শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৪
Menu
Menu

লকডাউনের মধ্যেই ভারতে রাজ্যে রাজ্যে শ্রমিকদের অধিকার হরণ

Facebook
Twitter

আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।

ভারতে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জন্য যখন দেশ জুড়ে লকডাউন চলছে। তারই মধ্যে দেশে একের পর এক রাজ্য শিল্পমালিকদের স্বার্থে শ্রম আইনে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। ভারতের সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশের সরকার তিন বছরের জন্য কার্যত সব শ্রম আইনই মুলতুবি করে দিয়েছে। ফলে সেখানে ইচ্ছেমতো শ্রমিক ছাঁটাই করা যাবে, এমন কী ন্যূনতম পারিশ্রমিক দিতেও মালিকরা বাধ্য থাকবেন না। খবর বিবিসির

বিরোধী দল এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। গত চার-পাঁচ দিনে ভারতে মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, পাঞ্জাব, রাজস্থান বা উড়িশ্যার মতো একের পর এক রাজ্য তাদের শ্রম আইনে পরিবর্তন এনে শিল্প মালিকদের নানা সুবিধা করে দিয়েছে।

যখন খুশি ছাঁটাই, যা খুশি পারিশ্রমিক: উত্তরপ্রদেশে লকডাউনের মধ্যেও সরকার একটি অর্ডিন্যান্স এনেছে, যা সে রাজ্যে শ্রমিকদের প্রায় সব অধিকারই তিন বছরের জন্য স্থগিত করে দিয়েছে। এর ফলে সেখানে ন্যূনতম পারিশ্রমিক আইনও বলবৎ হবে না, ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে কর্মীরা আপিল করতে পারবেন না। এমনকি কলকারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টিরও কোনো দায় থাকবে না শিল্পমালিকদের।

রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী স্বামীপ্রসাদ মৌর্য বলছেন, যারা শ্রমিকদের জন্য কুমিরের কান্না কাঁদছেন, তাদের বোধহয় এটা জানা নেই যে, রাজ্যের শ্রমিকদের কল্যাণে নতুন লগ্নি টানতেই আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি। যাতে আরো বেশি সংখ্যায় মানুষ রোজগার পান, বন্ধ হয়ে যাওয়া পুরনো কলকারখানা আবার খোলে এবং উত্তরপ্রদেশের মানুষকে রুটিরুজির সন্ধানে অন্য রাজ্যে যেতে না হয়, সেজন্যই আমরা এই অর্ডিন্যান্স এনেছি।

শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ: বিজেপিশাসিত মধ্যপ্রদেশেও আগামী তিন বছর মালিকদের ইচ্ছামতো’ নিয়োগ ও ছাঁটাইয়ের স্বাধীনতা দিয়ে বলা হয়েছে, শ্রম দপ্তর এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না। ত্রিপুরাতে সরকার দৈনিক সর্বোচ্চ কাজের মেয়াদ ১২ ঘণ্টা করারও প্রস্তাব এনেছে। দেশের সবগুলো ট্রেড ইউনিয়ন এসব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। এমনকি আরএসএস’র শ্রমিক শাখা ‘ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ’ (বিএমএস) পর্যন্ত হুঁশিয়ারি দিয়েছে এই ধরনের ‘জঙ্গলরাজ’ মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।

কংগ্রেস নেতা রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করেছেন। উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা অনুরাধা মিশ্র বলেছেন, ‘হ্যাঁ, শিল্প অবশ্যই পুনঃস্থাপিত করতে হবে। কিন্তু সেটা কিছুতেই গরিব মজদুরদের রক্তের বিনিময়ে হতে পারে না!’

স্বাগত জানাচ্ছে শিল্প মহল: দেশের শীর্ষ বণিক সংগঠন সিআইআইয়ের সাবেক চেয়ার প্রদীপ ভার্গবের কথায়, ‘আমার ব্যবসায় ভাঁটা পড়লে আমি সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে অর্ডার কমিয়ে দিতে পারি। ব্যবসায় সুদিন এলে ব্যাংক থেকে বাড়তি ঋণ চাইতে পারি।’ এমন কোনো আইন নেই যা বলে ব্যবসায় ভালো-মন্দ যা-ই হোক তোমাকে একই অর্ডার দিয়ে যেতে হবে, একই পরিমাণ ঋণ নিয়ে যেতে হবে। শুধু এই নিয়োগের ক্ষেত্রে এসে বলা হচ্ছে ব্যবসার অবস্থা যা-ই হোক, তোমার কর্মী কমানো চলবে না। তো এই বিচিত্র আইন তো পালটানোই দরকার, তাই না? শিল্প আগে বাঁচলে তবে না শ্রমিকদের বাঁচার প্রশ্ন আসে!’

জনপ্রিয়