রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Menu
Menu

‘মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আমার নামটি যেন আসে’

Facebook
Twitter

গোলাম কিবরিয়া, বরগুনা।।
বরগুনার আমতলী উপজেলার উত্তর টিয়াখালী গ্রামের আজিজ (৮০) নামের এক বৃদ্ধ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও এখন পর্যন্ত তার নাম লেখাতে পারেননি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায়। টিয়াখালী গ্রামের নুর মোহাম্মদ হাওলাদারের ছেলে আজিজ হাওলাদার (৮০) যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সাধীন হওয়ায় দেশের জন্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে ছিলেন।

কিন্তু তিনি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৯ বছর পর থেকে এখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের কার্ড তো দুরে থাক তালিকায়ও তার নাম লেখাতে পারেননি। একাধিকবার স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ সংসদ সদস্যের কাছে মুক্তিযুদ্ধের এপ্লিকেশন ফরম জমা দিয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকা আসেনি। ঝালমুড়ি বিক্রি করে ক্যান্সারের পড়ে থাকা স্ত্রীকে নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে এই বৃদ্ধ। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেঁদে কেঁদে বলেছেন মৃত্যুর আগে হলেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আমার নামটি যেন আসে।

স্থানীয় শাহজাহান তালুকদার (৭০), ফূলগাজী (৭৬), মোতাহার তালুকদার (৮৫), আজাহার তালুকদার (৭১) ও আজিজ প্যাদা (৭৫) বলেন, আমাদের চোঁখে আঃ আজিজ একজন সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা, তিনি গরিব ছিলেন বিধায় তার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় ওঠেনি।একাদিকবার আজিজ হাওলাদারের নাম নেওয়া হয়েছে কিন্তু সে কোন টাকা খরচ করতে পারেননি তাই মনে হয় মুক্তিযোদ্ধার খাতায় তার নাম উঠেনি।

তারা আরও বলেন, আজিজ হাওলাদার দেশের জন্যে বিভিন্ন সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রন করেছিলেন। একাদিকবার যুদ্ধে অংশগ্রহন করেও তিনি মুক্তিযোদ্ধার কোন কার্ড পাননি।

একই এলাকার শিক্ষক মোঃ ফিরোজ (৪০) বলেন, আমার জন্মের পর থেকেই আমি শুনে আসছি, আঃ আজিজ ছিলেন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তার কাছ থেকে অনেক কিছুই আমি শিখেছি এবং জানতে পেরেছি। কিভাবে যুদ্ধে সে অংশগ্রহণ করেছিলেন, কোন কোন ক্যাম্পে তিনি ছিলেন। তিনি নিঃস্বার্থ ও নিরলসভাবে দেশের জন্যে যুদ্ধ করেছিলেন। গরিব থাকার কারনে তার নাম আজ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাই।

তিনি আরও বলেন, আজিজ হাওলাদার ও তার পরিবার বর্তমানে মানবেতর জীবন- যাপন করছেন। পরিবারে তার একমাত্র মেয়ে ও তার স্ত্রী রয়েছে। বর্তমানে তার স্ত্রী ক্যান্সার রোগে ভুগছেন।

আগে ঝালমুড়ি বিক্রি করে তার সংসার চালাতো। বর্তমানে নোভেল করোনা ভাইরাসের কারনে তাও এখন বন্ধ। এক কথায় মরার উপরে খরার ঘাঁ।

এ বিষয়ে আঃ আজিজ হাওলাদার বলেন, আমি দেশের জন্যে যুদ্ধ করেছি কোন কিছু পাওয়ার আশায় নয়। যুদ্ধ করেছিলাম দেশ স্বাধীন করার জন্যে। বরগুনার বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া হাইস্কুল মাঠের ক্যাম্পে কমান্ডার হাতেম আলী মিয়ার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলাম। এরপরে কমান্ডার বজলুর রশিদের নেতৃত্বে চান্দখালী হাইস্কুল মাঠের ক্যাম্পে অনেকদিন যুদ্ধ করি। পরে পর্যায়ক্রমে অনেক ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অংশগ্রহন করি।

আমি শেখ মুজিবরের আদর্শকে বুকে লালন করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রন করেছিলাম। যেদিন শুনি আমার নেতা শেখ মুজিবর রহমান মৃত্যুবরন করেন সেদিন থেকে এখন পর্যন্ত তার জন্যে একটি করে রোজা রাখি।

তিনি আরও বলেন, আমার কোন চাওয়া/পাওয়া নেই কিন্তু যারা কোন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেননি এবং তখন তারা দেশেও ছিলো না কিন্তু তারা টাকা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম লিখে এখন মুক্তিযোদ্ধা সেজেছে। আমি এদের বিরুদ্ধে নিন্দা জানাই।

জনপ্রিয়