শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Menu
Menu

সুন্দরবনে হারিয়ে যাওয়া ছয় কিশোরকে উদ্ধার করলো পুলিশ

Facebook
Twitter

অনলাইন ডেস্ক।।
তারা ছয় জন। জয়, সাইমুন, জুবায়ের, মাইনুল, রহিম ও ইমরান। বয়স তাদের ১৬-১৭। ঈদ উপলক্ষে সুন্দরবনে বেড়াতে গিয়েছিল তারা। গত বুধবার (২৭ মে) সকালে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগরে যায়। সেখানে লোকচক্ষুর অন্তরালে বনরক্ষীদের ব্যবহারের পুল পার হয়ে খালের ওপারে চলে যায়। এরপর গল্প করতে করতে তারা সুন্দরবনের ভেতরে গিয়ে হারিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে বুধবার রাতভর শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালিয়ে ভোরের দিকে তাদের উদ্ধার করে। পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, মিডিয়া) মো. সোহেল রানা জানান, ছয় কিশোর যে পথে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে সেই পথ খুঁজে না পেয়ে উল্টো বনের গভীরে চলে যায়। তাদের সঙ্গে তিনটি মোবাইল ফোন ছিল। একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে পরিবারকে নিজেদের দুর্দশার কথা জানায় কিশোররা। হারিয়ে যাওয়াদের দলের একজন বুদ্ধি করে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে। ৯৯৯ সঙ্গে সঙ্গে শরনখোলা থানার সঙ্গে তাকে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। এদিকে নৌ-পুলিশকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়। নিজেদের সমস্যার কথা জানিয়ে কিশোররা তাদের উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, খবর পাওয়ামাত্রই পুলিশ উদ্ধার অভিযানে নেমে পড়ে। কিন্তু এত বড় সুন্দরবনে কারও অবস্থান জানা সহজ নয়। অন্যদিকে, কিশোররা বনের ঠিক কোন অংশ থেকে হারিয়ে গেছে, সেটিও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছিল না। এর মধ্যেই তাদের সঙ্গে থাকা দুটি ফোন চার্জের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। একটি ফোনের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিল পুলিশ। কিশোরদের বনের মধ্যে হাঁটা-চলা না করে গাছে চড়ে বসার জন্য পরামর্শ দেয় পুলিশ। কারণ সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ওই অংশে বাঘের চলাচল রয়েছে।

উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, উদ্ধার অভিযান শুরু করার পরপরই শুরু হয় বৃষ্টি। এতে বনের মধ্যে এক গুমোট অন্ধকারের সৃষ্টি হয়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যায় পুলিশ। তাদের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করলে তারা জানায়, মাইকে এশার আজানের শব্দ শুনেছে। কিন্তু সুন্দরবনের ওই এলাকার পাশের লোকালয়ে দুই পাশে দুটি মসজিদ আছে। পুলিশ একপাশের মসজিদের মাইক দিয়ে তাদের ডাকে। এরপর মোবাইল ফোনে জানতে চাওয়া হয়, আওয়াজ শোনা যায় কিনা? জবাব আসে, খুবই কম। এবার বনের অন্য পাশের মসজিদের মাইক দিয়ে ডাকা হয়। সে সময় মোবাইল ফোনে কিশোরেরা জানায়, তুলনামূলক স্পষ্ট শব্দ শুনতে পাচ্ছিল তারা। এর মাধ্যমে বনের মধ্যে তাদের অবস্থান কিছুটা আঁচ করে পুলিশ ভেতরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এগুতে থাকে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সুন্দরবনের ভেতর হাঁটা সহজ নয়। কেওড়ার শ্বাসমূলের সঙ্গে লতাগুল্ম। ঝোপঝাড় আর নানা ধরনের কাঁটা। রাতের অন্ধকারের সঙ্গে বৃষ্টি। পিচ্ছিল পথে কয়েক ঘণ্টা ধরে সেই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বনের আরও ভেতরে যায় পুলিশ। এরপর মোবাইল ফোনে কিশোরদের চিৎকার করতে বলে পুলিশ। ঘণ্টাখানেক পর চিৎকার শুনে অবস্থান শনাক্তের পর উদ্ধার করা হয় তাদের।

পুলিশ জানায়, কিশোরদের খুঁজে পেতে রাত ৩টা বেজে যায়। দীর্ঘক্ষণ বনের মধ্যে প্রতিকূল পরিবেশে থেকে মুষড়ে পড়েছিল তারা। পরে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে শুশ্রূষা করা হয়। এরপর আইনি প্রক্রিয়া শেষে প্রত্যেকের পরিবারের সদস্যদের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়।

বাগেরহাটের শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসকে আব্দুল্লাহ আল সাঈদ বলেন, ‘নৌকা পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আমরা ছয় কিশোরকে উদ্ধার করি। ওরা প্রায় ১৮ ঘণ্টা বনের মধ্যে অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিল। তারা সুন্দরবন লাগোয়া একটি গ্রামের বাসিন্দা।’ তাদের প্রত্যেককে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জনপ্রিয়