বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Menu
Menu

করোনা পরিস্থিতি: মেয়েটিকে চরম নির্যাতন, গরম পানিতে পোড়ায় শরীর

Facebook
Twitter

অনলাইন ডেস্ক।।
চার মাস আগে পল্টনের একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজে যোগ দেয় মেয়েটি। কাজে সামান্য ত্রুটি হলেই তাকে গৃহকর্ত্রী মারধর করতেন। সর্বশেষ গত ১৫ মে ওই কিশোরীর শরীরে গরম পানি ঢেলে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার মেয়েটি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার উপপরিদর্শক শেখ মো. জসীম উদ্দিন বলেন, গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতনের অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। বর্তমানে তাঁরা কারাগারে আছেন।

মামলার কাগজপত্র এবং ভুক্তভোগী কিশোরীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নির্যাতনের শিকার ওই মেয়েটির বয়স ১২ বছর। গ্রামের বাড়ি রংপুর। বড় বোন ঢাকার মুগদা এলাকায় বসবাস করেন। চার মাস আগে ওই কিশোরীকে চার হাজার টাকা বেতন দেওয়ার কথা বলে কাজে নেন গৃহকর্ত্রী আছমা খানম। এর পর থেকে কিশোরী ওই বাসায় থেকে কাজ শুরু করে।

কিশোরীর বড় বোন বলেন, ‘গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমার বোন ওই বাসায় চার হাজার টাকা বেতনে কাজ শুরু করে। লকডাউন শুরু হলে আমরা বহুবার আমার বোনের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা আমাদের দেখা করতে দেয়নি। আমাদের বলা হতো, আমার বোন যে বাসায় কাজ করত, সেই বাসার একজন লোক নাকি মারা গেছে।’

মামলার এজাহারে বাদী বলেন, তাঁর ছোট বোন কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকে কারণে-অকারণে নির্যাতন করতেন বাড়ির গৃহকর্ত্রী ও তাঁর ছেলে। কোনোভাবে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিতেন না। তিনি নিজে তাঁর বোনের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। গত ১৫ মে দুপুরে তাঁর বোনকে ঝাড়ু এবং ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে নির্যাতন করে গুরুতর জখম করেন আসামিরা। তারপর গত ২৯ মে বাসা থেকে পালিয়ে আসে তাঁর ছোট বোন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়ক বিলকিস বেগম বলেন, পল্টনের একটি বাসায় ওই কিশোরীকে নির্যাতন করা হয়। পরে ওই কিশোরী ওসিসিতে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে।

কিশোরীর বড় বোন বলেন, ‘আমার বোনের শারীরিক অবস্থা এখন আগের থেকে ভালো। বাসায় নিয়ে এসেছি। তবে শরীরের নানা স্থানে মারপিটের দাগ রয়েছে। চেহারা ভেঙে পড়েছে। একবেলা খেতে দিলে আরেক বেলা দিত না। আমার বোন গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে সবই বলেছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

পল্টন থানার এসআই শেখ মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি, ওই কিশোরীকে প্রায় প্রতিদিনই মারধর করতেন আসামি আছমা খানম ও তাঁর ছেলে। জিজ্ঞাসাবাদে আসামি আছমা খানম আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন, কাজে ত্রুটি পেলে তিনি মেরেছেন। গৃহকর্ত্রী যখন মারধর করতেন, তখন তাঁর ছেলেও কিশোরীকে মারধর করত।’

নির্যাতনের শিকার কিশোরীকে আইনি সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসির আইনজীবী ফাহমিদা আক্তার। তিনি বলেন, করোনাকালে দিনের পর দিন ১২ বছরের কিশোরীকে নির্যাতন করেছেন আসামিরা।

গরম পানি ঢেলে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আসামি আসমা খানমের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওভেনের গরম পানি আনার সময় মেয়েটির শরীরে পড়ে যায়। ইচ্ছে করে তার শরীরে কেউ গরম পানি ঢালেনি।

জনপ্রিয়