শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ, ১৪৩১
হারুন অর রশিদ, গলাচিপা (পটুয়াখালী)।।
মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে দেশের অফ-গ্রীড অঞ্চল সমূহে বিশেষ করে চর ও দ্বীপ অঞ্চলে থাকা জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে সরকার। সারাদেশে সব এলাকায় সুষম বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়ায় বর্তমানে ৯৯ শতাংশ বিদ্যুত সুবিধা পাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরের অফ-গ্রীড উপজেলা গুলোর দ্বীপাঞ্চল সমূহে মুজিব বর্ষের মধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড শতভাগ বিদ্যুৎ সরববরাহ করতে পারবে। গ্রীডের ৪৬১ টি উপজেলা ১০০% বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। মুজিব বর্ষে ১০৫৯ টি গ্রাম একই প্রোগ্রামের আওতায় আসবে জানা যায়।
সূত্রে আরও জানায় অফ-গ্রেড এলাকা গুলো দেশের ৬৮ টি উপজেলায় অবস্থিত। গত সরকারে আমলে বিদ্যুত জালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু তৎকালীন সময়ের প্রয়াত এমপি আখম জাহাঙ্গীর হোসাইনের সফর সঙ্গী হয়ে গলাচিপায় আসলে দ্বীপাঞ্চল ইউনিয়ন দু’টোতে বিদ্যুতের জন্য দাবী তোলা হয়। তখন তিনি এলাকাবাসীর দাবীর মুখে আশ্বস্ত করেছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদার একান্ত প্রচেষ্টায় চরকাজল ও চরবিশ্বাস ইউনিয়ন দু’টি খুব কম সময়ের মধ্যে আলোকিত হতে যাচ্ছে। এখন ওই এলাকায় কুপি বাতির পরিবর্তে জ¦লবে বিদ্যুতের বাতি।এ দ্বীপ ইউনিয়ন দু’টির মানুষের কাছে এটি একটি বড় পাওয়া।আজ ১০ জুন আলোয় আলোয় ভরে উঠবে এ এলাকার ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট। । এরসাথে অবসান হবে অন্ধকার উদ্ভাসিত হবে আলো। ইউনিয়ন দু’টিতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। তারা প্রতিক্ষার প্রহর গুণছেন কখন শেষ হবে আদিম যুগের পদ্ধতি কুপি বাতি ও হেরিকেনের।
এদিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ১০ জুনকে স্মৃতিতে ধরে রাখার জন্য নিজ উদ্যোগে বর্ণিল সাজে সাজিয়েছে এলাকাকে। আনন্দের ঢেকুর গিলছে ক্ষণে ক্ষণে। এ যেন চরবাসীর কাছে মহা আনন্দের দিন, ঈদ উৎসব ও মহা মিলনের দিন।
চর কাজল ইউনিয়নের পল্লী চিকিৎসক আশরাফ (৬২) জানান, ‘ আমাদের এই বিছিন্ন দ্বীপে বঙ্গ বন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্য এসএম শাহজাদার একান্ত প্রচেষ্টায় সাগর-নদী বেষ্ঠিত দ্বীপ অঞ্চল দু’টি আজ মানব সভ্যতা বিকাশ ও আধুনিক বিশে^র সাথে যোগাযোগের এক মাইলফলক হতে যাচ্ছে। কি দিয়ে আমরা শেখ হাসিনাকে অভিবাদন জানব ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা। আমাদের স্বপ্ন আজ সত্যি হতে চলেছে।’
দ্বীপ ইউনিয়ন দু’টির দায়িত্বে থাকা ভোলা পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম ) আবুল বাশার জানান, নদীতে সাবমেরিণ ক্যাবল দিয়ে এ বিদ্যুতের লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এটি দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম সাবমেরিন ক্যাবল লাইন। এতে খরচ হবে প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা।তিনি আরও জানান, ভোলা জেলার চর মুজিবে উপকেন্দ্র করে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন চর কাজল ও চর বিশ্বাস , দশমিনা উপজেলার চর বোরহান ,চর হাদি ও রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন দেয়া হয়েছে।
এসব ইউনিয়নে মোট ৪৫টি গ্রাম রয়েছে। গ্রামগুলো বিদ্যুতায়িত হলে মোট গ্রাহক সংখ্যা হবে ২২ হাজার ৬৬৬জন। এতে প্রয়োজন হবে ৬ থেকে ৭ মেগাওয়াট বিদ্যুতের। তিনি আরও জানান, কোন সমস্যা না হলে ১০ জুন বিদ্যুত উদ্বোধন করা হবে।
ওই অঞ্চলের একমাত্র কে আলী কলেজের একাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী মো মিতুল ইসলাম জানান, ‘আমাদের বাবা , বড় ভাই ও আমরা হেরিকেন চেরাগ বাতিতে লেখাপড়া করছি । কিছু দিনের জন্য সৌর বিদ্যুত ও পেয়েছি, তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম, এখন বিদ্যুৎ আসবে এটা সপ্নের মত লাগছে। আধুনিক বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে আমরাও করতে পারব লেখাপড়া। বর্তমান এমপি এস এম শাহজাদা ভাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের মহাসড়কে যোগ দিতে পেরে আমরা নিজেকে ধন্য মনে করছি। বিশেষ করে আইসিটি শিক্ষা,কৃষি ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুগোপযুগী পরিবর্তন আসবে বলে মনে করি।’চর বিশ্বাস ইউনিয়নের চর আগস্তী হিন্দু গ্রামের সুগন্ধা রানী (৩২) বলেন,‘ আমাগো দ্যাশে কারেন্ট আইবে এ কোন দিনও হপ্পনেও ভাবি নাই। আমাগো এ্যাহোন আর করেন্টের কাজের লাই¹া গলাচিপার বাড়ি যাওয়া লাগবে না। শ্যাখ হাসিনারে ভগবান আরো বাচাইয়্যা রাখুক। আমাগো আরও কিছু দেউক।’ পটুয়াখালী -৩ আসনের সংসদ সদস্য এসএম শাহজাদা বলেন,‘বাংদেশ আওমীলীগের একটি ভিশন ছিল ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া। দেশের সব জায়গায় যখন আলো ঝলমল করছিল তখন এ এলাকা ছিল অন্ধকার। নানা কারণে রয়েছে অবহেলিতও। এ অঞ্চলে সব থাকলেও বঞ্চিত ছিল আলো থেকে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আলো পৌঁছে দিয়েছেন। উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ অপরিহার্য।
এ অঞ্চলে বিদ্যুত সঞ্চালন হওয়ার সাথে সাথে এলাকার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। এখানে এখন গড়ে উঠবে মাঝারি আকারের শিল্প কারখানা । এতে সৃষ্টি হবে নানা মুখী কর্ম ক্ষেত্রের।’