আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষকে জটিল মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) করোনাভাইরাস ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয় নিয়ে একটি প্রতিবেদনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সংস্থাটি।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাস এমন এক সংকট তৈরি করেছে যা নজিরবিহীন। চারিদিকে শুধু মৃত্যু আর রোগের কথা। লকডাউনের কারণে কাজ হারিয়ে ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় দিশেহারা অসংখ্য মানুষ। এমন পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষকে জটিল মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যা মারাত্মক উদ্বেগের বিষয়।
সাম্প্রতিক ইতিহাসে বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মানুষ একইসঙ্গে এমন মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের মুখোমুখি হয়নি। জরুরিভিত্তিতে সরকারগুলো এ সংকটের বিষয়টি আমলে না নিলে আরো বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডেভোরা কেস্টেল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘অনিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ঘরবন্দী, ভয়। সবগুলো একসঙ্গে অথবা যে কোনো একটি কারণ মানসিক পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’
করোনাভাইরাস ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে কেস্টেল বলেন, করোনায় সৃষ্ট পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী মানসিক অসুস্থতার শিকার মানুষের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই বিষয়টিকে সামনে রেখে গুরুত্বসহ সরকারগুলোকে মোকাবিলা করতে হবে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি তৈরি বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের ওপর গবেষণা করে তৈরি করা হয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে, বন্ধু ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘরবন্দী থাকায় শিশু ও তরুণদের মনোজগতে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে। এতে স্বাস্থ্য কর্মীদের কথাও উঠে এসেছে, যারা প্রতিদিন চোখের সামনে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু দেখছেন।
এ ব্যাপারে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, শিশুরা উদ্বিগ্ন ও বিষাদগ্রস্থ হয়ে পড়ছে। এমন চিত্র পাওয়া গেছে বিভিন্ন দেশে। যা কোনো পৃথিবীর জন্য ভালো কোনো বার্তা নয়। বিশ্বব্যাপী আশঙ্কাজনক হারে পারিবারিক সহিংসতা বেড়ে গেছে। অনেক স্বাস্থ্য কর্মী বলেছেন, তাদের জরুরিভিত্তিতে মানসিক সমর্থন দরকার। আতঙ্ক, ভয়, দুঃস্বপ্ন তাদের পেয়ে বসেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শারীরিক বিচ্ছিন্নতা সাধারণ মানুষকে অবসাদগ্রস্থ করে তুলেছে। তারা সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে ভীত থাকেন সর্বক্ষণ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মৃত্যুভীতি এবং প্রিয়জনকে হারানোর শঙ্কা।
প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে, মহামারির কারণে লাখ লাখ মানুষ অর্থনৈতিক অস্থিরতার শিকার হতে শুরু করেছে। জীবিকা হারানোর ভয়ে তারা ভীত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মহামারি সংক্রান্ত ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ি।