্ধার করেছে প্রত্নতত্ত্ববিদরা। জানা গেছে, মমির বয়স ৩৬০০ বছর।

প্রত্নতত্ত্ববিদরা প্রাচীন মিশরের লাক্সর থেকে এই তরুণীর কফিনবন্দি মমির সন্ধান পায়। মমিটির শরীরে অলংকার এবং কফিনে প্রাচীন ধন-রত্নে ভরা ছিল। ধারণা করা হয়, অলংকারগুলো মমিকৃত তরুণীর বিয়ের সাজসজ্জা ছিল। মমিটি প্রায় ৩৬০০ বছরের পুরাতন।

এটি প্রাচীন মিশরের একটি গুরুত্বপূর্ণ গোরস্থান থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে। যা থেকে প্রাচীন মিশরের ১৭তম রাজবংশের সময়কার জীবনযাপন এবং মৃত্যু সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। হায়ার কাউন্সিল ফর সাইন্টিফিক রিসার্চ (সিএসআইসি) সমর্থিত ‘জেহুটি প্রকল্পের’ অধীনস্থ স্প্যানিশ দল এই মমির সন্ধান পায়।

মিশরের আধুনিক লাক্সরের নিকট অবস্থিত ড্রা আবু এল-নাগা নামে পরিচিত পাহাড় থেকে মমি পাওয়া গেছে। প্রাচীনকালে এটি থিবেসের একটি শহর ছিল। থিবেস ছিল মধ্য এবং নতুন মিশরীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্রও ছিল। সেখানে অনেক বিখ্যাত ধ্বংসাবশেষ এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে।

প্রাচীন মমিটি যেভাবে আবিষ্কৃত হয়
স্প্যানিশ দলটি এ বছরের শুরুর দিকে লাক্সরের এই বিখ্যাত গোরস্থানে ‘জেহুটি প্রকল্পের’ ১৯তম মৌসুমের অনুসন্ধান চালায়। আর তখনই মমিকৃত তরুণীর কফিনটির সন্ধান পায় তারা। এই গোরস্থানে মিশরীয় ১৭তম রাজবংশের তিনজন ফারাওকে সামাহিত করা হয়েছিল। কিউরিওসমোস ম্যাগাজিনের বর্ণনা অনুযায়ী, মমিকৃত তরুণীর কফিনটি ছিল কাঁদা ইটের সমাধিস্তম্ভে। জেহুটি গোরস্থানের প্রবেশদ্বারের নিকট পাওয়া গিয়েছিল মমিটি।

জেহুটি রানি হাটসেপসুট (খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০৮ থেকে ১৪৫৮ খ্রিষ্টাপূর্বাব্দ পর্যন্ত) এর রাজত্বকালে রাজকোষ দেখভালের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। রানি হাটসেপসুট প্রাচীন মিশরের নতুন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সর্বাধিক পরিচিত শাসক ছিলেন। প্রত্নতত্ত্ববিদরা লাক্সরের এই গোরস্থানে অনুসন্ধানের সময় একটি নৃতাত্ত্বিক কাঠের কফিন আবিষ্কার করেন।

যা প্রাচীন মিশরীয় ১৭তম রাজবংশের ( খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৮০ থেকে ১৫৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত) সময়কালের। ওই সময় নিম্ন মিশরের বেশিরভাগ অংশ রহস্যময় হাইকসোস জনগণের দ্বারা শাসিত ছিল। আর ফেরাউনরা শুধু থিবেসের আশেপাশের অঞ্চল শাসন করত। প্রত্নতত্ত্ববিদদের প্রাপ্ত কফিনটি অক্ষত ছিল। এর সংরক্ষণের ব্যবস্থা খুবই উন্নত এবং সাদা রং করা ছিল।

মমিকৃত তরুণী এবং তার বিয়ের সাজসজ্জা
একজন পনেরো বা ষোলো বছরের তরুণীর মমি এটি। তার উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ১ ইঞ্চি। তার শরীর মোড়ানো ছিল মূল্যবান অলংকারে। কফিনের মধ্যেও মূল্যবান সামগ্রী ছিল। সবই তরুণীটির বিয়ের সাজসজ্জা ছিল বলে ধারণা করা হয়। স্প্যানিশ গবেষণা কাউন্সিল সিএসআইসি এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞরা রেডিওগ্রাফি প্রযুক্তিসমূহ ব্যবহার করে সেসব অলংকার চিহ্নিত করে। মমিকৃত তরুণীর দুই কানে দুটি কানের দুল, দুটি অংটি এবং চারটি নেকলেস পাওয়া যায়।

তার প্রতি হাতের একটি আঙুলে একটি আংটি ছিল এবং প্রতি কানে একটি কানের দুল ছিল। মমির তরুণীটির বুকে খুবই সাবধানতার সঙ্গে চারটি নেকলেস সাজানো হয়েছিল। এর মধ্যে দুটি চকচকে সিরামিক পুঁতির তৈরি এবং উজ্জ্বল নীল বর্ণের। অন্য একটি নেকলেস নীল সিরামিক এবং কাচের পুঁতি দিয়ে তৈরি ছিল। সিএসআইসি এর গবেষক হোসে ম্যানুয়াল গ্যালোনের বক্তব্য অনুযায়ী কিউরিওসমোস ম্যাগাজিন বলেছে, পুরো আবিষ্কারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান। নেকলেসে ৭৫টি মূল্যবান বাঁকানো পাথর ছিল। এর সঙ্গে কয়েকটি তাবিজও পাওয়া যায়।

মমি প্রাপ্তির স্থানটি বেশ অদ্ভুত
ধারণা করা হয়, মমির তরুণী তার সম্ভাব্য স্বামীর কাছ থেকে বিয়ের সাজসজ্জার অলঙ্কারগুলো পেয়েছিলেন। যেগুলো সূক্ষ্ম কারুশিল্পের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। প্রাচীন মিশরীয়রা উন্নতমানের শিল্পকর্মে পারদর্শী ছিল। তবে এই কফিন থেকে প্রাপ্ত মূল্যবান বস্তুগুলো বিশেষজ্ঞদের সত্যিই অবাক করেছিল। গবেষক গ্যালোন বলেন, এত অল্প বয়স্ক ব্যক্তির জন্য তুলনামূলকভাবে পরিমিত কফিন থেকে এই সাজসজ্জার সম্পদ পাওয়া সতিই আশ্চর্যজনক।

তরুণীর কফিনটি মাটিতে এমনভাবে পড়ে ছিল যে প্রথম দেখায় তা পরিত্যাক্ত বলে মনে হয়েছিল। অন্যান্য কিছু কফিনও অবশ্য মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া গেছে। গবেষক গ্যালোন সিএসআইসি’কে জানিয়েছেন, আজ অবধি এই গোরস্থান থেকে এক ডজন অরক্ষিত কফিন পাওয়া গেছে যা অস্বাভাবিক। এমন হতে পারে, তরুণীর মমিটি কফিন চোররা সরাতে না পেরে ফেলে রেখে পালিয়েছিল।

মমিকৃত যুবতীর কফিনটি যে গোরস্থান থেকে পাওয়া গেছে অঞ্চলটি বেশ অস্বাভাবিক। কারণ অন্য যে কোনো কবরস্থান থেকে এখানে নারী ও শিশুদের কবর অনেক বেশি ছিল। এই কবরস্থানের অ্যাডোব চ্যাপেলের কাছ থেকে একটি ছোট মাটির কফিন পাওয়া গেছে। স্প্যানিশ গবেষক দলটি এই কফিন এবং কবরস্থান নিয়ে আরো গবেষণা করতে আগ্রহী। তাদের ধারণা, এ থেকে প্রাচীন মিশরের ১৭তম রাজবংশের সময় সম্পর্কিত আরো তথ্য জানা যাবে।

সূত্র-অ্যানসাইন্টঅরিজিন।

জনপ্রিয়