শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ২০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০
গণমাধ্যম ডেস্ক।।
স্বাধীনতা যুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় ইতিহাসের সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের মানুষের ইতিহাস জাগরণের ইতিহাস। আজ আমরা বিশে^র দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম। এই ইতিহাস সৃষ্টির পেছনে রয়েছে তিরিশ লাখ শহিদের জীবন দান এবং লাখ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর বেদনা। মহান স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে ‘মুক্তবুলি’ মার্চ-এপ্রিল ২০২৩ সংখ্যা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। ম্যাগাজিনটির সম্পাদনা ও প্রকাশনায় রয়েছেন সাংবাদিক আযাদ আলাউদ্দীন। অফসেট কাগজে ঝকঝকে ছাপা ৩৬ পৃষ্ঠার এ ম্যাগাজিনটির মূল্য মাত্র ৫০ টাকা। কোনো ধরণের প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা ছাড়া ম্যাগাজিনটি নিয়মিত প্রকাশ করার জন্য সম্পাদককে ধন্যবাদ।
‘পাঠক যারা লেখক তারা’ এই শ্লোগান নিয়ে বরিশাল থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে ‘মুক্তবুলি’। ইতোমধ্যে ম্যাগাজিনটির ছাব্বিশটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়ে পাঠকমহলে সাড়া জাগিয়েছে। মার্চ-এপ্রিল ২০২৩-এ প্রকাশিত ‘মুক্তবুলি’র এ সংখ্যায় ‘মুক্তিযুদ্ধে বরিশালের খেতাবপ্রাপ্তদের বীরত্ব গাঁথা’ নিয়ে তথ্যপূর্ণ বিশেষ রচনাটি লিখেছেন বিশিষ্ট গবেষক মো. জিল্লুর রহমান। এ আলোচনা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার ৬৭৬জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ৪টি রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত করেন। এদের মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ ৭ জন, বীর উত্তম ৬৮ জন, বীর বিক্রম ১৭৫ জন এবং বীর প্রতীক ৪২৬ জন। আমাদের জন্য আনন্দের কথা এই যে, ৬৭৬ জন খেতাবপ্রাপ্তদের মধ্যে ৫০ জনই বৃহত্তর বরিশালের।
‘রণাঙ্গনের মুখপত্র বিপ্লবী বাংলাদেশ’ বিষয়ে লিখেছেন ইতিহাস গবেষক আল হাফিজ। তার বিবরণ থেকে পাঠকগণ জানতে পারবেন মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন থেকে প্রকাশিত বিপ্লবী বাংলাদেশ পত্রিকার অসম সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকার কথা। এছাড়া ‘ভোলার ঘটনাবহুল বিজয়’ নিয়ে লিখেছেন সাংবাদিক রিয়াজ পাটওয়ারী। তার লেখা পড়ে পাঠক সমাজ ভোলার মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে সক্ষম হবে। বিস্মৃতির অতল থেকে তুলে এনে আমাদেরকে এক কঠিন সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন ইতিহাস গবেষক মাহমুদ ইউসুফ। তিনি ‘ঝালকাঠি জেনোসাইড ১৯২৭’ সম্পর্কে তথ্যনির্ভর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন। মানুষকে ইতিহাসমুখী এবং বই পড়ার দিকে আকৃষ্ট করার সংগ্রামে চেষ্টারত ‘মুক্তবুলি’র বর্তমান সংখ্যায় ইতিহাসের এআলোচনা সচেতন পাঠক সমাজকেকিছুটা হলেও জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হবে বলে আমরা মনে করি।
চলতি সংখ্যায় মুক্তিযুদ্ধের গল্প লিখেছেন গল্পকার হাফিজুর রাহমান ও ডা. গাজী মো. তাহেরুল আলম এবং বুকরিভিউতে ‘পথিক মোস্তফা সম্পাদিত বরিশালে গণহত্যা প্রেক্ষিত: ’৭১-এর ওয়াপদা বধ্যভূমি’ বিষয়ে আলোচনা করেছেন আল হাফিজ। মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের কবিতা লিখেছেন কবি মুস্তফা হাবীব, পথিক মোস্তফা, এনাম রাজু, মাহবুবুল হক, মাঈনউদ্দিন খন্দকার, মোহম্মদ নূরুল্লাহ, বিএম আরিফ হোসেন মিন্টু, আর কে তুহিন, আনজুমান আরা রিমা, অনন্ত রিয়াজ, বিজন বেপারী, হৈমন্তী শুক্লা ওঝা, আরিফুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান, হেলেন রহমান আঁখি, জিনাত তামান্না, জুবায়ের বিন ইয়াসিন, অজয় কৃষ্ণ গোমস্তা, ফরিদা পারভীন, জামাল আজাদ এবং মাসুম শাহ। ‘জোনাকির আলো নিভে যায়’ গল্পটি সুখ পাঠ্য হলেও ‘এখনো গুলির শব্দ শুনতে পাই’কে ছোটগল্প বলা যায় না।
এছাড়া প্রফেসর মো. মোসলেমউদ্দীন শিকদার ধর্ম-ঐতিহ্য পাতায় ‘অসিয়ত কি ও কেন- প্রেক্ষিত নিজ পরিবারবর্গ’, ধর্ম-ইতিহাস পাতায় মো. জিল্লুর রহমান ‘হাদিস সিহাহ সিত্তার ইমামগনের পরিচয়’, নিবন্ধ ‘কেন কপাল খারাপ’ লিখেছেন নুরুল আমিন, সাহিত্য বিষয়ক গদ্য লিখেছেন বঙ্গ রাখাল ‘প্রেমিক ও স্বপ্নবাজ কবি মুস্তফা হাবীব’, অভিমত পাতায় ‘যাকাত দারিদ্রমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের সোপান’ লিখেছেন মো. নুর উল্লাহ আরিফ ও ‘আমাদের মনুষত্ব ও বিবেকবোধ কি হারিয়ে গেছে’ বিষয়ে লিখেছেন মো. সোয়েব মেজবাহউদ্দিন এবং স্বাস্থ্য কথায় ‘শিশুকে দুগ্ধপানে যত ভুল ধারণা’ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে লিখেছেন ডা. কে. এম. জাহিদুল ইসলাম।সুন্দর লেখার জন্য এদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
মুক্তবুলি’র চলতি সংখ্যায় চমৎকার একটি রম্যগল্প লিখেছেন শাহরিয়ার মাসুম। রাসুলের শানে কবিতা লিখেছেন কবি নয়ন আহমেদ। আরো যারা কবিতা লিখেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- কবি শিমুল সুলতানা, এরশাদ সোহেল, সুজাউদ্দৌলা, মারুফা আক্তার, মোনাব্বর হোসাইন, ফারজানা আফরোজ, অনির্বাণ চক্রবর্তী, হুমায়ুন কবীর রুস্তম, সুজন হাওলাদার, সুফিয়ান ইসলাম, সাঈদ ইবনে মাসুদ, মনিরুল ইসলাম রাসেল, নজরুল ইসলাম জামাল, আবিদ হোসেন, প্রিয়দর্শিনী প্রিয়া, প্রিয়াংকা সিকদার, দিলীপ কুমার মিস্ত্রী, মানিক লাল পাল এবং দেবনাথ ম-ল প্রমুখ। ছড়া-কবিতা মিলিয়ে ৪২টি লেখা ছাপা হয়েছে। মানের দিক বিবেচনা করে বলা যায় এর কিছু কবিতা ও ছড়া ছাপা না হলেই ভালো হতো। তবে নতুনদের উৎসাহ দেয়ার জন্য হলে ভিন্ন কথা।
আকর্ষণীয় চমৎকার প্রচ্ছদে ঝকঝকে ছাপার ‘মুক্তবুলি’ নতুন লেখালেখি চর্চাকারীদের জন্য একটি অনন্য পত্রিকা। প্রতিষ্ঠিত লেখকদের পাশাপাশি নতুন লিখিয়েদের লেখা প্রকাশে পত্রিকাটি যতœশীল এবং আন্তরিক। প্রিন্ট ম্যাগজিনের পাশাপাশি ‘মুক্তবুলি’র ওয়েবসাইটেও লেখালেখির সুযোগ রয়েছে সকলের জন্য। ঢাকাসহ সারাদেশে পত্রিকাটির সহজ বিপণন ব্যবস্থার ফলে পত্রিকা সংগ্রহ করতেও কোনো ঝামেলা হয় না। শিল্প-সাহিত্য চর্চায় নিবেদিত একটি পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ করার জন্য মুক্তবুলি’র কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। অবিরাম চলতে থাকুক ‘মুক্তবুলি’র এই সৃজনশীল স্বপ্নময় কর্মপ্রয়াস। পাঠক নন্দিত হোক এই ম্যাগাজিনটিÑ এই প্রত্যাশা নিরন্তর।
আযাদ আলাউদ্দীন
যোগাযোগ ঠিকানা:
সাতরং সিস্টেমস
উত্তর আলেকান্দা, বরিশাল।
০১৯১৩৪৮৫৯৪৭