গোলাম কিবরিয়া, বরগুনা।।
বরগুনায় এক যুবককে নারী দিয়ে ফাঁদে ফেলে জিম্মি করে নিজেকে পুলিশের সদস্য পরিচয় দিয়ে চাঁদা গ্রহণের সময় মো. মিজানুর রহমান সুমন গোলদার (৪২) নামের কথিত সাংবাদিক ও তার প্রেমিকাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার (১৩ জুন) সকালে আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতার হওয়া এই কথিত সাংবাদিকের বাড়ি বামনা উপজেলার পশ্চিম সফিপুর গ্রামে। তিনি মরহুম মো. হিরু গোলদারের ছেলে, তার স্ত্রী বামনা বেগম ফায়জুন্নেসা মহিলা ডিগ্রি কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতির প্রভাষক। এ ঘটনায় চম্পা নামের তার প্রেমিকা ও লিমন নামের আরো একজনকেও গ্রেফতার করেছে বরগুনা থানা পুলিশ।
তবে জিম্মি হওয়া যুবক মামুন (২৬) কে উদ্ধার করা হয়েছে। মামুন পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের হরিণঘাটা এলাকার মো. তোফাজ্জল মাস্টারের ছেলে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ ঘটনায় জিম্মি হওয়া মামুনের মা কহিনুর বেগম বাদী হয়ে ওই তিনজনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
থানা সূত্রে জানা যায়, বরগুনার পৌর শহরের পিটিআই এলাকার চম্পা নামের সুমনের প্রেমিকার সাথে পাথরঘাটার হরিণঘাটার মামুনের ভার্চুয়াল সখ্যতা তৈরি হয়। তারই সূত্র ধরে শুক্রবার সকালে মামুনকে দেখা করার কথা বলে বরগুনায় ডেকে আনে চম্পা। মামুনকে নিয়ে সে ক্রোক এলাকার লিমনদের বাড়ির একটি কক্ষে আবদ্ধ করে রাখে। এসময় কথিত সাংবাদিক সুমন গোলদার ওই বাড়িতে গিয়ে মামুনকে পুলিশ পরিচয়ে মারধর করে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তায় দুই দফায় সুমনের বিকাশ একাউন্টে ১২ হাজার টাকা দেয় মামুন। এরপরও জিম্মিকারী সুমন গোলদার ও তার প্রেমিকা চম্পা আরো ২০ হাজার টাকা দাবি করেন।
বিষয়টি জানার পর মামুনের খালু জাকির হোসেন কালাম বরগুনা সদর থানা পুলিশকে ঘটনাটি অবহিত করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ডক্টরর্স কেয়ার ক্লিনিকের সামনে বিকাশ থেকে টাকা ক্যাশ আউটের সময় হাতেনাতে সুমনকে আটক করে। পরে অভিযান চালিয়ে পিটিআই সড়ক থেকে চম্পা ও ক্রোক এলাকা থেকে লিমনকে আটক করা হয়।
কথিত ওই সাংবাদিক সুমন গোলদারের বিষয়ে সাংবাদিক ওবায়দুল কবির আকন্দ দুলাল জানান, সুমন সাংবাদিক পরিচয়ে বিভিন্ন সময়ে বামনা এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছেন। কয়েক বছর আগে সুমন গোলদারের ইয়াবা সেবনে একটি ভিডিও ও চাঁদা দাবির একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
সে বিভিন্ন এলাকায় বাল্যবিয়ের নাম করে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কিছু দিন পূর্বে তিনি বরিশাল বিভাগীয় ডিআইজি সাহেবের সঙ্গে ছবি তুলে তার এই চাঁদাবাজি ও ইয়াবা ব্যবসার প্রসার ঘটায়।
তিনি আরো বলেন, সুমনের চাঁদাবাজির কারণে বামনার সাংবাদিকতা এখন কলুষিত। সে পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে চালায় চাঁদাবাজি। জনগণকে কর্মকর্তাদের ভয় দেখিয়ে এমনকি প্রেসক্লাবের নাম ভাঙিয়ে সে বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি করেছে এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। সম্প্রতি তার একটি চাঁদাবাজির ঘটনায় বামনা প্রেসক্লাবে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা উপযুক্ত প্রমাণসহ মামলা করতে গেলেও থানা তার বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করেননি। এভাবেই সে তার চাঁদাবাজির সার্গরাজ্য পরিচালনা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। আমরাও ছিলাম অসহায় কারণ পুলিশ প্রশাসন ও কিছু প্রভাবশালী নেতারা তাকে আগলে রাখত।
এ বিষয়ে বরগুনা থানার ওসি (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় মামুনের মা কহিনুর বেগম বাদি হয়ে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আটক ব্যক্তিদের আদালতের মাধ্যমে বরগুনা জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।