বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪
Menu
Menu

করোনায় গভীর সংকটে পুতিন

Facebook
Twitter

আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
বর্তমান যুগে রাশিয়াকে অধিকাংশ মানুষই পুতিনের দেশ হিসেবে চেনেন। দেশে বিরোধী দলের তেমন কার্যক্রম নেই বললেই চলে। কেবল বিরোধী নেতার কিছু মানুষকে নিয়ে বিক্ষোভ এবং তাকে জেলে নেওয়ার খবরই বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু ২০ বছরের বেশি সময় ধরে একচ্ছত্রভাবে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে করোনা ভাইরাস। তার দু’টি বড়ো বিপদ। একটি তার ক্ষমতার মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে শঙ্কা এবং দ্বিতীয়ত দেশের অর্থনীতি চরম সংকটের মুখে পড়েছে।

আক্রান্ত বেড়েই চলেছে: ইউরোপে রাশিয়া হঠাৎ করেই করোনা ভাইরাসের হটস্পট হয়ে উঠেছে। বিশ্বে আক্রান্তের দিক থেকে রাশিয়া এখন চতুর্থ (দুই লাখ ২১ হাজার ৩৪৪)। সেই হিসাবে মৃতের সংখ্যা তেমন একটা নয়। মাত্র ২ হাজার ৯ জন। যদিও সমালোচকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন তো অনেক কিছুতেই কারসাজি করেন। তাই এতে কারসাজির শঙ্কাটাও অযৌক্তিক নয়। গত ১১ মে নিউ মার্কিন মিডিয়া ইয়র্ক টাইমস বিভিন্ন শহরের কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত ১ হাজার ৭০০ মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল। সেখানে টানা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা দশ হাজারের অধিক।

রবিবার থেকে সোমবার ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ১১ হাজার ৬৫৬ জন। দেশটিতে মানসম্মত মেডিক্যাল সরঞ্জাম না পাওয়ায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে অনেক চিকিৎসকের হাসপাতাল থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যার খবর জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়া।

অর্থনীতির ধস ঠেকাতে লকডাউন শিথিল: প্রতিদিন দশ হাজারের বেশি মানুষ সংক্রমিত হলেও প্রেসিডেন্ট পুতিন গতকাল লকডাউন শিথিলের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, মঙ্গলবার (আজ) থেকেই মানুষ কাজে ফিরবে। তিনি বলেছেন, গত ছয় সপ্তাহ ‘কাজ না করার সপ্তাহ’ ছিল। কিন্তু আবার ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু হবে। তার এই ঘোষণায় অনেকেই বিস্মিত।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের অর্থনীতি সামাল দিতেই পুতিনের এ ছাড়া আর কিছু করার নেই। করোনা ভাইরাস আসার পর বিশ্বে তেলের বাজারে ধস নেমেছে। ফলে রুশ অর্থনীতিও সংকটে পড়েছে। কারণ দেশটির রপ্তানি আয়ের দুই-তৃতীয়াংশই আসে জ্বালানি খাত থেকে। তেলের বাজার নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে কিছুটা বিরোধও হয়েছে রাশিয়ার। কিন্তু তাতেও পুতিনের তেমন লাভ হয়নি।

রাশিয়ার একটি বড়ো ব্যাংক জানিয়েছে, তেলের দাম ১০ ডলারের নীচে থাকলে দেশের জিডিপিতে ১৫ শতাংশ পতন হবে। সাবেক রুশ অর্থমন্ত্রী অ্যালেক্সাই কুরদিন বলেছেন, দেশে বেকার মানুষের সংখ্যা এই বছরে ৮০ লাখে পৌঁছাতে পারে। ইতোমধ্যে বেকার শ্রমিকরা কিছু স্থানে বিক্ষোভও শুরু করেছেন। নর্দিয়া রাশিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মুখ্য অর্থনীতিবিদ তাতিয়ানা এভডোকিমোভা বলেছেন, গ্যাস এবং তেল থেকে আয় ১৬৫ বিলিয়ন ডলার (১৪ লাখ ১ হাজার ৭৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকার বেশি) কমে যেতে পারে। এতে দেশের বাজেটে বড়ো ধরনের ঘাটতি তৈরি হবে।

ক্ষমতার বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কা: প্রেসিডেন্ট ২০০০ সাল থেকে একটানা রাশিয়া শাসন করছেন। তিনি পশ্চিমা দেশের চাপে অনেক সংকটে পড়েছেন। সেগুলো আবার কাটিয়েও উঠতে সক্ষম হয়েছেন রুশ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির সাবেক কর্মকর্তা পুতিন। কিন্তু করোনা ভাইরাস তাকে গভীর সংকটে ফেলেছে। সেজন্য তিনি মস্কোর বাইরে একটি প্রাসাদ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কাজ করছেন। তার মন্ত্রিসভারও তিন থেকে চারজন আক্রান্ত হয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাম্প্রতিক স্বপ্ন ছিল তথাকথিত একটি গণভোট আয়োজনের। এর মাধ্যমে তিনি আবার প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বাড়িয়ে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা চূড়ান্ত করেছেন। কিন্তু করোনা ভাইরাস তার সেই স্বপ্নে বাধ সেধেছে। তিনি বাধ্য হয়েই সেই গণভোট আপাতত বাতিল করেছেন।

জনপ্রিয়তায়ও ভাটা: রাশিয়ার স্বাধীন জরিপকারী প্রতিষ্ঠান লেভাদা সেন্টার জানায়, গত ২০ বছরে এই প্রথম জনগণের মধ্যে পুতিনের জনপ্রিয়তা সর্বনিম্ন। গত এপ্রিলে ৫৯ শতাংশ নাগরিক পুতিনের প্রতি জানিয়েছিলেন। গত অক্টোবরেই এই হার ছিল ৭০ শতাংশ। আর ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখলের পর তা ছিল রেকর্ড ৯০ শতাংশ।

প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভাবমূর্তি রক্ষায় রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম করোনা ভাইরাসের তথ্য না জানিয়ে গত ২০ বছরে তার কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ প্রচার করছে। -সিএনএন, বিবিসি, সিএনবিসি ও রয়টার্স

জনপ্রিয়