এইচ.এম.হুমায়ুন কবির, কলাপাড়া।।
করোনায় আঘাতহানার পর পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় অর্ধশত কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছে বলে পর্যটন ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন।
প্রাণহীন কুয়াকাটায় হতাশ হয়ে পড়ছেন কয়েকশ’ ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ী। এ সব খাতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অন্তত ৫ হাজার মানুষ। এভাবে চলতে থাকলে তাদের অনেকেই পথে বসার আশঙ্কা করছেন।
ইতিমধ্যে তাদের অনেক পরিবারে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে। সরকারের পক্ষ থেকে পর্যটন খাতে কোনো প্রণোদনা প্যাকেজ না থাকায় দুঃখ প্রকাশ করছেন ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সারা দেশের ন্যায় কুয়াকাটার ১৩টি টুরিস্ট স্পট এখন খাঁ খাঁ করছে। লকডাউনে পুরো দেশ যখন স্থবির তখন কুয়াকাটাও তার ব্যতিক্রম নেই। ১৫টি ফার্মেসি বাদে সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
শুরুতেই আবাসিক হোটেল-মোটেল এবং ওয়াটার বাসসহ টুরিস্ট বোটগুলো বন্ধ করে দেয় পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক। এর পরে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় বার্মিজ মার্কেট, সি-বিচের ঝিনুক মার্কেট, রাখাইন মহিলা মার্কেট, শুঁটকির দোকান, রেস্তোরাঁ, মিউজিয়াম, ইলিশপার্কসহ ছোট-বড় ও মাঝারি সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
ট্রূরিজম নেতাদের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, করোনার প্রভাবে কুয়াকাটা এভাবে আরও চলতে থাকলে বেশিরভাগ পর্যটন খাতে বিনিয়োগকারীরা পথে বসার আশঙ্কা করছেন। এ দিকে সরকারের পক্ষে প্রণোদনার প্যাকেজে পর্যটন খাতে কোনো সুখবর না থাকায় হতাশা দেখা দিয়েছে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সৈকতে বার্মিজ আচারের দোকানের জাকারিয়া জাহিদ বলেন, আমার দোকানে কর্মচারী বেতন দিতে পারিনি। ভরা মৌসুমে বন্ধ হল দোকান।
কুয়াকাটা সি ট্যু এন্ড ট্রাভেলস পরিচালক জনি আলমগীর বলেন, মূল সিজনেই এই বিপদে পড়তে হল আমাদের। প্রায় ৩ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। আর কতদিন চলে এভাবে আল্লাহই জানেন। তারপরও সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজে যেন আমরা থাকতে পারি সে জন্য জোর দাবি জানাই।
ভাসমান কাঁকড়া ফ্রাইয়ের দোকানি জামাল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এমনিতেই ৬ মাস ব্যবসা করি সাগরপাড়ে, তাও এখন এই অবস্থা। বন্ধ দোকানপাট কী করব! ঋণ নেয়া আছে, খাব না দেনা দিব। পারি না মানুষের কাছে হাত বাড়াতেও।
কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোশিয়েশনের (কুটুম) সিনিয়র সহ-সভাপতি হোসাইন আমির বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আঘাতে পর্যটন শিল্পে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। কুয়াকাটার মাঝারী ধরনের ব্যবসায়ীদের ক্ষতির আশঙ্কা বেশি মনে করছি। কারণ যত অভাব থাকুক লজ্জার কারণে এরা বাইরে কারো কাছে হাত বাড়াতেও পারছে না। তাদের পাশে সরকারের বিশেষ নজর দেয়া উচিত।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এম মোতালেব শরিফ বলেন, করোনায় সবচেয়ে ক্ষতি হতে যাচ্ছে পর্যটন খাত। ১৭ মার্চ থেকে কুয়াকাটায় আবাসিক হোটেল-মোটেল বন্ধ রয়েছে। ফলে গত প্রায় ২মাসে এই খাতে কুয়াকাটায় ইতিমধ্যে অন্তত শত কোটি টাকা লোকসানে পড়েছে। পর্যটন শিল্পে এই সিজন পুরোটাই শেষ। সরকার ঘোষিত প্যাকেজের আওতায় ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীদের দ্রুত ঋণের ব্যবস্থা না করলে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।