শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ, ১৪৩১
এইচ,এম হুমায়ুন কবির, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)।।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা হাসপাতালে চিকিৎসক ও জনবলসঙ্কট চিকিৎসাসেবায় বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। কুয়াকাটাসহ উপকুলীয় চার ইউনিয়নের দুই লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসাসেবার জন্য আসা চিকিৎসকেরা প্রশিক্ষনসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বদলি হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালে লাগাতার চিকিৎসক সঙ্কট বিরাজ করছে। ফলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিতহচ্ছে রোগীরা। ডাক্তারসহ জনবল না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা নিতে এসে রোগীরা বিপাকে পড়েছেন। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় হাসপাতালের বাইরে এবং ভেতরে নোংরা ময়লা জমে আছে। নিয়োগপ্রাপ্ত ভাবে কুয়াকাটা হাসপাতালে দেয়া হলে কিছু দিনের মধ্যে বিভিন্ন কৌশলে অর্থের বিনিময় বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নতুন ডাক্তাররা তদবির করে জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা হাসপাতালে ডেপুটেশনে চাকরি করছেন। ফলে গরিব ও অসহায় রোগীরা সরকারি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালে বৈদ্যুতিক পাখা থাকলেও তা ঘুরছে না। নেই পর্যাপ্ত আলোক বাতি। বিদ্যুৎ চলে গেলে আর থাকেনা কোন আলোর ব্যবস্থা। বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিলে একদিকে যেমন রোগীদের দুর্ভোগ অসহনীয় হয়ে উঠে।
কুয়াকাটা হাসপাতালে কার্যালয়ের সুত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কুয়াকাটা ২০শয্যা হাসপাতালটি স্থাপন করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভুমি কুয়াকাটাসহ উপকুলীয় এলাকার হাজার হাজার মানুষ তথা পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় আসা ভ্রমনপিপাসুদের স্বাস্থ্যসেবা নিতে নির্ভর থাকতে হয় একমাত্র এ হাসপাতালের ওপর। সাগর পাড়ের হতদড়িদ্র জেলে ও নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ শারীরিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে হাসপতালে চিকিৎসাসেবা নিতে হয়। উদ্বোধন হওয়ার পর থেকেই জনবল সঙ্কটে পড়ে হাসপাতালটি দেশের অন্যতম মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুর ও পৌর শহর কুয়াকাটাসহ উপকুলীয় চার ইউনিয়নের দুই লক্ষাধিক ক্ষাধিক লোকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নির্মিত ২০ শয্যার এ হাসপাতাল। বিঘ্নিত হচ্ছে চার ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় দুই লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা।
২০ শয্যার এ হাসপাতাল শুন্য পদ গুলো হলো- জুনিয়র কনসালটেন্ট(সার্জারী/ মেডিসিন/গাইনি এন্ড অবস/এ্যানসথেসিয়া-৪জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার এক জন, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব)একজন,মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট(ফার্মাসিস্ট)একজন, প্রধান সহকারি কাম-হিসাব রক্ষক একজন, অফিস সহকারি কাম-কম্পিউটার অপারেটর একজন , ওয়ার্ড বয় একজন, এমএলএসএস একজন, ঝাড়–দার একজন, কুক একজন থাকার কথা থাকলেও কিন্তু এই পদ গুলো শুন্য রয়েছে। প্রদও সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কুয়াকাটাসহ উপকুলীয় চার ইউনিয়নের দুই লক্ষাধিক জনসাধারন। এতে গ্রামাঞ্চলের লোকজন হচ্ছে সেবাবঞ্চিত। গ্রামীন জনগোষ্ঠী সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে মানুষের অন্যতম চিকিৎসা সেবা। অথচ এই মৌলিক অধিকার থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে কুয়াকাটার লোকজন। নানান সঙ্কটে হাবুডুবু খাচ্ছে কুয়াকাটার ২০শয্যা হাসপাতাল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রোগীরা জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর চিকিৎসা সেবা না পেয়ে তাদের ২২ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিয়ে কলাপাড়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। জরুরি প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছেনা। এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়ছে গর্ভবর্তী মা ও শিশুরা। গর্ভবর্তী মায়েদের দুর্ভোগের শেষ নেই। গর্ভধারন থেকে শুরু করে সন্তান জন্মদানের পুরো সময়টাতেই চিকিৎসা নিতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে তাদের। যার কারনে গর্ভবর্তী মহিলারা তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারছেন না। জানতে পারছেন না তাদের করনীয়। এতে ঝুঁকির মধ্যে থাকে মা ও পেটের শিশুচিকিৎসা না পেয়ে সন্তান জন্মদানের সময় নানা জটিলতায় মারা যান অনেক মা ও তার নবজাতক সন্তান। বর্তমানে প্রায় প্রতিনিয়ত সাগরে জলদস্যূদের গুলিতে আহত ও জেলেরা জাল ফেলা নিয়ে বিভিন্ন সময় মারামারি সংঘর্ষ ঘটে থাকে। সেখানে জেলেরা চিকিৎসাসেবা না পেয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় কলাপাড়া সদরে আসতে হচ্ছে। আলট্রাসনোগ্রাম, এক্সরে, রক্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা বাহির থেকে করতে হয়। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য বহিরাগত ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের ওপর নির্ভর করে থাকতে হয়।
খাজুরা গ্রামের কুলসুম বেগম বলেন, কুয়াকাটা হাসপাতালে ভাল ডাক্তার না থাকায় ভাল কোন চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছেনা। শেষ পর্যন্ত রোগীদের ২২ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিয়ে কলাপাড়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
কুয়াকাটা হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক মো. মাহমুদ হাসান ওপু বলেন, আমার একার পক্ষে গড়ে প্রতি দিন ৫০-৬-জন রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিমসিম খেতে হয়। এখানে আমি একাই এমবিবিএস হিসেবে আছি। গত মার্চ মাস থেকে প্রায় ৯ মাস চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। এখানে এমবিবিএস ৬টি পদের মধ্যে ৫টি পদ শুন্য রয়েছে। ডাক্তারসহ জনবল না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা নিতে এসে রোগীরা বিপাকে পড়েছেন।
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিন্মময় হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটা একটি গুরুত্বপুর্ণ এলাকায় সে হিসেবে ২৪ঘন্টা একজন চিকিৎসকের পক্ষে দিন রাত চিকিৎসা দেয়া মোটেই সম্ভব না। মাঝে মাঝে কলাপাড়া হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক পাঠিয়ে দিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এতে কলাপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বিঘœ ঘটে। আমি প্রতি মাসে চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি উল্লেখ করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে বলতে আছি কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।