শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ২০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০
জাকিরুল আহসান।।
বরিশাল বিভাগেও ছড়িয়ে পড়েছে মহামারী করোনা ভাইরাস। ইতোমধ্যে মারা গেছেন বেশ কয়েক জন করোনা আক্রান্ত রোগী। চিকিৎসক আক্রান্ত হচ্ছেন আশঙ্কাজনক হারে। এ পর্যন্ত চিকিৎসকসহ ৬২ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মারা গেছেন রাহাত আনোয়ার হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. আনোয়ার হোসেন। স্বনামধন্য এই চিকিৎসককে কেন রাজধানীতে চিকিৎসা নিতে যেতে হয়েছিল। কেনই বা তিনটি হাসপাতাল ঘুরে তাকে ৪র্থ হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। তাহলে বরিশালের হাসপাতাল করোনা চিকিৎসায় কতটা উপযুক্ত? সমসাময়িক এসব বিষয় নিয়ে রূপালী বার্তার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের অর্থোপেডিকস সার্জন ও ইনডোর ডক্টরস এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সুদীপ হালদার।
তিনি বলেন, ঝুঁকিতে আছেন চিকিৎসকসহ সাধারণ সব মানুষ। কারণ আমারা সবাই অসচেতন। তথ্য গোপন করে করোনা রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার পরীক্ষা করা হয়নি কিন্তু উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন কেউ কেউ। তাদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন ডাক্তার। আবার আক্রান্ত রোগী রাস্তায় বের হয়ে ঘুরছেন, এতে আক্রান্ত হচ্ছে পাশের লোকজন।
ডা. সুদীপ হালদার রূপালী বার্তাকে বলেন, এটা ছড়িয়ে পড়েছে, আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু কষ্টের বিষয় হচ্ছে যে আমরা রোগীদের কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছি না। সংকটের কথা যদি বলি, বলতে হবে করোনা চিকিৎসায় বরিশালে ভয়াবহ সংকট চলছে। চিকিৎসকদের করার কিছু নেই। কারণ চিকিৎসায় যা যা দরকার বলতে গেলে এখানে কিছুই নেই।
এই চিকিৎসক বলেন, ডা. আনোয়ার হোসেন বরিশালের একটা স্বনামধন্য বেসরকারি হাসপাতালের মালিক। তিনি কেন ঢাকায় গেলেন, কারণ তিনি জানতেন বরিশালে কিছু নেই, তাই তিনি চিকিৎসা নিতে সাহস পাননি। গেলেন ঢাকায়। সেখানে ২/৩ হাসপাতাল ঘুরে একটা হাসপাতালের ঠাঁই হলো। যতক্ষণ তিনি ঘুরলেন ততক্ষণে তার সঙ্গে যে অক্সিজেন ছিল তা শেষ হয়ে গেছে। তিনি যে বেডে ভর্তি হলেন কিছুক্ষণ আগেই সেই বেডে একজন রোগী মারা গিয়েছিলেন। এটাই বর্তমান বাস্তবতা। রাজধানীতে গিয়ে কি করবেন, বরিশালে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
চিকিৎসক সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২২৪ জনের জায়গায় মাত্র ৯৫ জন কর্মরত, ১০০০ বেডের সাথে করোনা ইউনিটের ১৫০ বেড। কিভাবে সম্ভব চিকিৎসা দেয়া? এত বড় বিভাগীয় শহর অথচ একজন ICU specialist নেই। এছাড়া অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধানদের অধিকাংশ পদই শূন্য। এছাড়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে ল্যাব টেকনোলজিষ্ট, নিরাপত্তার জন্য আনসার নিয়োগ এবং মেডিকেলের বাইরেও স্যাম্পল কালেকশনের ব্যবস্হা করা জরুরী।
তিনি বলেন, একটি Plasma separator নেই। সুতরাং বরিশালে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে প্লাজমা থেরাপি দেয়ার কোন সুযোগ নেই। ICU তে High flow nasal canula, venturi mask, rebreathing mask, mask with reservers, non rebreathing mask খুব জরুরী ভিত্তিতে দরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম এ বিভিন্ন শিল্পপতি ও উচ্চবিত্তরা এগুলো দান করেছেন। আমাদের বরিশালে অনেক ধনী ব্যক্তি রয়েছেন তারা কিন্তু ইচ্ছে করলে এগুলো দিতে পারেন।
তিনি রূপালী বার্তার মাধ্যমে আহবান জানিয়ে বলেন, দক্ষিণবঙ্গে জাতীয় সব নেতাদের বাস, অনেক চিকিৎসক নেতা আছেন, প্রশাসনের অনেক বড় ব্যক্তিবর্গ আছেন, বড় মাপের সাংবাদিকগণের পিতৃভূমি এই বরিশালে। আপনাদের স্বার্থে, আপনাদের পরিবার তথা আত্মীয় স্বজনের স্বার্থে, বাঁচার স্বার্থে, আমার মত আম জনতার স্বার্থে দক্ষিণ জনপদের শেষ আশ্রয়স্থল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটার দিকে একটু নজর দিন।
বর্তমানে পরিচালক ডা. মো বাকির হোসেন স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক এবং অনেক অপ্রতুলতা সত্ত্বেও দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন জানিয়ে ডা. সুদীপ বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত যুদ্ধ করতে চাই, আমরা সেবা দিতে চাই। কিন্তু আমরাঅসহায়। মননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের এই কষ্টের কথাগুলো পৌঁছান। নিশ্চই তিনি সমাধান করবেন।