রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪
Menu
Menu

পোলিও টিকায় করোনা প্রতিরোধ, আশা দেখছেন বিজ্ঞানীরা

Facebook
Twitter

আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।

কোভিড-১৯ এর কার্যকরী ভ্যাকসিন তৈরিতে বিশ্বজুড়ে যখন রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে, তখন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কিছু বিশেষজ্ঞ পোলিওর একটি ভ্যাকসিন নিয়ে আশার বাণী শোনালেন। পোলিওর ভ্যাকসিনটি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাময়িক সুরক্ষা দেয়ায় এটি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিখ্যাত সায়েন্স ম্যাগাজিনে একদল বিশেষজ্ঞ করোনায় পোলিওর ভ্যাকসিনের সাময়িক সুরক্ষা নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। এতে তারা বলেছেন, পোলিও ভ্যাকসিনের মতো বিদ্যমান টিকাগুলো শিশুদের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয় এবং এগুলোর নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো সক্ষমতা রয়েছে। এ ব্যাপারে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

তারা বলছেন, ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন তুলনামূলক নিরাপদ, সস্তা, প্রয়োগ করা সহজ এবং ব্যাপক সহজলভ্য। বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশে বছরে একশ কোটি ডোজ উৎপাদন এবং ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞানীদের এই দলে রয়েছেন এইচআইভির আবিষ্কারক এক বিজ্ঞানী এবং মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) একজন ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ। বহুল আকাঙিক্ষত এই ভ্যাকসিন বিশ্ব থেকে পোলিওকে প্রায় নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে।

ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞরা মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলছেন, পোলিও ভাইরাসের দুর্বলতম সংস্করণ ব্যবহার করে ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে। ক্ষুদ্র এই ভ্যাকসিন শরীরে শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। পোলিও ভ্যাকসিন আধুনিক ভ্যাকসিনগুলোর চেয়ে ধীরগতির। এতে ভাইরাসের জিনগত উপাদান ব্যবহার করা হয়।

অত্যন্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং অন্যান্য অঞ্চলের বিজ্ঞানীরা অনবরত কাজ করে যাচ্ছেন। এফডিএর ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ কনস্ট্যান্টিন চুমাকোভ এবং ইউনিভার্সিটি অফ ম্যারিল্যান্ডের ইন্সটিটিউট অফ হিউম্যান ভাইরোলজির অধ্যাপক রবার্ট গ্যালো বলেছেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটি কাজ করবে কিনা তা জানতে অন্তত একটি পরীক্ষা চালানোই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

তারা বলেছেন, আমরা কোভিড-১৯ প্রতিরোধ বা প্রশমনে ওরাল পোলিও ভাইরাস ভ্যাকসিন ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছি। পোলিও ভাইরাস এবং করোনাভাইরাস পজিটিভ আরএনভাইরাস গোত্রের। সাধারণ সহজাত প্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্বারা এ ভাইরাসকে প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

টেক্সাস এ অ্যান্ড এম হেলথ সায়েন্স সেন্টারের অধ্যাপক জেফ্রি ডি সাইরিলো বলেছেন, এটিই বিশ্বের একমাত্র ভ্যাকসিন যা এখনই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

এই বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন হার্ড ইফেক্ট তৈরি করে। কোনও সংক্রামক ব্যাধিতে যখন কোনও জনগোষ্ঠীর ৭০ থেকে ৯০ শতাংশই পৌঁছায়, তখন হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়। এটি হতে পারে ওই সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত এবং সুস্থ হয়ে ওঠার অথবা ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে। তারা বলেছেন, করোনাভাইরাসের রোগীদের শরীরে পোলিও ভ্যাকসিন প্রয়োগে ঝুঁকির সম্ভাবনা একেবারে কম।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, আফ্রিকায় যখন কমিউনিটিগুলোর মধ্যে হামের টিকা দেয়া শুরু হয়, তখন এই রোগে শিশুদের মৃত্যুহার ৫০ শতাংশেরও বেশি কমে আসে। যা হামে মৃত্যুর ক্ষেত্রে সুরক্ষার প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি ছিল।

মার্কিন সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে ওরাল পোলিও ভ্যাকসিনের এখন লাইসেন্স নেই এবং সহজলভ্য নয়। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিনটি এখনও দেয়া হয়। শিশুরা ভ্যাকসিনটির ডোজ মুখে নেয়।

করোনাভাইরাসে ৪ লাখের বেশি মানুষ প্রাণ হারালেও এর কোনও ভ্যাকসিন কিংবা প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার হয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শতাধিক ভ্যাকসিন তৈরির প্রকল্প চালু রয়েছে। তবে ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে প্রায় এক ডজন কোম্পানি।

এর মধ্যে মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি মডার্না বৃহস্পতিবার করোনা ভ্যাকসিনের শেষ ধাপের পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছে। মার্কিন এই জায়ান্ট কোম্পানি আগামী মাসে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর দেহে ভ্যাকসিনটির চূড়ান্ত পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করবে বলে জানিয়েছে।

জনপ্রিয়