আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
বিশ্বজুড়ে যখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ছিল, ঠিক তখনই মধ্য আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়ার সরকারকে সতর্ক করেছিলেন সেখানকার চিকিৎসকরা। এখন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অগণিত বলে দাবি করছে দেশটির মানবাধিকার সংগঠনগুলো। একই সুর তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও দেশের রাজনৈতিক বিরোধী দল। তবে সরকারের দাবি, এখনো করোনাভাইরাসে ২৫ জন আক্রান্ত ও আটজনের মৃত্যু হয়েছে।
দেশটির মহামারি বিশেষজ্ঞ আলভারো রামিরেজ বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এখন কমিউনিটি সংক্রমণের দিকে চলে যাচ্ছে। লাতিন আমেরিকান দেশগুলো করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের জন্য মানুষের চলাচলে কড়াকড়ি আরোপসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে নিকারাগুয়ায় কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। স্কুল-অফিস খোলা থাকার পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও নিয়মিত হচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণ মানুষের সমাগম রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
দেশটির হাসপাতাল কর্মীদের ভাষ্য, শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা এতোই বেশি যে হাসপাতাল ভরে গেছে। এরইমধ্যে অনেকের মৃত্যু হয়েছে।মৃতদের লাশ কবর দিতে স্বজনদের সম্মতি ছাড়াই গাড়ি দিয়ে নেয়া হচ্ছে।
দেশটির নাগরিক কনসালো মেনডোজা বলেন, আমার স্বামী আলবার্তো মেনডোজা জনপ্রিয় ফুটবলার ছিলেন। গত ২ মে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ৭৪ বছরের স্বামীর জ্বর এবং কাশিও ছিল। হাসপাতালে ১১ দিন থাকার পর তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর তিন ঘণ্টার মধ্যে তাকে দাফন করা হয়। তার এক মেয়ে বাবার লাশ দেখতে পেয়েছিল। স্বামী মারা গেলেন অথচ তাকে শেষ বিদায়ও বলতে পারিনি।
দেশের রাজনৈতিক বিরোধী দল ন্যাশনাল কোয়ালিশন এক বিবৃতিতে জানায়, মৃতদের কবর দেয়ার কোনো সন্ধান স্বজনরা জানতে পারছেন না। এছাড়া মৃত্যুর সংখ্যা লুকিয়ে রাখতে মৃতদের স্বজনদের হুমকিও দিচ্ছে পুলিশ।
এদিকে বেসরকারি সংস্থা সিটিজেন অবজারভেটরি জানায়, ১৩ মে পর্যন্ত করোনায় ২৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ২৭০ জন। কেউ মারা গেলে সরকার মিথ্যা বলছে। লাশ নিয়ে লুকোচুরি করছে। স্বজনদের ভুল তথ্য দিয়ে মৃত্যুর সনদ দেয়া হচ্ছে। কোনো সংবাদিক বা ফটোগ্রাফার না ঢুকতে সাদা পোশাকের পুলিশ হাসপাতালের প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে থাকে। এছাড়া রোগীর স্বজনরা কারো সঙ্গে কথা বলতে পারেন না।
নিকারাগুয়া মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, এখনো ৭৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়েছেন। দেশে মহামারি আকারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কথা জানান সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট গ্রেটেল সলিস।
ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডা. কার্লোস কোয়ান্ট বলেন, ঝুঁকির মধ্যে চিকিৎসকদের কাজ করতে হচ্ছে। এছাড়া রোগীরা হাসপাতালে আসলে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা নিরীক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। বেসরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাসের সেবা তো অনেক দূরে।