শামীম আহমদ তালুকদার, সুনামগঞ্জ।।
ডিপ্লোমা চিকিৎসক তথা উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় তৃণমূলের প্রথম সারির স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী মধ্যম শ্রেণির এই চিকিৎসক সমাজ। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ থেকে ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (ডি.এম.এফ) সনদপ্রাপ্ত ও বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বি.এম.ডি.সি.) নিবন্ধিত এই চিকিৎসক সমাজ। কিন্ত স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ অবদান রাখা এই চিকিৎসকগণ বর্তমানে অবহেলিত।
জানা যায়, বিগত এক দশক ধরে নেই তাদের কোন নিয়োগ। উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় তাদের শিক্ষা জীবন থেমে আছে ডিপ্লোমায়। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও এনজিও নির্ধারিত পদ বিবরণী সঠিক কর্ম পরিধি ও বেতন কাঠামো না থাকায় তাদের কর্মজীবন দিশাহীন হয়ে পড়ছে। সমমানের সকল ডিপ্লোমা ধারীগণকে সরকার দশম গ্রেডে উন্নীত করা করা হলেও উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারগণ থেমে আছে এগার গ্রেডে।
বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিডিএমএ) সুত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার ডিপ্লোমা চিকিৎসক বেকার রয়েছেন। কিন্ত তাদের কোন নিয়োগ নেই। প্রানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূল জনগণের মাঝে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে স্থাপন করেছেন কমিউনিটি ক্লিনিক। কিন্তু সেখানে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করছে নন মেডিকেল জনবল। স্পর্শকাতর ৩০ টি ঔষধ তুলে দেওয়া হয়েছে সীমিত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এই সেবা কর্মীদের হাতে। ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের অধীনে ৩ বৎসর তত্ত্বীয় কোর্স সম্পন্নের পর অনুষদের নিয়ম অনুযায়ী এক বৎসর ইন্টার্ণশিপ প্রশিক্ষন গ্রহণ করতে হয়। তার পরও বৈর্ষম্যের শিকার হচ্ছেন ডিপ্লোমা চিকিৎসক। অভিযোগ উঠেছে, সমমানের অন্যান্য ডিপ্লোমাধারীদের ইন্টার্নশিপের জন্য দেওয়া হয় সম্মানী ভাতা। কিন্তু এই ভাতা থেকেও বঞ্চিত ইন্টার্ণ ডিপ্লোমা চিকিৎসকগণ। বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বি.এম এন্ড ডি.সি) থেকে তাদের দেওয়া হয় মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট প্র্যাকটিশনার হিসেবে বৈধ ভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদানের সনদ। তবে বিএমডিসি’র নির্ধারিত ওয়েববসাইটে ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের নাম না থাকায় বিভিন্ন সময় প্রশাসনিক ও আইনী জটিলতায় পরতে হয় তাদের।
তৃণমূলে স্বাস্থ্য সেবা নিশিবচত করা ও বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের গড়ার লক্ষে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা বিদ্যায় ৪ বৎসর ডিপ্লোমাধারী ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়ার দাবী উঠেছে। বিভিন্ন হাসপাতাল ও ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পদ শূন্য থাকলেও নেই তাদের নিয়োগ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের অধিকাংশ পদই শূন্য রয়েছে। তরুন ডিপ্লোমা চিকিৎসক ডাঃ মিথুন চক্রবর্তী অবৈতনিকভাবে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করছেন এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সুনামগঞ্জসহ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একই চিত্র লক্ষ করা যায়। পর্যাপ্ত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের সংকট রয়েছে। অনেক কেন্দ্রে জনস্বার্থে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছেন তরুণ বেকার ডিপ্লোমা ও ইন্টার্ণ ডিপ্লোমা চিকিৎসকগণ।
এ বিষয়ে ডাঃ মিথুন চক্রবর্তী জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগ না থাকায় ৫ বৎসর যাবৎ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে অত্র প্রতিষ্ঠানে জনস্বার্থে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে যাচ্ছি। এই অবস্থায় উক্ত পদে স্থায়ী ভাবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য সচিব সহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে প্রাণের আকুতি জানান তিনি।’
বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিডিএমএ) এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ মো. আব্দুর রউফ জানান, সংগঠনের পক্ষ থেকে বেকার ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের নিয়োগ বাস্থবায়নের জন্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মহা পরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য সচিব ও সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। বেকার ডিপ্লোমা চিকিৎসকগণ নিয়োগ বাস্তবায়ন কমিটির নির্দেশে কাজ করে যাচ্ছে।
দাবী বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট সকলের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন ডিপ্লোমা চিকিৎসক তথা উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারগণ।