রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪
Menu
Menu

লিবিয়ায় বাংলাদেশী হত্যা, মাদারীপুর শোকের মাতম

Facebook
Twitter

আরিফুর রহমান, মাদারীপুর।।
লিবিয়ায় মানব পাচারকারীদের আক্রমণে হতাহত বাংলাদেশিদের মধ্যে মাদারীপুরের নিখোঁজ, মৃত ও আহতের বাড়ীতে বইছে শোকের মাতম। পরিবার আত্মীয়-স্বজনের কান্নার আহজারীতে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার আকশ-বাতাশ। শান্তনা দেয়ার জন্য আশপাশের মানুষ আসলেও তারাও করুন কাহিনি শুনে কান্না ভেঙ্গে পড়ছে।

রাজৈর উপজেলার রাজন্দী দারাদিয়া এলাকার নিখোঁজ আসাদুলের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় অসুস্থ্য বাবা বিছানায় সন্তানের জন্য কাতরাচ্ছে। মা কান্না করতে করতে কিছু ক্ষন পর মুর্জা যাচ্ছে। বড় ভাই, বোন সবাই শোকে পাথর হয়ে আছে। তাদের একটি দাবী আসাদুল যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করে সরকার।

স্থানীয় ও পরিবার জানায়, মাদারীপুর নিখোঁজ ও মৃত ১৩ জনের কথা জানালেও প্রশাসন বলেছে ১১ জনের তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। লিবিয়ায় হতাহতের ঘটনার খবর শুনে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশি দালাল মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের জুলহাস শেখ এর বাড়িতে হামলা করে নিখোঁজ যুবকদের অভিভাবক ও এলাকাবাসী। এ খবর পেয়ে রাজৈর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এসময় দালাল জুলহাস নিজেকে করোনা রোগী বলে পরিচয় দেয়। এ সময় পুলিশ জুলহাসকে নিয়ে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশিসহ অভিবাসীদের মিজদা শহরের একটি জায়গায় টাকার জন্য জিম্মি করে রাখে মানবপাচারকারী চক্র। এ নিয়ে এক পর্যায়ে ওই চক্রের সঙ্গে মারামারি হয় অভিবাসী শ্রমিকদের। এতে এক মানবপাচারকারী মারা যায়। তারই প্রতিশোধ হিসেবে বৃহস্পতিবার ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ অভিবাসী শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে মানবপাচারকারী চক্রের এক সদস্যের সহযোগী ও স্বজনরা। ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে নিখোঁজ ও মৃত রয়েছে মাদারীপুরের ১৩ জন।

নিখোঁজ ১৩ জন হলেন- মাদারীপুর সদর উপজেলার জাকির হোসেন, সৈয়দুল, শামীম, জুয়েল ও ফিরুজ, রাজৈর উপজেলার বিদ্যানন্দী গ্রামের রাজ্জাক হাওলাদারের জুয়েল হাওলাদার(২২) একই গ্রামের শাহ আলম হাওলাদারের ছেলে মানিক হাওলাদার (২৮), টেকেরহাট এলাকার আয়নাল মোল্লা ও মনির, ইশবপুরের আড়াই পাড়ার আনজু বেপারীর ছেলে সজীব বেপারী (২৩) ও দক্ষিণগোয়ালদি কালাম মাতুব্বরের ছেলে শাহীন মাতুব্বর (২৪), বদরপাশার রাজন্দীর দারাদিয়ার সিদ্দিক আকনের ছেলে আসাদুল আকন (১৭), একই গ্রামের আব্দুল খালেক খালাশীর ছেলে আব্দুর রহিম খালাশী (২৮)।

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন মাদারীপুরের ৪ জন। এরা হলেন- মাদারীপুর রাজৈরের কদমবাড়ির মহিষমারী গ্রামের মোক্তার আলী শিকদারের ছেলে মোহাম্মদ আলী শিকদার (২২), ইশবপুরের আড়াইপাড়া গ্রামের খলিল খালাসীর ছেলে মো. সম্রাট খালাসী (২৯), বদরপাশার পাঠানকান্দি গ্রামের নারায়ন চন্দ্র কায়েস্ত এর ছেলে সিতু কায়েস্ত বাপ্পী (২৫) ও সদর উপজেলার তীর বাগদি গ্রামের ফিরোজ বেপারী (২৫), আহতরা লিবিয়ার ত্রিপোলি মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ইউনিয়নের পাঠানকান্দি গ্রামের ছমেদ শেখের ছেলে দালাল নূর হোসেন শেখ এর ভাই আমীর হোসেন শেখ লিবিয়ার ত্রিপোলিতে থাকেন এবং বদরপাশার যারা আছেন তাদের সবাইকে তিনিই লিবিয়ায় নিয়েছেন। এছাড়া সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামের আলী হোসেন নামের এক দালালের মাধ্যমে কিছু লোক লিবিয়ায় গেছেন।

নিখোঁজ আসাদুলের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় অসুস্থ্য বাবা বিছানায় সন্তানের জন্য কাদরাচ্ছে, মা শুভ তারা কান্না করতে বলছে, আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দাও আমি আর কিছু চাই না।

আসাদুলের বোন কান্না করতে করতে বলছে, আমার ভাই সাথে কথা হয় নাই তবে আমাকে একটি ভয়েস পাঠিয়েছিল ১৬ মে ইমোতে এর পর থেকে আর তার সাথে কোন যোগাযোগ হয় নাই।

বিদ্যানন্দী গ্রামের নিখোঁজ মানিক হাওলাদারের পিতা শাহ আলম হাওলাদার বলেন, “আমার ছেলে মানিককে লিবিয়া নেওয়ার কথা বলে দালাল জুলহাস আমার কাছ থেকে প্রথমে ৪ লাখ টাকা নিয়েছে। পরে ছেলেকে বেনগাজী আটকে রেখে ভয়েজ রেকর্ডের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা দাবী করে। আমি আমার ছেলেকে আনতে জুলহাসের বাড়ি গিয়ে টাকা দিয়ে আসি। এখনো আমার ছেলের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।”

রাজৈর থানার ওসি শওকত জাহান বলেন, লিবিয়ায় লোক নেয়া দালাল রাজৈরের জুলহাস শেখের বাড়িতে এলাকাবাসী হামলা করে এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা ওই বাড়িতে গেলে জুলহাস বলে আমার করোনা হয়েছে। করোনার কথা শুনে আমরা জুলহাস শেখকে মাদারীপুর সদর হসাপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি করি। তবে কেউ যদি অভিযোগ করে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশীদের হত্যার কথা শুনেছি। যার মধ্যে মাদারীপুরের নিখোঁজ ১১ জনের তথ্য মন্ত্রনালয় থেকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। যারা মারা গেছে তাদের লাশ সরকারি ভাবে দেশে আনার ব্যবস্থা করা হবে।

জনপ্রিয়