আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
করোনা ভাইরাসের কারণে ভেনেজুয়েলায় চলছে লকডাউন। এরপর থেকেই দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সান ক্রিস্টোবালের কসাইখানায় লাইন ধরে দাঁড়িয়েছে চরম দরিদ্র মানুষ। যাতে তারা শুধুমাত্র বিনামূল্যে প্রোটিন সংগ্রহ করতে পারে। আর তা হচ্ছে গবাদি পশুর রক্ত।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০ বছর বয়সী মেকানিক আলেয়ার রোমেরো সপ্তাহে দুই বার কসাইখানায় যান। তিনি স্থানীয় একটি গ্যারেজে চাকরি করতেন। সম্প্রতি চাকরিটি হারিয়েছেন। ভেনেজুয়েলায় নিকোলাস মাদুরো সরকারের ত্রাণ খুব ধীরে মানুষের কাছে পৌঁছায়।
কফির একটি কাপে করে কসাইখানা থেকে দেওয়া রক্ত হাতে আলেয়ার রোমেরো বলেন, ‘যে খাবার পাওয়া যাচ্ছে তাই আমি সংগ্রহ করে রাখছি।’
সান ক্রিস্টোবাল কসাইখানাতে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন লোক গবাদিপশুর রক্ত নিতে আসেন। অথচ মহামারির আগে এসব রক্ত ফেলে দেওয়া হতো।
কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়া বাউদিলিও চাকন নামের এক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, ‘আমরা ক্ষুধার্ত। আমার চার ভাই ও ১০ বছরের এক ছেলে রয়েছে। আমরা সবাই রক্তের ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছি।’
গরুর রক্ত ভেনেজুয়েলার ঐতিহ্যবাহী ‘পিচন’ সুপের একটি উপাদান। কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট সংকটে প্রতিবেশী কলম্বিয়াতেও আরো মানুষ এটির প্রতি ঝুঁকছেন।
ভেনেজুয়েলানরা নিজেদের মাংসাশী জাতি হিসেবে গর্ব করেন। কিন্তু বর্তমানে মাংসের বদলে রক্ত খেতে হচ্ছে বলে অনেকেই খুশি নন। যদিও সেখানে এক কেজি গরুর মাংসের দাম ন্যূনতম মজুরির দ্বিগুণ।
ভেনিজুয়েলার অর্থনীতি এখন ক্ষুধার প্রতীক। ছয় বছর ধরে দেশটির অর্থনীতি ‘হাইপারইনফ্লেশনারি ইমপ্লোসিয়নে’ ভুগছে। বর্তমানে মহামারির কারণে তা আরো খারাপ অবস্থায় আছে।
ভেনেজুয়েলায় পশুর রক্ত খাওয়া বেড়ে যাওয়ার ঘটনা দেশটির অবনতিশীল অর্থনীতির প্রকাশ।
সিটিজেন এ্যাকশান গ্রুপের পরিচালক এডিসন আর্কিনিগেস বলেছেন, ‘এটি এমন ভাইরাস নয়, যা তাদের মেরে ফেলবে, কিন্তু ক্ষুধায় তারা মারা যাবে।’