অনলাইন ডেস্ক।।
‘ঘূর্ণিঝড় ও করোনাভাইরাস মোকাবিলা: যেভাবে আমরা মহামারি চলাকালীন লক্ষ লক্ষ লোককে সরিয়ে নিয়েছি’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অভিযোজন সংক্রান্ত গ্লোবাল সেন্টারের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার প্যাট্রিক ভেরকুইজেনের সঙ্গে যৌথভাবে লেখা তার নিবন্ধটি বুধবার (০৩ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত হয়। নিবন্ধে শেখ হাসিনা লিখেছেন, কোভিড-১৯ মহামারিতে ব্যাপক জনসাধারণের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কার মধ্যেই সুপার সাইক্লোন আম্পান আঘাত হানে। কীভাবে দ্রুত ও সাফল্যের সঙ্গে বাংলাদেশ দু’ লক্ষাধিক লোককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছিল; নিবন্ধে সেই অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশ পরস্পরের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারে।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, গত মে মাসে ভারত মহাসাগরে যখন ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সৃষ্টি হলো, তখন দেরি করার মতো সময় ছিল না। বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি মাথায় রেখে তৈরি হয়নি। তাই এই ঘূর্ণিঝড়ের ভয়ানক ছোবলের চেয়েও ভীতিকর ভাইরাস কোভিড-১৯-এর ভয়াবহতার কবল থেকে বাঁচিয়ে ২৪ লাখ মানুষকে সরানোর বিষয়টি একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। বিপুল সংখ্যক মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া সবসময়ই বড় চ্যালেঞ্জ। ঘরবাড়ি অরক্ষিত রেখে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চায় না। এবার সেই চ্যালেঞ্জ আরও প্রকট হয়ে উঠল। মানুষজন করোনাভাইরাসের প্রকোপের ভয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাইছিল না। তাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের নিশ্চিত করতে হয়েছিল যে বাড়ি ছাড়ার ফলে তাদের সংক্রমণ বাড়বে না।
নিবন্ধে শেখ হাসিনা লিখেছেন, মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে বাংলাদেশ প্রায় সাড়ে ১০ হাজার নতুন আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করে ফেলে। আগে এ সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ১৭১। কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতেই এই বাড়তি উদ্যোগ। উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগ প্রস্তুতির কাজে থাকা ৭০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবীকে সংগঠিত করা হয়। বিতরণ করা হয় মাস্ক, পানি, সাবান ও স্যানিটাইজার।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, করোনা মহামারির চরম সংকটজনক অবস্থায় আম্পানের মতো ঘূর্ণিঝড়ের আসাটা জলবায়ু ও স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রাকৃতিক আন্তসম্পর্কের বিষয়টিকে একেবারে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ ভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র পাঁচ মিটার উঁচুতে। এখানে অবকাঠামোর পুনর্নির্মাণ এক বিশাল কাজের ব্যাপার। এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের পাকে পড়ে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। দিন দিন ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বাড়ছে, ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় জলাভূমি এবং চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ফলে ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। এ ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে ৪১৫ কিলোমিটার সড়ক বিলীন হয়েছে, ভেঙেছে ২০০ সেতু, লক্ষাধিক বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি এবং মাছের ক্ষেত্র নষ্ট হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ১৫০ কিলোমিটারের বেশি উপকূল রক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শেখ হাসিনা তার নিবন্ধে বলেছেন, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ জলবায়ু অর্থ কাঠামো গঠন করে। জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ, যারা এভাবে দীর্ঘকালীন এবং বহুপক্ষীয় প্রচেষ্টায় অর্থায়ন করেছে। কোভিড-১৯ বিশ্বজুড়ে সরকারি অর্থায়নের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু আমরা মনে করি, দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক কাঠামো এবং জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা এসব দেশের জন্য বিপদ কাটাতে সহায়তা করবে। স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং জলবায়ু আন্তসম্পর্কিত বিষয়। আর এ জন্যই আমাদের বদ্বীপ পরিকল্পনাতেও ভূমি ও পানি ব্যবস্থাপনার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য, মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য আরও জলবায়ু সহনশীল পরিবেশ সৃষ্টি।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ বছর স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে যুগপৎভাবে লড়াই করা দেশ সম্ভবত বাংলাদেশ একাই নয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘এই সহযোগিতার ফলে আমরা একে অন্যের সাফল্য থেকে শিখতে ও সহায়তা করতে পারব।’