গণমাধ্যম ডেস্ক।।
দেশের মিডিয়ার সামনে দেখা দিয়েছে এক অশনিসংকেত। করোনাকালের অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত প্রায় সব মিডিয়া হাউস। সংকট উত্তরণে সহায়তার কোনো উদ্যোগ নেই। এর মধ্যেই অযাচিতভাবে ব্যাংকের বিজ্ঞাপন বন্ধের ঘোষণা এসেছে। এমনিতেই তেমন একটা নেই সরকারি বিজ্ঞাপন, প্রায় বন্ধের উপক্রম বেসরকারি ব্যবসা-বাণিজ্যের বিজ্ঞাপনও। সারা দুনিয়ায় ওষুধশিল্পের বিজ্ঞাপন থাকলেও নেই বাংলাদেশে। বারবার অনুরোধ করেও পাওয়া যাচ্ছে না সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর জমে থাকা বকেয়া বিলগুলো।
অস্তিত্বের এ লড়াইয়ের মধ্যেই সমানতালে খড়্গ চলছে গণমাধ্যমের ওপর। কারণে অকারণে মামলা, আটক, হয়রানি করা হচ্ছে সাংবাদিকদের। বিরোধী দলবিহীন দেশে যৌক্তিক কথা বললেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেওয়া হচ্ছে। কথায় কথায় আটক করা হচ্ছে সাংবাদিকদের। চলছে নানান উপায়ে হয়রানি। সব মিলিয়ে মিডিয়ার জন্য পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে পড়ছে। অসহায় হয়ে পড়েছেন সাংবাদিকরা। টিকতে না পেরে ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়েছে বেশকিছু গণমাধ্যম। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক, সম্পাদক, সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সাংবাদিকতার শিক্ষকসমাজ। তারা সবাই এ অবস্থার দ্রুত উত্তরণ চান।
মিডিয়াকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, বিশ্বের সঙ্গে আমাদের দেশেও করোনার আঘাত পড়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছেই। স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, সেনাবাহিনী, পুলিশসহ গণমাধ্যমকর্মীরাও কাজ করছেন। জীবন ও জীবিকা সচল রাখার জন্য সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেসব দেশবাসীকে জানাতে ফ্রন্টলাইনের অন্যতম কাজ করছে মিডিয়া। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার তিন শতাধিক সংবাদকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারাও গেছেন অনেকে। সংবাদকর্মীরা ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন।
তিনি বলেন, সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মূল আয় বিজ্ঞাপন। হোক সেটা সরকারি কিংবা বেসরকারি খাতের। করোনার মন্দার কারণে বিজ্ঞাপনের প্রবাহ কমে গেছে। পাশাপাশি যেসব বকেয়া বিল রয়েছে তার প্রাপ্তিও এখন অনিশ্চিত। সে কারণে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া আর্থিক সংকটে পড়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে চলমান রাখায় যেমন সংকট তৈরি হচ্ছে, তেমন কর্মীদেরও সংকট তৈরি হচ্ছে। অনেক পত্রিকায় কর্মী ছাঁটাই করা হচ্ছে। বেতন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অনেকটি বন্ধ হয়ে গেছে। সংকটকালে গণমাধ্যমকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। এ মুহূর্তে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। কীভাবে মিডিয়াকে টিকিয়ে রাখা যায় সে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এখানে মিডিয়া মালিক, সাংবাদিক, কর্মচারী যারা আছেন তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একে অন্যের পাশে দাঁড়াতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আগে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ সরকার করোনার শুরু থেকে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা জাতিকে জানিয়েছে মিডিয়া। মিডিয়া যদি না থাকে বা দায়িত্ব পালন করতে না পারে তাহলে রাষ্ট্র বলুন, সরকার বলুন, আমাদের সমাজ বলুন কেউই জয়ী হতে পারব না। মিডিয়ার গুরুত্ব বিবেচনা করে বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে, সাহস দিয়ে টিকিয়ে রাখতে হবে। যেসব বিজ্ঞাপনের বিল বকেয়া রয়েছে, তার ছাড় দেওয়া হলে পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া যে সংকটে পড়েছে তা কিছুটা হলেও উপকৃত হবে। টিকিয়ে থাকতে পারবে।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার কাম্য নয়। সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। আবার সাংবাদিকতার স্বাধীনতা মানেই স্বেচ্ছাচারিতা নয়, যা খুশি লিখে দেব তা নয়। দুই দিকেই একটা সীমা থাকবে। সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের যেমন বিরোধিতা করি, সেটা যার পক্ষ থেকেই আসুক না কেন। আবার সাংবাদিকতার বস্তুনিষ্ঠতা ত্যাগ করে দায়িত্বজ্ঞানহীন সংবাদ প্রকাশ, ব্যক্তিকে আঘাত করে, সমাজে শান্তি বিঘিত হতে পারে এমনটাও করা উচিত নয়।
সাংবাদিকদের হয়রানি ও গ্রেফতারের সমালোচনা করে এই সাংবাদিক নেতা বলেন, যখন তখন যাকে তাকে গ্রেফতার হয়রানি কাম্য নয়। ডিজিটাল আইন যখন হয় তখন আমরা এর প্রতিবাদ করেছিলাম। সে সময় বলা হয়েছিল, মামলা হলেই সাংবাদিকদের গ্রেফতার করা হবে না। কোনো সাংবাদিকের নামে মামলা হলে সেটা আগে শীর্ষ মহল অর্থাৎ আইজিপি পর্যায়ে অনুমতি নিয়েই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমরা এখনো মনে করি এ নির্দেশনাটি ফলো করা প্রয়োজন আছে। কোনো সাংবাদিক যদি একটু বাড়াবাড়ি করেও থাকেন, তিনি কিন্তু অপরাধী চক্র নন। যদি কেউ অপরাধ করেন, অবশ্যই বিচার করা যাবে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ধরে নিয়ে এসে যা করা হচ্ছে বা অন্য সাংবাদিকদের মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালনে ভীতি সৃষ্টি করছে- এটা কাম্য নয়। ভীতি ও ভয়ের মধ্য দিয়ে বস্তুনিষ্ঠ ও সাহসী সাংবাদিকতা হয় না। কেউ যদি আইনের বরখেলাপ করেন, তাকে গ্রেফতারের আগে অনুমতি নিতে হবে। তাহলে তৃণমূলে যে বাড়াবাড়ি চলছে তা কমে যাবে। ব্যাংকসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন বন্ধের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ব্যাংকের মালিক যারা আছেন, তারা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ মুহূর্তে পত্রিকা ও টেলিভিশনে কোনো বিজ্ঞাপন দেবেন না। বিজ্ঞাপন দেওয়া না দেওয়া তাদের ব্যাপার। কিন্তু এ মুহূর্তে তাদের এ সিদ্ধান্তটা ঠিক নয়। ব্যাংক একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। গ্রাহককে যে সেবা দেবেন তা তো জানাতে হবে। জানাতে হলে অবশ্যই বিজ্ঞাপন দিতে হবে।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, যখন করোনা সংকটে জনগণের সেবায় সবাই নিয়োজিত, গণমাধ্যমও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে; এ মুহূর্তে মিডিয়ার ওপর এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা অত্যন্ত দুঃখজনক।
প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক-বিএবির বিজ্ঞাপন বন্ধের সমালোচনা করে মাহফুজ আনাম বলেন, যে সংগঠনটি এ ধরনের বিবৃতি দিয়েছে, তাদের এ বক্তব্য শুনে আমি স্তম্ভিত। প্রতিটি ব্যাংক তার নিজস্ব প্রয়োজনে বিজ্ঞাপন দেবে কি দেবে না, তা তারা নিজেই নির্ধারণ করবে। সেখানে এ সংগঠনের বাধা দেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। আমরা মনে করি, এ ধরনের সিদ্ধান্ত মিডিয়াকে হেনস্তা করবে। মিডিয়ার স্বার্থ ক্ষুণ করবে। মিডিয়ার সঙ্গে ব্যাংকের যে সম্পর্ক রয়েছে, তা নষ্ট হবে। মনে রাখতে হবে, মিডিয়ার যেমন ব্যাংকের প্রয়োজন, তেমন ব্যাংকেরও মিডিয়া প্রয়োজন। অবশ্যই বিএবির এ সিদ্ধান্ত নেতিবাচক। এতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকতে বাধাগ্রস্ত হবে। আমরা খুব জোরালো দাবি করব, বিএবি কালক্ষেপণ না করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবে।
ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, সরকার যখন সব সেক্টরকে প্রণোদনার মাধ্যমে বেঁচে থাকতে সাহায্য করছে, সেখানে আমরা সংবাদপত্রশিল্প কিছুই পাইনি। এমনকি আমাদের ন্যায্য পাওনা, বহু বছর ধরে বকেয়া বিল জমা পড়ে আছে। তারা যদি এ মুহূর্তে সে বিল পরিশোধ করত, তাহলে আমাদের অনেক সাহায্য হতো। এ নিয়ে আমরা তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমাদের আশ্বস্তও করেছিলেন। কিন্তু আজ অবধি কোনো ফল পাইনি। সরকার যখন অন্যান্য শিল্পকে প্রণোদনা দিচ্ছে, সেখানে আমরাও তো প্রণোদনার যোগ্য, জনসেবামূলক খাত হিসেবে। এ ক্ষেত্রে প্রণোদনা তো পাচ্ছিই না, আমাদের ন্যায্য পাওনা যদি সরকার আমাদের দিত, তাহলে এ শিল্পে অনেক সহায়তা হতো। দুর্দিনে বেঁচে থাকার সহায়তা হতো।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম বলেন, এ ব্যাপারেও আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। আমরা সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে প্রথম থেকেই ডিজিটাল আইনের ঘোরতর বিরোধিতা করে এসেছি। এ আইন প্রণয়নকালে আমরা সংসদীয় কমিটির ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তার পরও আমাদের কথার তোয়াক্কা না করেই এ আইন পাস হয়েছে। পাস হওয়ার সময়ও আইনমন্ত্রী আমাদের বারবার নিশ্চিত করেছেন, এটা প্রয়োগের ক্ষেত্রে শুধু সাইবার ক্রাইমকে প্রতিহত করার জন্য প্রযোজ্য হবে। মতপ্রকাশে বিশেষ করে মিডিয়ার স্বাধীনতায় কোনোভাবেই ব্যবহার হবে না। আজকে আড়াই বছরের মাথায় আমরা দেখছি, এ আইন মূলত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধেই ব্যবহার হচ্ছে। করোনাভাইরাসের সময় অন্য সবকিছুই যখন স্থবির অবস্থা, এ সময়ে ডিজিটাল অ্যাক্ট আরও দ্রুতবেগে প্রয়োগ হচ্ছে। কেউ কিছু বললেই ডিজিটাল আইনে মামলা হয় এবং সঙ্গেই সঙ্গেই তাকে গ্রেফতার হয়। ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিলে এমনকি ওই স্ট্যাটাসে লাইক দিলেও এখন গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, দেশে এখন একটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি চলছে। ডিজিটাল অ্যাক্টের যদি আমরা প্রয়োগ দেখি, দেখা যাবে বড় অংশই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমরা মনে করি, করোনাভাইরাসের এই সময় সরকারের সঙ্গে জনগণের একটা নিবিড় সম্পর্ক থাকা উচিত। সেখানে সঠিক তথ্য প্রচারই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে যারা প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া, তাদের কাছে জনগণ সঠিক তথ্যও প্রত্যাশা করে। এভাবে যদি ডিজিটাল অ্যাক্ট প্রয়োগ হয়, তাহলে ফেক নিউজ, সোশ্যাল মিডিয়া তথা ফেসবুকে বিভ্রান্তিকর তথ্য, মিথ্যা তথ্য প্রকাশ পাবে। জনগণকে তার সঠিক তথ্য পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে।
মাহফুজ আনাম আরও বলেন, আজ অনেক মিডিয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু ক্রমেই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতি এমনিতেই চাপের মুখে। এ কারণেই মূলত অনেক গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করব, তারা অন্য সেক্টর চালু রাখার জন্য যে ধরনের উদ্যোগী ভূমিকা নিচ্ছেন, ঠিক তেমন মিডিয়ার ব্যাপারেও উদ্যোগ নেবেন। কারণ, এখানে অনেক মানুষের রুটি-রুজির বিষয় আছে। সেখানেও যেন সরকার সুদৃষ্টি দেন- সে প্রত্যাশাই করি।
নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-নোয়াব সভাপতি ও সমকালের প্রকাশক এ কে আজাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের পত্রিকা ও টেলিভিশনগুলো ভোগান্তিতে পড়েছে। মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিজ্ঞাপন নেই বললেই চলে। সরকারি বিজ্ঞাপন যেটুকু হয়, তাও অত্যন্ত কম। সময়মতো সরকারি বিজ্ঞাপন বিলও পাওয়া যাচ্ছে না। যেখানে পত্রিকাগুলো সরকারের কাছে ১৫০ থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে, সেখানে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরকে মাত্র ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সমকাল প্রকাশক এবং হা-মীম গ্রুপের এই কর্ণধার আরও বলেন, দেশের টেলিভিশন ও পত্রিকাগুলো এখন রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। এরপর করোনা মহামারী চলাকালে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস-বিএবি বিজ্ঞাপন বন্ধে যে বিবৃতি দিয়েছে, তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো ব্যাংকের বিজ্ঞাপন প্রদানের ক্ষেত্রে বিএবি হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এটা তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়নি। কারণ বিএবির কিছু নিয়ম-কানুন মেনেই চলা উচিত। আশা করছি বিএবি সংশোধন করে দ্রুত একটি বিজ্ঞাপন দেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, মহামারী ও দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে জরুরি সঠিক তথ্যপ্রবাহ। তাই সমাজের স্বার্থে, গণমানুষের স্বার্থেই গণমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। স্বাধীন গণমাধ্যম ও সংবেদনশীল সরকার থাকলে মহামারী নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ সময়ে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে গণমাধ্যমকে অস্তিত্ব সংকটে ফেলা কোনোভাবেই উচিত নয়। গতকাল তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার, প্রশাসনের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান করে গণমাধ্যম। করোনাভাইরাস মোকাবিলার অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। পৃথিবীর অন্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। অন্য দেশের এ পরিস্থিতিও আন্তর্জাতিক নিউজ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গণমাধ্যম দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরছে। এ সময়ে বিজ্ঞাপন বন্ধের ঘোষণা দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব সংকটে ফেলা মোটেই উচিত হবে না। সংবাদকর্মীরা প্রথম সারির যোদ্ধা। অন্যদের নানারকম প্রণোদনা, সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। অথচ এ খাতকে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে ঝুঁকির মুখে ফেলা হচ্ছে। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অসংখ্য সংবাদকর্মীর জীবন-জীবিকা জড়িয়ে রয়েছে। নোবেল বিজয়ী জোসেফ স্টিগলিৎজ বলেছেন, স্বাধীন গণমাধ্যম ও সংবেদনশীল সরকার থাকলে মহামারী নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ কথার সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত। সাংবাদিক হয়রানির বিষয়ে তিনি বলেন, দেশে আইন থাকে অন্যায় রোধ করার জন্য। গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধের জন্য নয়। কোনো স্বাধীনতাই নিরঙ্কুশ নয়। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের নামে সাংবাদিক হয়রানি করলে স্বাধীন গণমাধ্যমের পথে বাধার সৃষ্টি হয়। এজন্য ভুক্তভোগী দেশের জনগণই হবে।
সূত্র-বাংলাদেশ প্রতিদিন