অনলাইন ডেস্ক।।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সরকারি নিষেধাজ্ঞা শিথিলতার জন্য হয়তো সংক্রমণ একটু বেড়ে গেছে। তবে আশা করি এটাও আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো। উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা এটা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। তবু দেশের জনগণকে বলবো আরও একটু নিজেরা সুরক্ষিত থাকেন।’
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে সারা দেশের ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ সহায়তা এবং স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। ঈদ ও রমজান উপলক্ষে সব মসজিদে কিছু আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই দোয়া করেন যেন আমরা এই অবস্থা থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারি। এটা বলবো না সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকেন। কেননা, আপনাদের কিন্তু অক্সিজেন নিতে হবে, নিশ্বাস নিতে হবে। কারও সঙ্গে কথা বলার সময় বা যখন জনসমাগমে যাবেন বা বাজারঘাটে যাবেন তখন পরবেন। যখন একা থাকেন তখন কিন্তু এটা পরবেন না। এটা কিন্তু অনেক সময় ভালোর চেয়ে ক্ষতিও করে। এমন মাস্ক পরতে হবে যাতে সহজে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া যায়। এন৯৫ মাস্ক কিন্তু সাধারণ মানুষের পরার জন্য না। এটা যারা ডাক্তার, নার্স বা যারা কোভিড রোগীর সেবা দেবেন তাদের জন্য। এটা সাধারণ মানুষের পরার দরকার নেই বা যৌক্তিকতাও নেই। ঘরে তৈরি করেও মাস্ক পরা যায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই রমজান মাসে সবাই মসজিদে যায়। তারাবি নামাজ পড়ানোয় মসজিদে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ভালো আয় হয়। কিন্তু এবার সেটা হচ্ছে না। যদিও যারা মসজিদ কমিটিতে আছেন তারা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন, বিত্তশালীরা দান করে যাচ্ছেন। এরপরও আমি মনে করি আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। সব মসজিদে ঈদ-রমজান উপলক্ষে আমি কিছু আর্থিক সহায়তা দেবো। সেই তালিকাটাও আমরা করে দিচ্ছি।’
ঈদের আগে আরও সাত হাজার কওমি মাদ্রাসাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রথম পর্যায়ে বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসায় সহায়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রায় ছয় হাজার ৮৬৫টি কওমি মাদ্রাসায় আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। প্রায় ১০ কোটি টাকা আমরা ব্যয় করেছি। কোন মাদ্রাসায় কতজন এতিম আছে আমরা হিসাব নিয়েছি। সে হিসাব অনুযায়ী প্রত্যেক মাদ্রাসায় আমরা টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও সাত হাজার কওমি মাদ্রাসাকে ঈদের আগে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এভাবে বিভিন্ন জায়গায় যারা এতিম-অসহায় আছে, কোনও শ্রেণিই যেন অবহেলিত না থাকে, সেদিকে লক্ষ রেখে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’
অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে সারা দেশের ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা নগদ, বিকাশ, রকেট ও শিউরক্যাশের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের হিসাবে সরাসরি এ নগদ অর্থ পাঠানো হচ্ছে। এ সহায়তার জন্য ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতি পরিবারে চারজন সদস্য ধরা হলে এই নগদ সহায়তায় উপকারভোগী হবে অন্তত দুই কোটি মানুষ।
ভাতা পাওয়া উপকারভোগীদের তালিকায় রয়েছেন রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকের পরিবহন শ্রমিক ও হকারসহ করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেওয়া লকডাউন বা সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
একই সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং/অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থা সংবলিত বোতাম টিপে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের ২ লাখ ৯ হাজার ৬৭৪ জন শিক্ষার্থীর মাঝে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে উপবৃত্তি বাবদ ১০২ কোটি ৭৪ লাখ ২ হাজার ৬০০ টাকা এবং টিউশন ফি বাবদ ৮ কোটি ৬৬ লাখ ৪১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।