মো. নাঈম মিয়াজী, মতলব।।
কয়েকদিন পরেই ঈদুল আজহা। আল্লাহকে খুশি করতে তার নামে পশু কোরবানি করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। এদিকে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও চাঁদপুরে কোরবানির পশুর কোনও সংকট হবে না বলছেন খামারিরা। তবে মহামারি পরিস্থিতিতে পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
ঈদকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় বসতে শুরু করেছে পশুর হাট। তবে এসব পশুর হাটে বেচা-কেনা নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা কাজ করছে। কোরবানির জন্য প্রস্তুত পশুর ভালো দাম পাবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় খামারিরা। অন্যদিকে সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখে হাটে গিয়ে পছন্দের পশু কিনতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ক্রেতারা।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও চাঁদপুরে কোরবানির পশুর চাহিদা ও যোগানে তেমন একটা তারতম্য দেখা হবে না।
গরু ও ছাগল মিলে চাঁদপুরে ৭১ হাজার ৯শ’ ৪৩টি পশু কোরবানির বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলায় গরু মোটা-তাজাকরণ খামারীদের মধ্যে ২ থেকে ৫টি পশু রয়েছে এমন খামারী ৬৪৭৬ জন। ৬ থেকে ৯টি পশু রয়েছে এমন খামারী ৯৩৭ জন। ১০ থেকে ২০টি পর্যন্ত পশু রয়েছে এমন খামারী ২৫ জন। ৫১ থেকে আরও বেশি এমন খামারীর সংখ্যা ৮ জন।
কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত এমন পশু উপজেলা ওয়ারী সংখ্যা হচ্ছে – চাঁদপুর সদরে ১২ হাজার ৮শ’টি, মতলব দক্ষিণে ৩ হাজার ৭শ’টি, মতলব উত্তরে ১০ হাজার ২শ’ ৪৭টি, শাহরাস্তি উপজেলায় ৮ হাজার ৪শ’ ৪৮টি, কচুয়া উপজেলায় ১০ হাজার ৫০টি, ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ১২ হাজার ২টি এবং হাইমচর উপজেলায় ৪ হাজার ৬শ’ ৫০টি।
চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বখতিয়ার উদ্দিন জানান, জুন মাসে আমাদের কাছে কোরবানির জন্য প্রস্তুত যে পরিমাণ হিসাব এসেছে তা কোরবানির পূর্ব মুহূর্তে আরো বাড়বে। জেলায় কোরবানির চাহিদা মেটাতে আমদানিকৃত পশুর পাশাপাশি স্থানীয় খামারীদের পশু হাটে বিক্রি হবে।
তিনি আরো বলেন, চাঁদপুরে এবার কোরবানির পশুর কোনও সংকট হবে না। চাহিদা ও যোগান এখানে সমান সমান। অভ্যন্তরীণভাবে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই কোরবানির পশুর কোনও সংকট হবে না।
মতলব উত্তর উপজেলার গাজী এগ্রো ফার্মের মালিক গোলাম মোস্তফা সুমন বলেন, গরু পালনকে ব্যবসা হিসেবে নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে কোরবানির গরু বিক্রি করে আসছি। তবে এবার গরুর প্রকৃত দাম পাবো কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। কারণ করোনার জন্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। আগে যারা একা একটি গরু কোরবানি করতেন, এবার তাদের অনেকে ভাগে কোরবানি দেবেন। তাই খামারগুলোতে যে পরিমাণ গরু মোটাতাজা করা হয়েছে, তার বিক্রি নিয়ে খামারিরা শঙ্কায় আছি।
উপজেলার রামপুর এলাকার খামারি কামাল হোসেন গাজী বলেন, ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কোরবানির গরু লালন-পালন করছি। আমার দুটি খামারে ৫০টি গরু আছে। এ গরুগুলোই আমার সারা জীবনের আয়ের টাকা দিয়ে কেনা। সঙ্গে কিছু ব্যাংক ঋণও রয়েছে। কিন্তু এবারে গরুর বাজার নিয়ে খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি। এর মধ্যে প্রথম কথা হচ্ছে বাজার কেমন হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে কি গরুর বাজার সম্ভব? তাছাড়া করোনার কারণে মানুষের আর্থিক সংকটে চাহিদাও কমবে বলে মনে করেন এই খামারি।