অনলাইন ডেস্ক।।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস সরাসরি আমাদের শ্বাসনালী ও ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। তাই সার্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি ফুসফুসের প্রতি সবারই বিশেষ যত্নশীল হতে হবে।
জীবনযাত্রায় সাধারণ কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমেই সেটা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে সাতটি পরামর্শ দিয়েছেন। চলুন সেগুলো জেনে নেয়া যাক-
ধুমপান ছাড়ুন: সবার আগে ধূমপান পরিহার করতে হবে। ধূমপান করলে নিকোটিন, টার, কার্বন মনোঅক্সাইডের মতো হাজারো রাসায়নিক প্রবেশ করে ফুসফুসকে বিষাক্ত করে তোলে। এসব রাসায়নিক জমার কারণে একসময় ফুসফুসের বাতাস গ্রহণের পথ ছোট হয়ে যায়। এর ফলে শ্বাসকষ্টসহ ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। তবে ধূমপান ছাড়লেই যে আপনি সুস্থ থাকবেন তা কিন্তু নয়, আপনাকে পরোক্ষ ধূমপানও এড়িয়ে চলতে হবে।
পানি: ফুসফুস সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। পানি ফুসফুসের ফিল্টার হিসেবে কাজ করে। এজন্য দিনে অন্তত ছয় থেকে আট গ্লাস পানি খেতে হবে।
কী খাবেন, কী খাবেন না?-
খাদ্যতালিকায় সবুজ শাক-সবজি, গাজর, টমেটো, লেবু, বিভিন্ন মৌসুমী ফল যেমন-আঙুর, আনারস, আমলকি, পেয়ারাসহ সামুদ্রিক মাছ রাখতে হবে। এসব খাবারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন, ওমেগা থ্রি ফ্রাটি অ্যাসিড ও মিনারেল। সব ধরনের চিনিযুক্ত কোমল পানীয়, চা বা কফি পরিহার করুন। এছাড়া শিশুর ফুসফুসের যত্নে তাকে অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
ব্যায়াম: সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে পাঁচ দিন আধা ঘণ্টা করে শরীরচর্চা করুন। এতে করে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়বে সেই সঙ্গে ওজনও বশে থাকবে। তবে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বেশি কার্যকর। এতে ফুসফুসসহ শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন প্রবেশ করে। এজন্য এই সময় বাড়িতে বসে ফুসফুসের ব্যায়াম করলে ভালো সুফল মিলবে। শিশুদেরকে যতটা সম্ভব খেলাধুলার প্রতি মনোযোগী করতে হবে।
ঘরে বসে যেভাবে ফুসফুসের ব্যায়াম করবেন-
এজন্য প্রথমে পিঠ সোজা করে বসতে হবে। এরপর নাক দিয়ে ধীরে ধীরে নিশ্বাস নিতে হবে যেন মনে হয় পেট পর্যন্ত বাতাস যাচ্ছে। এই বাতাস টানা ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এবার ধীরে ধীরে বাতাস মুখ দিয়ে ছাড়ুন। এই ব্যায়ামটি পরপর কয়েকবার করলে ফুসফুস ভালো থাকবে। এতে করে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে কয়েকগুণ। তবে যদি দম ধরে রাখার সময় কাশি বা ব্যথা অনুভব করেন তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বাতাস বিশুদ্ধ রাখুন: গবেষণায় দেখা গেছে, বাড়ির ভেতরের বাতাস অনেক সময় বাইরের বাতাসের চেয়েও বেশি দূষিত হয়। এতে করে ফুসফুস দূষিত হতে থাকে। এজন্য যতটা সম্ভব ঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। সকাল হলেই ঘরের দরজা-জানালা খুলে দিন যাতে পর্যাপ্ত আলো বাতাস ঘরে চলাচল করতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয় ঘরে এয়ার পিউরিফাইয়ার ব্যবহার করলে। তবে ঘরের বাতাস না হয় পরিষ্কার করলেন বাইরেরটা করবেন কীভাবে? সবচেয়ে ভালো হয় নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করা। সবার আগে নিজে পরিবেশ দূষণ করা থেকে বিরত থাকুন।
বিশ্রাম: ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো পর্যাপ্ত ঘুমানো। শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে ঘুমের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। এতে আপনার ফুসফুস বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার সুযোগ পাবে এবং নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতায় সুস্থ হয়ে উঠবে।
পরিচ্ছন্নতা: করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। এজন্য তারা নিয়মিত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। হাতের মাধ্যমে ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করে ফুসফুসকে নষ্ট করার চেষ্টা চালায়। এজন্য হাত পরিষ্কার রাখার বিকল্প নেই।
ফুসফুস বিষয়ে যা এড়িয়ে যাবেন না: যদি আপনার দীর্ঘদিন ধরে কাশি থাকে বা কায়িক পরিশ্রম করতে গেলে ক্লান্ত লাগে, দম বন্ধ করে রাখলে বুকে চাপ অনুভূত হয় কিংবা নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় সেক্ষেত্রে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
সূত্র-বিবিসি।