অনলাইন ডেস্ক।।
দিনাজপুরের সদর উপজেলায় সম্পত্তি ও বাজারের মার্কেট সন্তানের নামে লিখে না দেওয়ায় মোখলেছুর রহমান (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে একমাস ঘরে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তার দুই ছেলে, ভাই ও ভাতিজার বিরুদ্ধে।
বুধবার (১০ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টায় ঘরেবন্দি থাকা ওই ব্যক্তিকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে প্রতিবেশী কয়েকজন যুবক উদ্ধার করে থানা পুলিশের মাধ্যমে হাসপাতালে ভর্তি করায়।
নির্যাতিত মো. মোখলেছুর রহমান জেলার সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের রানীপুর গ্রামের বাসিন্দা।
মো. মোখলেছুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার দুই সন্তান নাহিদ হাসান ও জাহিদ হাসান তাদের দুই চাচার সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমার প্রায় ৮০ লাখ টাকার সম্পত্তি লিখে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমার স্থানীয় রানীপুর বাজারে একটি মার্কেট ও প্রায় আড়াই একর জমি আছে। কিন্তু আমার ছেলে নাহিদ ও জাহিদ এবং আমার বড় ভাই মমিনুল ইসলাম, মেজভাই মাহবুব ও তার ছেলে মাহফুজুর রহমান এক হয়ে আমার বাজারের মার্কেট ও আড়াই একর জমি তাদের নামে লিখে দিতে বহুদিন ধরেই চাপ দিয়ে আসছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মার্কেট ও জমি আমার সন্তানদের নামে লিখে না দেওয়ায় তারা আমাকে একমাস ঘরবন্দি করে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে। আমার আঙুলের নখ তুলে নিয়েছে। আমার পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দিয়ে আমার পা কেটে ফেলেছে। আমি আমার সম্পত্তি তাদের নামে লিখে না দেওয়ার কারণে আমাকে তারা গলায় দড়ি দিয়েও মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। আমাকে প্রায় বিষ এনে খাইয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে আমার দুই সন্তান।
নির্যাতিত মোখলেছুর রহমান আরও বলেন, ‘আমার দুই ছেলে তার বড় চাচা মমিুনল ইসলাম ও মেজ চাচা মাহবুব এবং সেনাবাহিনীতে চাকরি করে আমার ভাতিজা মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই কাজগুলো করছে। আমার ভাই এবং ভাতিজারাও আমাকে প্রচণ্ডভাবে নির্যাতন করে আসছে। আমার পক্ষে পাড়া-প্রতিবেশীরা কেউ কথা বলতে এগিয়ে এলে তাদেরকেও মারধর করার চেষ্টা করেন। ভাগ্যক্রমে আজকে আমার পাড়ত এক ভাতিজাসহ কয়েকজন মিলে আমাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। আমি প্রশাসনের কাছে একটাই দাবি জানাচ্ছি, আমি নির্যাতনের বিচার চাই। আমার সন্তান ও ভাই-ভাতিজার বিচার দাবি করছি।
সরেজমিন বুধবার বিকেলে কোতোয়ালী থানার অপেক্ষমান ঘরে গিয়ে দেখা যায়, মোখলেছুর রহমানের ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে নিচে।
মোখলেছুর রহমানের প্রতিবেশী ভাতিজা মো. আবেদ আলী মানিক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে তার দুই ছেলে ও ভাই-ভাতিজারা বাজারের মার্কেট ও সম্পত্তির লোভে মোখলেছুর চাচাকে ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করে আসছে। আজকেও নির্যাতন করার সময় আমরা বেশ কয়েকজন এগিয়ে যাই। আমরা এগিয়ে গেলে আমাদের ওপর তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ইট দিয়ে ঢিল মারতে শুরু করেন। আমাদের মধ্যেও কয়েকজনকে আঘাত করে রক্তাক্ত করেন। কিন্তু আজকে (বুধবার) মোখলেছুর চাচাকে আমরা সবাই মিলে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি।’
এ বিষয়ে কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বজলুর রশিদ বলেন, ‘এই ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য অবশ্যই দোষীদের চরম শাস্তির আওতায় আনা হবে। একজন জন্মদাতা পিতাকে যারা অমানুষিক নির্যাতন করতে পারেন তার আর যাইহোক প্রকৃত মানুষ হতে পারেন না। আমরা অভিযোগের ভিত্তিতেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেবো।’