শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০
রূপালী বার্তা।।
কবিতা কালের সুদীর্ঘ পথ চলায় স্বতন্ত্র ও নিভৃতচারী এক নিবেদিত প্রান তিনি। নিত্য কর্ম ও ভাবনালােক জুড়ে শুধুই তাঁর কবিতা আর কবিতা। ফেসবুক, টুইটার, লিংকড-ইনের সমস্ত স্টেটাসই লিমেরিক দিয়ে শুরু করেন তিনি। দেশ বিদেশের বিভিন্ন নিউজ ওয়েব পোর্টালে তাঁর কবিতা হরহামেশাই প্রকাশিত হচ্ছে। ২০২১ সালে সাহিত্যে কলকাতার “বাংল এক্সপ্রেস” পদকও পান তিনি। রুপালী বার্তার নিয়মিত লেখক। স্টার মেকারে একজন টেলেন্ট হিসাবে শৌখিন তারকা গায়কও তিনি। সরকারি ও বেসরকারি চাকুরীর পাঠ চুকিয়ে লিখালিখি করতে নিরিবিলিতে বাস করছেন ঢাকার উত্তরখানের নিজ বাসভবন শাওনাজ ভিলায়। বলছিলাম কবি এ কে সরকার শাওনের কথা। ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নবীনগরের গোপালপুর সরকার বাড়িতে ১৯৬৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী এক সম্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণকারী এই কবির পিতার নাম মোঃ আবদুল গনি সরকার, মাতা সালেহা গনি সরকার। তবে কবির শৈশব কৈশর কেটেছে ঝালকাঠির কাপড়িয়া পট্টিতে।
তাঁর কবিতায় রোমান্টিক ভাবধারার আধিক্য পরিলক্ষিত হয় বলে প্রেম পিয়াসীরা তাঁকে রোমান্টিক কবি ও সীমাহীন ভালোবাসার কবি বলে থাকেন! “কথা-কাব্য” কাব্যগ্রন্থের “উদাসীন পথিকের মনের ব্যথা” কবিতায় লিখেছেন,
“সাঝের মায়ায় আলো ছায়ায়
তাঁকেই স্মরণ করি;
মনের মাঝে বসত যাহার,
অষ্ট-প্রহর ধরি।”
জনপ্রিয় কবিতা “আমার সজনী সেন” এ তিনি বিশ্বের মহান প্রেমিক প্রেমিকাদের তুলে ধরে নিজ প্রেয়সীকে লিখেছেন,
“সুন্দরের রানী ক্লিওপেট্রা তুমি
ট্রয় নগরীর হেলেন।
রবী ঠাকুরের লাবন্য তুমি,
তুমি আমার সজনী সেন!”
পরিশুদ্ধ ও পরিশীলিত ভাবনায় প্রতিশ্রুতিশীল নিউজ ওয়েবপোর্টাল “রূপালী বার্তা’র পাঠকদের জন্য কবির এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন রূপালী বার্তার নির্বাহী সম্পাদক মোঃ সাইফউদ্দিন মিলন।
রূপালী বার্তাঃ আসসালামু ওয়ালাইকুম। আপনি কেমন আছেন?
এ কে সরকার শাওনঃ ওয়ালাইকুম সালাম। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি ভালো আছি! আশা করি রূপালী বার্তার আপনারা সবাই ভালো আছেন।
রূপালী বার্তাঃ আপনার লিখালিখির শুরুটা ঠিক কখন, কেমন করে একটু জানতে চাই।
এ কে সরকার শাওনঃ শুরুটা নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল (ঝালকাঠির উদ্বোধন হাইস্কুল ) থেকেই। তখন শুধু ছড়া এবং লিমেরিক লিখতাম।
রূপালী বার্তাঃ সেই প্রথম দিকের কোন একটা ছড়া বা কবিতার চার লাইন যদি শোনাতেন।
এ কে সরকার শাওনঃ ডায়েরিগুলো হারিয়ে গেছে। কয়েকটা মনে আছে। একটি বাবা মা’কে নিয়ে। অন্যটি বন্ধুদের নিয়ে দু’টো শোনাই।
“বাবার আদেশ মায়ের নির্দেশ
সুসন্তান মানে যথাযথ!
সবার উপরে বাবা-মা
কথাটি মনে গাথি সতত!”
“বন্ধু সবুজ চির অবুঝ,
ইকবাল সৌভাগ্যবান!
আমি নাকি ক্ষমতাবান;
কবে পাবো তার প্রমান!”
রূপালী বার্তাঃ দারুণ। আপনার এই সময়ের একটি কবিতার চারটি লাইন শুনতে চাই…
এ কে সরকার শাওনঃ চারটি নয় দু’টি কবিতার আটটি লাইন শোনাবো। প্রথমটি “আপন-ছায়া” কাব্যের “বাবার ছবি” কবিতার।
“আমার বাবা আমার বিশ্ব
বাবা ছাড়া আমি নিঃস্ব!
গুনে-মানে ধ্যানে জ্ঞানে
বাবা গুরু আমি শিষ্য!”
অন্যটি মা’কে নিয়ে শিকড়-শিখর কবিতার “শিকড়-শিখর” কবিতার চারটি লাইন,…
“মিঠেকড়া মা আমার
গুনি অতি প্রত্যুৎপন্নমতি!
মিষ্টভাষী সরলা বিদুষী
বিধি সৃজিছেন অল্প অতি!”
রূপালী বার্তাঃ চমৎকার! আপনার কাব্যগ্রন্থ কয়টি?
এ কে সরকার শাওনঃ প্রকাশিত কাবগ্রন্থ তিনটি। কথা-কাব্য, নীরব কথপোকথন ও আপন ছায়া। সবগুলো রকমারি ডট কমে পাওয়া যাচ্ছে। https://www.rokomari.com/book/author/70977/a-k-sorkar-shaon
রূপালী বার্তাঃ অপ্রকাশিত কাব্য ও অন্যান্য লিখার কথা বলুন।
এ কে সরকার শাওনঃ অপ্রকাশিত কাব্য ৯টি। এছাড়া গল্পগ্রন্থ “মেক-আপ বক্স”ও অপ্রকাশিত।
রূপালী বার্তাঃ ইংরেজি কবিতাও তো লিখেন দেখি মাঝে মাঝে।
এ কে সরকার শাওনঃ হ্যাঁ, মাঝে মাঝে লিখি বৈ কি। ইংরেজি কাব্যগ্রন্থের নাম “Songs of Insane”. অল পোয়েট্রি ডট কমে বেশ কিছু ইংরেজি কবিতা রয়েছে আমার।
রূপালী বার্তাঃ একটি ইংরেজি কবিতার কয়েকটি লাইন বলুন দয়াকরে…
এ কে সরকার শাওনঃ ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এক বাঙ্গালী ললনা আমাকে ব্রিটেনে যাবার আহবান করলে তাঁর উত্তরে আমি লিখি আমার প্রথম ইংরেজি কবিতা “Priority. সেই কবিতা থেকে কয়েকটি লাইন বলছি…
I am a simple man
Somebody says fool,
But I keep cool;
Imparting love full.
I also like to roam
All over the world.
First of all motherland
Then the wonderland.
রূপালী বার্তাঃ লিখালিখির একটি স্মরণীয় ঘটনা বলুন।
এ কে সরকার শাওনঃ ১৯৮৪ সাল। পত্রিকায় লিখা আহ্বানে সাড়া দিয়ে ৪টি জেলায় লিখা পাঠাই। ময়মনসিংহের ফুলপুর, খুলনার ফুলতলা, সিলেটের সুবিদ বাজার ও কুমিল্লা সদরে। কুমিল্লা সদরের ম্যাগাজিনটির নাম ছিলো “রক্তাক্ত সংলাপ”। সম্পাদকের নাম ভুলে গেছি। কবিতা প্রকাশ হবার পর জেনেছি আমাদের নবীনগরের লাউর ফতেহপুরে গ্রামের বাড়ী। সেই “রক্তাক্ত সংলাপ” এ আমার কবিতার নামও ছিলো “রক্তাক্ত সংলাপ”। ম্যাগাজিনে আমার কবিতার আগের লিখাটি ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক ডক্টর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর। পরের লেখকের নাম স্বপ্না রায়। তিনি বাংলা ব্যাকরণের কিংবদন্তি লেখক হরলাল রায়ের কন্যা এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষক। তার পরের লেখক ছিলো তৎকালীন কুমিল্লার অজিত গুহ কলেজের অধ্যক্ষের। এতোগুলা গুনী মানুষের মাঝে আমার লিখা দেখে আমি অভিভূত হয়েছিলাম। ব্যাপক অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম। সম্পাদক সাহেব বই, ম্যাগাজিন ও চকলেট উপহার দিয়েছিলেন।
রূপালী বার্তাঃ আপনার লিখালিখির অনুপ্রেরণা কে কে?কেউ কি নিরুৎসাহিত করেছে কখনো?
এ কে সরকার শাওনঃ অনুপ্রেরণা দানে বিয়ের আগে ছিলো বন্ধু-বান্ধবীগণ। বিয়ের পরে স্ত্রী নাজমা আশেকীন শাওন, আমার তিন রাজকন্য, বন্ধু-বান্ধবীগণ ও পাঠকগণ। মেঝো রাজকন্যা কামরুন সালেহীন তৃনা আমার দু’টি প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের (কথা-কাব্য ও আপন ছায়া) প্রচ্ছদ এঁকে আমাকে ব্যাপক উৎসাহ যুগিয়েছে। নিরুৎসাহিত করা কাছের মানুষদের নাম প্রকাশ না করাই সমীচীন। ১৯৮৪ সালে দেশের চার প্রান্ত থেকে ৪টি ম্যাগাজিন ডাকযোগে পেয়ে আমি যখন আবেগে আপ্লুত ঠিক তখনই কাছের কেউ একজন যা বললেন তা এখনো কবিতা লিখতে গেলেই কানে বাজে । “ওহ লিখাপড়া বাদ দিয়ে কবিতা লিখছো! কবি হলে না খেয়ে মরা লাগবে।” তাঁর সেই কথার জবাব দিয়ে আমি লিখেছিলাম “সাহিত্য ও কবিতার কথা” প্রবন্ধ।
রূপালী বার্তাঃ আপনি তো গান, নাটক, টেলিভিশন প্রোগ্রামও লিখেছেন। বিষয়গুলো সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।
এ কে সরকার শাওনঃ ১৯৮৮ সালে আমার লিখা গান “জীবনে যখন তুমি এলে না” প্রথম বিটিভিতে গায় শিল্পী টিটু শিহাব। গানটি সুর করেছিলো বদরুল আলম বকুল। বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারে অনির্বান ও দুর্বারে বেশ কিছু গান প্রচারিত হয়েছে। ১৯৯৮ সালে সংগীতার এ্যালবাম “কার পথ চেয়ে” তে আমার লিখা কয়েকটি গান ছিলো।
উল্লেখযোগ্য নাটক ও টেলিফিল্ম “সুটিং”, “আদর্শ লিপি”, “পরিবর্তন”! এগুলোতে দেশের সেরা অভিনেতা অভিনেত্রীগণ অভিনয় করেছে। এ ছাড়া স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে “সোনামনি” নামে শিশুদের একটি অনুষ্ঠান পরিচালনা এবং বিজনেস বাংলাদেশ নামে একটি অনুষ্ঠান প্রোযোজনা করেছি। আমার লিখা টেলিফিল্ম “সুটিং” এবং জি সিরিজের “অগ্নিবীণা” থেকে রিলিজ হওয়া টেলিফিল্ম “গিট্টু মিয়ার গিট্টু”র সম্পাদনা করেছি আমি। সংগীত শিল্পী শান্তর “তুমি সেই প্রিয়জন” গানটির সম্পাদনা করেছি আমি যার ইউটিউবে ভিউ ৩ মিলিয়ন।
রূপালী বার্তাঃ দারুণ! কোন বিষয়টি আপনাকে কবিতা লিখতে উদ্বুদ্ধ করে?
এ কে সরকার শাওনঃ শুধু সুনাম, সম্মান ও বাহবা পাবার জন্য লিখি না। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতাও লিখার কারণ। “চেয়ার ও চোর”, “প্রলয়-প্রলাপ” ও “বাঁশীওয়ালা” কাব্যগ্রন্থগুলি সমাজ ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে লেখা।
রূপালী বার্তাঃ “চেয়ার ও চোর” থেকে চারটি লাইন বলেন।
এ কে সরকার শাওনঃ “হারামখোর” কবিতা থেকে চারটি লাইন বলছি…
“কাকে বলি ভালো
বেশীরভাগই চোর!
কিছু আছে নির্জীব
বাকী হারামখোর!”
রূপালী বার্তাঃ ষড়ঋতু নিয়ে তো আপনার বেশ কিছু কবিতা আছে। শরতের একটি কবিতা থেকে কয়েকটি লাইন শোনান প্লীজ।
এ কে সরকার শাওনঃ শুধু শরৎকাল ও কাশফুল নিয়েই আমার ৮/১০টি জনপ্রিয় কবিতা রয়েছে। “শারদ সন্ধ্যায়” দুই বাংলায় বেশ জনপ্রিয় কবিতা। “শারদ সন্ধ্যায়” কবিতার ৮টি লাইন শোনাচ্ছি…
অসীম নীলে মাতাল অনিলে
মেঘের তুলো ভাসে!
সবুজ দিগন্ত বন বনান্ত
প্রান খুলে হাসে!
সাদা নীলে দারুণ মিলে
দূর আকাশের গায়!
নীলে সবুজে দারুণ সাজে
দিকচক্রবাল রেখায়!
রূপালী বার্তাঃ খুবই সুন্দর। মানুষজন তো কাশফুলের ছবির সাথে আপনার কবিতার লাইনগুলো জুড়ে দেয় হরহামেশাই!
এ কে সরকার শাওনঃ ওগুলো “কাশকন্যা” ও ‘কাশবনের রাজকন্যা”, শারদ সন্ধ্যায় ও অন্যান্য শারদ ও হৈমন্তী কবিতার। অনেকেই কপি পেষ্ট করেছে। আমার কবিতা চুরি করে কেউ কেউ রাতারাতি কবি বনে গিয়ে সেরা কবিও হয়ে গেছে! অনেক কবিতাই আছে ও রকম জনপ্রিয় যেমন, চশমা, নারী তুমি অনন্যা, আমার বেলকনিতে, কাঁঠাল, হলুদ ছোঁয়া, আমি নেইকো একেলা, পরে কথা হবে, বাবার ছবি ইত্যাদি। রুগ্ন ওয়েব পোর্টালগুলি না যাচাই বাছাই করে আমার কবিতা অন্যদের নামে ছাপাচ্ছে।
রূপালী বার্তাঃ দেশ ও সমাজে কবিতার প্রভাব কতটুকু?
এ কে সরকার শাওনঃ অনেক ও ব্যাপক। সাহিত্য ও কবিতার কথা প্রবন্ধে বিস্তারিত লিখেছিলাম। https://www.banglaexpress.in/2021/10/25/62932.html
আমেরিকার ৩৫তম রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডি কবিতাকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক বলে অভিহিত করে বলেছেন, “When power leads man toward arrogance, poetry reminds him of his limitations. When power narrows the area of man’s concern, poetry reminds him of the richness and diversity of existence. When power corrupts, poetry cleanses.”
ফ্রান্সিস বেকন কবিকে ধীমান বলেছেন। তিনি বলেছেন, “History makes a man wise.” এরিস্টটল কবিতাকে ইতিহাসের উপরে স্থান দিয়ে বলেছেন, ” Poetry is finer and more philosophical than history; for poetry expresses the universal, and history only the particular.”
কবিতা যদি একটি আন্দোলন হয়। সেই আন্দোলনে সবচেয়ে জোরালো বক্তব্য রেখে গিয়েছেন কিংবদন্তী কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। জিহবায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্য শব্দ কে কবিতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কেও কবিতা বলে কবিতাকে মুকুট পরিয়েছেন। কবিতা যে আদর্শ সমাজের জন্য কত গুরুত্বর্পূণ তা বোঝাতে তিনি বলেছেন,
“যে কবিতা শুনতে জানে না
সে ঝড়রে র্আতনাদ শুনবে ।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে দিগন্তের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে।”
রূপালী বার্তাঃ ছোটবেলার কিছু স্মৃতি বলেন।
এ কে সরকার শাওনঃ বাবার সোনালী ব্যন্কে চাকরির সুবাদে ছোট বেলাটা কেটেছে ঝালকাঠিতে। ছোট্ট ছিমছাম স্বপ্নের শহর ঝালকাঠি। ১০ কাপড়িয়া পট্টির ছোট্ট বাসায় আমার বাবা-মা ও আমরা ছয় ভাই বোনের অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে । এখন না-কি সেখানে ১০ তলা বিল্ডিং হয়েছে। শিক্ষার হাতেখড়ি উদ্বোধন হাইস্কুলের হেড ওয়াহেদ স্যার, আকরাম স্যার, চান স্যার, মুকুন্দ স্যারের সহ কতো স্মৃতি এখনো মনকে নাড়া দেয়। সুগন্ধা নদী ও বাসন্ডা নদীতে নিত্য সাঁতার কাটা, ধানসিঁড়ি নদীতে খাল কাটা, ডাকঘাটায় গোছল করা, বন্ধু ইকবাল, সবুজ, মনকা, খোকন খলিফা, রূপম তালুকদার, বাবুল-দুলাল, বাবলু-বাচ্চু, নান্না, শিবু এদের নিয়ে হাজার স্মৃতি রয়েছে। রয়েছে স্টেডিয়ামে খেলার স্মৃতি। প্রয়াত ফুটবলার নজরুল ইসলাম খলিফা স্বপন কাকুর ফুটবল শিক্ষাদানের জ্বাজ্জল্যমান স্মৃতি আজো মনে গেথে আছে।
রূপালী বার্তাঃ আপনার পারিবারিক জীবন সম্পর্কে যদি একটু বলেন।
এ কে সরকার শাওনঃ পারিবারিভাবে ষাটের দশকের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এ কে এম জহিরুল হকের (চলচ্চিত্রে আশেক জহির) দ্বিতীয়া কন্যা নাজমা আশেকীন শাওনের সাথে বিয়ে হয় ১৯৯১ সালে। স্ত্রী ও তিন রাজকন্যা নিয়ে আমার চাঁদের হাট ছিলো শাওনাজ ভিলা। এখন বাড়ীটা ফাঁকা। ছোট রাজকন্যা রাশিয়ান সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে মস্কোয় অবস্থিত রাশিয়ার টপ মেডিকেল রিসার্চ ইউনিভার্সিটি “সেচনভ” এ ডাক্তারী পড়ছে। মেঝো রাজকন্যা ভারত সরকারের পূর্ণ স্কলারশিপ নিয়ে ভারতের ভুবনেশ্বরে কলিঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এরোস্পেস ইন্জিনিয়ারিং পড়ছে। বড় রাজকন্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করার পর চাকুরী করতো যমুনা টেলিভিশনে নিউজ এডিটর হিসাবে। এখন সেও ভারত সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে “ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে” এ মাষ্টার্সের প্রথম অংশ শেষ করছে মুম্বাইয়ের টাটা ইন্সটিটিউট অব সোস্যাল সাইন্সে। দ্বিতীয় অংশ করছে অষ্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটাকে বলে ডুয়েল স্কলারশিপ। এখন বাড়ীতে আমাদের সাথী ফুল-পাখী, লতা-পাতা আর কবিতা। ঠিক আমার “আমি নইকো একেলা” কবিতার মত!
রূপালী বার্তাঃ আপনার শিক্ষা জীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
এ কে সরকার শাওনঃ শিক্ষা জীবনের শুরু ঝালকাঠির উদ্ধোধন হাই স্কুলে ১৯৭৫ সালে সরাসরি ক্লাস ফোরে। বাবার বদলি জনিত কারনে ১৯৮০ সালের মে মাসে চলে যাই নিজ জেলার নবীনগরের গোপালপুরে। ১৯৮৩ সালে নবীনগর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি, ১৯৮৫ সালে নবীনগর সরকারী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করি। ১৯৯১ সালে বিমান বাহিনীর এ্যারোনটিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং ইনসটিটিউট (বর্তমানে এটিআই) থেকে প্রথম শ্রেণিতে এসোসিয়েট ইন্জিনিয়ারিং পাশ করি। ১৯৯৬ সাল থেকে ১০ বছর ঐ ইনসটিটিউটের প্রশিক্ষক ছিলাম। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্য স্নাতক, ২০০৭ সালে এজাম্পশন বিশ্ববিদ্যালয়, থাইল্যান্ড থেকে ডিপ্লোমা ইন ইনফরমেশন টেকনোলজিতে স্নাতক লাভ করি। এ ছাড়া আমি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও আইনশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করি। আমার রয়েছে বিশ্ব ব্যান্কের অধীনে আই এফ সি কর্তৃক প্রদেয় “ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্টে” এর উপর ৩ সনদ।
রূপালী বার্তাঃ নতুন প্রজন্মের কবিদের উদ্দেশে আপনার উপদেশ কি?
এ কে সরকার শাওনঃ আমি নিজেই চির শিক্ষানবিশ কবি। উপদেশ দেবার প্রশ্নই আসে না। অনুরোধ করবো বেশী বেশী পড়তে তারপর লিখতে। অন্য কারো কবিতা বা লিখা যেন কেউ কপি পেষ্ট না করে। আমার লিখা কপি দেখতে দেখতে আমি মর্মাহত ও ক্লান্ত।
রূপালী বার্তাঃ আপনার কবিতা ও লিখায় “জগলু” ও “সজনী” নামটি থাকে কেন?
এ কে সরকার শাওনঃ দেশের শীর্ষস্থানীয় নিউজ ওয়েব পোর্টালসহ (যেমন জাগোনিউজ২৪) নামীদামী ওয়েব পোর্টালে একটি কবিতা ছাপালে দুই দিন পর কমপক্ষে ১০/১৫ জায়গায় কপি হয়। বেশীরভাগ জায়গায় আমার নামও থাকে না। তাই কবিতার মাঝে কোথাও “জগলু” নামটি ঢুকাই কবিতটি যে আমার তা প্রমানের জন্য। সজনী তো আমার প্রেয়সী। আমার রোমান্টিক কবিতার অনুপ্রেরণা। তবে সে কি অলীক না বাস্তবিক সে প্রশ্নের উত্তর আমি দিবো না।
রূপালী বার্তাঃ আপনার জীবনে নাটোর অধ্যায় সম্পর্কে কিছু বলুন।
এ কে সরকার শাওনঃ আমি কর্ম জীবনের এক পর্যায়ে তিনি নাটোরে প্রান কোম্পানির অন্যতম শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত ছিলাম। মূলত সেখান থেকেই আমার কবিতার স্ফুরণ হয়। তুমি আমার সজনী সেন, পরে কথা হবে, আমি নইকো একেলা, রাজসিক নাটোর, দাগ রয়ে যায়, চশমা, বিরাগ বচনের মত পাঠক প্রিয় কবিতা উপহার দেই নাটের থেকেই। আমার আর যেসব কবিতাগুলো বিশেষভাবে উল্লেখ না করলেই নয় তা হলো, নারী তুমি অনন্য, শিকড় শিখর, কাঁঠাল, ধন্যি মেয়ে, বাবার ছবি, শারদ সন্ধ্যায়, অভিসারী আশ্বিন, হেমন্তের গান ইত্যাদি।
রূপালী বার্তাঃ ও আচ্ছা! আপনার সাহিত্যকর্ম নিয়ে ভবিষ্যতে কোন বিশেষ পরিকল্পনা আছে নাকি?
এ কে সরকার শাওনঃ দলবাজির কষাঘাতে সমাজের সবখান থেকে নির্দলীয় সুধী সম্প্রদায় আজ নির্বাসিত। এ অবস্থার উন্নতি না হলে আশা ও পরিকল্পনায় গুড়ে বালি। তবে সাহিত্য নিয়ে আমার অনেক বড় স্বপ্ন আছে।
রূপালী বার্তাঃ ইদানিং দেখা যাচ্ছে কিছু প্রতিষ্ঠান কবিদেরকে পুরষ্কৃত করার নামে বানিজ্যিক সুবিধা ভােগ করছে, আপনি বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?
এ কে সরকার শাওনঃ এগুলো অধিকাংশ ধান্ধাবাজী। “মাদার তেরেসা” পদক দেওয়ার এখতিয়ার কি বাংলাদেশের কারো আছে? এই ধান্ধাবাজীকে আমরা বলি লোহার ব্যবসা। মানুষ ধান্ধাবাজী করে মূলত দু’টি কারণে। একটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আর অন্যটি সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি জন্য। আমি বিত্তশালী না হলেও আল্লার রহমতে বেশ চলে যাচ্ছে। সম্মানের কোন কমতি নাই আমার । ধান্দাবাজী আমি চরম অপছন্দ করি। আমি এক আল্লাহতে বিশ্বাসী। পরকালে পাই পাই হিসাব দিতে হবে সেটা মাথায় থাকে সব সময়।
রূপালী বার্তাঃ বাহ! বাংলদেশ সম্মিলিত কবি পরিষদ সম্পর্কে কিছু বলেন।
এ কে সরকার শাওনঃ আমি ওটার একদমই নিস্ক্রিয় সভাপতি। অন্যরা কাজ করছে দিবস ভিত্তিক।
রূপালী বার্তাঃ পাঠকদের উদ্দেশে কিছু বলুন।
এ কে সরকার শাওনঃ পাঠকগণ সম্মানিত। তাঁদের মর্জি মেজাজ রাজা বাদশার মেজাজ। কখন কোন কবিতা তাঁদের হৃদয়ে দাগ কাটে বলা মুস্কিল। অনুরোধ করবো সাহিত্য পড়তে, অনুধাবন করতে, সাহিত্যের রস আস্বাদন করতে ও সাহিত্য ও কবি-সাহিত্যিকদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে।
রূপালী বার্তাঃ “রূপালী বার্তা” এর পক্ষ থেকে আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ।
এ কে সরকার শাওনঃ আপনাকে এবং রূপালী বার্তার প্রধান উপদেষ্টা: প্রফেসর ডা. সৈয়দ জাহিদ হোসেন, প্রকাশক ডাঃ কাজী তৌকিয়া রহমান (রূপা), সম্পাদক মোঃ জিয়াউল আহসান খান (সিপু), ব্যবস্থাপনা সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক জাকিরুল আহসানসহ পুরো রূপালী বার্তা পরিবারবর্গকে এবং পাঠকবৃন্দকে অনেক ধন্যবাদ ও অফুরান কৃতজ্ঞতা। আমি রূপালী বার্তার উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি।