বিনোদন ডেস্ক।।
অসম্ভব রকমের ভালো ফলাফল করা মেয়েটির কথা ছিলো মুম্বাই বিশ্বাবিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে অণুজীববিদ্যা নিয়ে কাজ করার। কিন্তু যার নাচের তালে পুরো পৃথিবী দুলবে আর যার মোহনীয় অভিনয়ে সবার হৃদস্পন্দন বেড়ে যাবে তাকে তো রূপালি পর্দায় আসতেই হবে। আর এ কারণেই ১৯৮৪ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘অবোধ’।
পাঠক এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গেছেন কার কথা বলা হচ্ছে। বলছি বলিউডের ‘ধাক ধাক গার্ল’ খ্যাত অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিতের কথা। মাধুরীর পুরো নাম মাধুরী শংকর দীক্ষিত। ১৫ মে ১৯৬৭ সালে জন্ম নেয়া মাধুরী ছিলেন মহারাষ্ট্রের অভিবাসী।
মাধুরী অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘অবোধ’ মুক্তির পরে সবার প্রশংসা কুড়ালেও বক্স অফিসে ছবিটি ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। বরং এই ফ্লপের কারণেই পরপর আরো ছয়টা ছবিকে গুণতে হয় ‘লসের’ বোঝা। এরপরে বলিউড পাড়ায় শোনা গেলো আরেক কথা!
ছবির ফ্লপের কারণে মাধুরী অভিনয় শুরু করেছেন টিভি সিরিজে। তবে সেখানেও কপাল পোড়া গেলো তার। অভিনয় ভালো না হওয়ার কারণে নাকি সেই টিভি সিরিজগুলো প্রকাশই করা হয়নি। আর সেই সময়টা ছিলো তার প্রচণ্ড কষ্টের সময়।
এরপরেই হতাশা বাসা বাধতে শুরু করে মাধুরীর মনে। তিনি মনে করেন অভিনয় তার জন্য না। নিজের দেহাবয়ব তথাকথিত বলিউড সুন্দরীদের মতো না। আর এই খেলা এখানেই শেষ করে দেয়ার চিন্তা করেছিলেন অভিনেত্রী।
কিন্তু যে অভিনেত্রীর হাসি হাজার পুরুষের হৃদয় কাঁপাবে উনি আবার শেষ চেষ্টা না করে ছেড়ে দেয় কিভাবে?তাই ‘তেজাব’ সিনেমায় অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। অনিল কাপুরের বিপরীতে তার অসাধারণ অভিনয় এবং একই নিরেমায় ‘এক দো তিন’ গানে তার নাচ নিমিষেই নিয়ে গেলো খ্যাতির তুংগে। এরপর থেকেই তাকে ‘ধাক ধাক গার্ল’ নামে চিনতে শুরু করে সবাই।
শুরু হয় সাফল্যের পথ চলা। এরপরে আর আশাভংগ হয়নি মাধুরীর। ‘খলনায়ক’, হাম আপকে হ্যা কউন’, ‘দেবদাস’ এর মতো অসাধারণ সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি।
পরবর্তীতে বিখ্যাত ভারতীয় নাচের প্রতিযোগিতার রিয়েলিটি শোর বিচারকার্য থেকে শুরু করে সবকিছুতেই মাধুরী ছিলেন অনবদ্য। এর জন্যই তার ঝুলিতে আছে ১১টি অ্যাওয়ার্ড, ২৬টি নমিনেশন। ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে সবচেয়ে বেশি সম্মানী পাবার খেতাব পান তিনি। বিবিসির জরিপে ‘বেস্ট এক্ট্রেস’ হওয়া এবং পদ্মশ্রীর মতো সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব পান তিনি।
শুধু এখানেই শেষ নয়। মাধুরীর ভক্তদের তালিকা অন্যতম ছিলেন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হোসেন৷ জানা যায় মাধুরী-সালমান অভিনীত ‘হাম আপকে হ্যায় কোন’ ছবিটি তিনি ৬২ বার দেখেছিলেন ৷এরপরেই তিনি মাধুরীর একটি ছবিও আঁকেন।
ব্যক্তিগত জীবনেও জল ঘোলা কম হয়নি এ অভিনেত্রীর। ‘সাজন’, ‘খলনায়ক’ এর মত সুপারহিট ছবি করে মাধুরী-সঞ্জয় দত্ত কাছাকাছি এসে ছিলেন। গুঞ্জন উঠেছিল তারা প্রেমও করছেন। কিন্তু তাদের সেই প্রেমে ‘ভিলেন’ হয়ে দাঁড়ালেন মাধুরীর বাবা। তিনি এই সম্পর্ককে মেনে নিতে পরেননি তখন৷ পরে তাদের ব্রেক আপও হয়৷
তবে সঞ্জয়-মাধুরী বিচ্ছেদের দুঃখ ভুলতে বেশিদিন সময় লাগেনি৷ কেননা ‘রাম লক্ষ্মণ’, ‘তেজাব’, ‘বেটার’ মত সুপারহিট ছবি কাছাকাছি এনেছিলো অনিল কাপুর-মাধুরী দীক্ষিতকে৷
বিনোদ খান্নার সঙ্গে দয়াবান ছবির সেই লিপলক সিন দর্শকদের মধ্যে তীর্যক ভাবনার সঞ্চার ঘটিয়ে ছিল৷ কিন্তু পরে ঘনিষ্ঠ মহলে মাধুরী জানিয়েছিলেন এই দৃশ্যটি তার করা উচিত হয়নি ৷
তবে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১৯৯৯ সালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শ্রীরাম মাধব নিনিকে বিয়ে করেন তিনি। বর্তমানে এ অভিনেত্রী দুই সন্তানের মা।
আজ এই ‘গ্রেসফুল বাবলি গার্ল’ এর জন্মদিন। যার সৌন্দর্য্যে কোন উপমা নির্ভর নয়৷ তিনি নিজেই সৌন্দর্য্যের ঠিকানা৷