শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ, ১৪৩১
মো. সাইফুল ইসলাম, দুমকি।।
পটুয়াখালী জেলার দুমকিসহ উপকূলীয় এলাকায় পান চাষের ব্যপক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত পরিবেশ, পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তার অভাবে পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে এখানকার চাষীরা। দিন দিন প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমে যাচ্ছে পানের বরজ ও উৎপাদন।
চাষীরা অভিযোগ করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতি, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক যোগান সংকট রয়েছে। ধার-দেনায় গড়ে তোলা পানের বরজ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পথে বসতে হচ্ছে অনেক কৃষকের। কৃষি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সহযোগিতাও নেই। এছাড়া উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদেরকে সরকারি প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই।
চাষীরা বলছেন, প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সহায়তা পেলে সম্ভাবনাময় এই পান চাষে আবারও আগ্রহী হবেন তারা।
জানা গেছে, উপজেলার পাঙ্গাশিয়া, আঙ্গারিয়া এবং মুরাদিয়া ইউনিয়নের অধশতাধিক পরিবার পান চাষে জড়িত। স্থানীয়দের কাছে খুবই প্রিয় এ পান দেশের অর্থনীতিতেও রাখতে পারে ভূমিকা। একসময় প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে পানের বরজ থাকলেও এখন তা অনেকটা কমে এসেছে।
পূর্ব পুরুষের পেশা হিসেবে এখনো যারা পানের বরজ নিয়ে আছেন তারা জানান, সরকারি কোন সাহায্য সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে যে কোন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকার তাদের সহায়তা করে কিন্তু পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে চাষীদের পাশে কেউ দাঁড়ায় না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বহু বছর আগ থেকে দুমকিতে স্থানীয়ভাবে পান চাষ করে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন কিছু পান চাষী। পরে পাঙ্গাশিয়া, আঙ্গারিয়া, মুরাদিয়া, লেবুখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মাঝে পান চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পর্যায়ক্রমে ওই এলাকার অনেকেই পান চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং সফলতার মুখও দেখেন। বর্তমানে কৃষি বিভাগের পরামর্শ না থাকায় পান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
আংগারিয়া ইউনিয়নের জলিশা গ্রামের পান চাষী হরিপদ চান হাওলাদার জানান, রোগবালাই পান উৎপাদনের একটি প্রধান অন্তরায়। পানের গোড়া পঁচা, ঢলে পড়া, পাতা পঁচা, অ্যানথ্যাকনোজ ও সাদা গুঁড়া ইত্যাদি রোগ দেখা যায়। এর মধ্যে পঁচন ধরা পানের জন্য একটি মারাত্মক রোগ। গাছের যে কোনো বয়সে এ রোগ হতে পারে। পানের বরজে সাধারণত কার্তিক ও অগ্রাহয়ান মাসে এ রোগের প্রকোপ মহামারী আকারে দেখা দেয়। রোগের লক্ষণ হচ্ছে- গাছের গোড়ায় আক্রমণ করে বলে জানান তিনি।
গোড়ায় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, মাটির কাছের একটি বা দুটি পর্বের মধ্যে কালো বর্ণ ধারণ করেছে। উপরে লতা-পাতা হলুদ হয়ে যায় ও ঝরে পড়ে। মাটি সংলগ্ন লতার ওপর সাদা সুতার মতো ছত্রাক মাইসেলিয়া দেখা যায়। পরে হালকা বাদামি থেকে বাদামি সরিষার ন্যায় এক প্রকার অসংখ্য দানার মতো স্কেরোসিয়া দেখা যায়। মাটি সংলগ্ন ডাঁটা পঁচে যায় এবং গাছ ঢলে পড়ে মরে যায়। পানের রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ফলন অনেকাংশে বৃদ্ধি পেত।
চাষী নিরঞ্জণ মন্ডল জানান, পানের বরজ তৈরি করে লতা লাগিয়ে ভাল ফলন পেলেও সার কিটনাশক ব্যবহারে পানের রোগ ঠেকাতে পারছেন না তারা। রোগবালাই কিংবা সমস্যা দেখা দিলে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা কিংবা ঔষধ বিক্রেতাদের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা গ্রহন করেন। তখন কৃষি বিভাগ থেকে কোন পরামর্শ পান না চাষীরা। তাই পানের বরজ বাদ দিয়ে অন্য ফসল ফলানোর দিকে ঝুকেঁ পড়ছে চাষীরা।
প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন সার, খৈল, বরজ তৈরির বাঁশ ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি এবং শ্রমিকদের মজুরির হার বাড়লেও সেই তুলনায় পানের দাম বাড়ছে না। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষীরা।
একসময় এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে পান চাষ হতো। এই পান এলাকার বাজার গুলোর চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ বিদেশে রপ্তানি হত।
স্থানীয় চাষী অরুনী রানী জানান, সরকার কৃষকদের জন্য সারা দেশে বিনামূল্যে সার, বীজ ও কীটনাশক বিতরণ করলেও দুমকিতে পান চাষীদের কপালে সার-বীজ ও এক বোতল কীটনাশকও জোটে না। অঙ্গারিয়া ইউনিয়নে একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকলেও কোনো দিন তাকে পানের ক্ষেতে দেখা পাইনি। কৃষি উন্নয়নে নিয়োজিত এই কর্মকর্তারা যদি পান চাষে প্রশিক্ষন ও সহায়তা দিয়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করতেন তাহলে চাষীরা আগ্রহ হারাতো না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহের মালিকা এ বিষয়ে রূপালী বার্তাকে বলেন, পান চাষের ওপর কৃষি বিভাগের আলাদা কোন কার্যক্রম নেই। তবে আমরা বিভিন্ন সময় চাষীদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এছাড়াও চাষীদের মধ্যে পান চাষে আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।