শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০
মো. শাহজাহান কবীর।।
ইসলাম মহান আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহতায়ালা যেসব বস্তু পবিত্র ও কল্যাণকর তা হালাল এবং যেসব অপবিত্র ও অকল্যাণকর তা হারাম বা নিষিদ্ধ করেছেন। ইসলামে যেসব বস্তু হারাম, তার মধ্যে মাদকদ্রব্য অন্যতম। মাদক হলো নেশা উদ্রেককারী এমন বস্তু, যা মানুষের মস্তিষ্কের স্বাভাবিকতাকে নষ্ট করে দেয়। কোনো মুসলমানের মাদক গ্রহণ যেমন হারাম, অনুরূপ তা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিতরণ এবং ক্রয়-বিক্রয় করাও সম্পূর্ণরূপে হারাম। রাসূলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মাদক পান করবে, আল্লাহতায়ালা তার ৪০ দিনের ইবাদত কবুল করবেন না। যদি এ অবস্থায় মারা যায়, তাহলে সে হবে জাহান্নামি। যদি তওবা করে তাহলে আল্লাহপাক তার তওবা কবুল করবেন।’
মাদক আরবের মানুষের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী জড়িত হয়ে পড়েছিল। তাই হঠাৎ তা নিষিদ্ধ না করে পর্যায়ক্রমে হারাম করা হয়েছে। প্রথমে মাদকের অপকারিতা ও পাপ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা সুরা বাকারাহর ২১৯ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘হে নবী মুহাম্মদ (সা.), লোকেরা আপনাকে মাদক ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলুন, এত ভয়ের মাঝে রয়েছে মহাপাপ ও মানুষের জন্য সামান্য উপকারিতা থাকলেও এর মধ্যে পাপ ও ক্ষতিকর উপাদান অনেক বেশি রয়েছে।’
দ্বিতীয় পর্যায়ে নামাজের সময় মাদককে নিষিদ্ধ করে আল্লাহতায়ালা সুরা আন-নিসার ৪৩ আয়াতে এরশাদ করেন : ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকো তখন তোমরা নামাজের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও, যা কিছু তোমরা বলছো।’ সর্বশেষ পর্যায়ে আল্লাহতায়ালা সুরা আল-মায়িদার ৯০ আয়াতে মাদককে চিরতরে হারাম ঘোষণা করে এরশাদ করেন: ‘হে ইমানদারগণ! মাদক, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্যনির্ধারক তীর সমূহ ঘৃণ্য বস্তু। এগুলো শয়তানের কাজ। সুতরাং, তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’
পৃথিবীর কোনো ধর্মই মাদক ব্যবহারকে অনুমোদন করেনি। আর ইসলামের দৃষ্টিতে সব ধরনের মাদক দ্রব্যের ব্যবহার একটি ধর্মীয় ও সামাজিক অপরাধ। ইসলামী শরিয়তে মাদক গ্রহণ সম্পূর্ণ হারাম ও নিষিদ্ধ বলে ঘোষিত হয়েছে। মাদক গ্রহণের ফলে মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। যেমন মাদক গ্রহণের দরুন ফুসফুস ও মস্তকের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে থাকে। হৃৎস্পন্দন ও নাড়ির গতি বৃদ্ধি পায়, চোখ রক্তবর্ণ হয় এবং মুখ ও গলা শুকিয়ে আসে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকেজো হয়ে যায়। এতে হজম শক্তি বিনষ্ট হয়, খাদ্যস্পৃহা কমে যায়, মানবদেহে ক্রমাগত অপুষ্টি বাসা বাঁধতে থাকে।
স্থায়ী কফ, কাশি এবং যক্ষ্মা রোগের সৃষ্টি হয়। মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে মানুষের বিবেক-বুদ্ধি লোপ পায়; হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। সাধারণত দেখা যায়, মানুষ যতক্ষণ নেশাগ্রস্ত থাকে ততক্ষণ তার বিবেক-বুদ্ধি কোনো কাজই করতে পারে না। মাদক গ্রহণে ধন-সম্পদের অপব্যয় হয়। অপব্যয় মারাত্মক অপরাধ। ইসলামে সর্বপ্রকার অপব্যয় বর্জনীয়। আল্লাহতায়ালা অপব্যয়কারীকে শয়তানের ভাই বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আল্লাহতায়ালা সুরা আল-মায়িদার ৯১ আয়াতে এরশাদ করেন : ‘নিশ্চয়ই শয়তান মাদক ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায় এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে বিরত রাখতে চায়। তবুও কি তোমরা তা থেকে নিবৃত হবে না?’
আবু দাউদ শরিফে বর্ণিত, রাসুলে পাক (সা.) এরশাদ করেন: আল্লাহতায়ালা লানত দিয়েছেন মাদককে, তার পানকারীকে; যে পান করায় তাকে, বিক্রেতাকে, ক্রেতাকে, তৈরিকারীকে; যা দ্বারা তা তৈরি করা হয় তাকে, বহনকারীকে; যার কাছে তা বহন করা হয় তাকে।
ড. মো. শাহজাহান কবীর: চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা