সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ, ১৪৩১
ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি।।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে একটি মাদ্রাসায় ১৭ লাখ টাকার নিয়োগ বানিজ্যের ঘটনায় স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সাথে সমঝোতা করতে লাখ টাকায় রফাদফা হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বালিপাড়ার চান সিরাজিয়া মহিলা আলিম মাদ্রাসায়। তোপের মুখে পড়ে গত ২০ আগস্ট স্থানীয় আ. লীগ ও যুবলীগের কতিপয় নেতাকর্মির সাথে ১ লাখ টাকার বিনিময়ে সমঝোতা করেন ঐ মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইব্রাহিম খলিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বালিপাড়ার চান সিরাজিয়া মহিলা আলিম মাদ্রাসায় গত ২৬/৭/২০ তারিখে অফিস সহকারী পদে বালিপাড়া ই্উনিয়ন ছাত্রদলের আহবায়ক মো: অহিদুজ্জামান, দপ্তরী পদে রনি মুন্সি এবং নিরাপত্ত প্রহরী পদে মিজান মাতুব্বরকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয়া হয়। এর মধ্যে অহিদুজ্জামান অহিদের কাছ থেকে ৭ লাখ, রনি মুন্সির কাছ থেকে ৫ লাখ এবং মিজান মাতুব্বরের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা করে তিন জনের কাছ থেকে মোট ১৭ লাখ টাকা নেন মাদ্রাসা সভাপতি ইব্রাহীম খলিল। আর ছাত্রদল নেতা অহিদুজ্জামানের নিয়োগের ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেন মাদ্রাসা সভাপতির শ্যালক ছাত্রদল নেতা ইউনুস আকন।
গোপনে নিয়ম বহির্ভূত ও অবৈধ ভাবে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় বলে এমন অভিযোগ করে তা বাতিলের দাবিতে বালিপাড়া বাজার সহ বিভিন্ন স্থানে কয়েক’শ লিফলেট বিতরণ করেন ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মি। শুধু তাই নয়, এসব লিফলেট এবং অভিযোগ পত্র ক্ষমতাসীন দলের অনেক কর্মির ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতেও পোষ্ট করা হয়। এতে মাদ্রাসার সভাপতি ছাড়াও ঐ প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সুলতান শরীফকেও জড়ানো হয়। কেবল নিয়োগ বানিজ্যই নয় আরো অনেক অভিযোগ তুলে ধরা হয় লিফলেটটিতে। আর এ নিয়ে বালিপাড়ায় নানা আলোচনার সৃস্টি হয় সাধারন মানুষের মধ্যে।
এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছেও তারা লিখিত অভিযোগ দেন নিয়োগে দূর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে। আর এ অভিযোগের অনুলিপি দেন উপজেলা চেয়ারম্যানকেও। এরপর বিষয়টি নিয়ে তারা লোকজন জড়ো করে বালিপাড়া বাজারে মানববন্ধন করার প্রচেস্টা চালালে পরে টের পেয়ে এদের বশ করতে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাপ করেন মাদ্রাসা সভাপতি ইব্রাহীম খলিল। এক পর্যায়ে প্রভাবশালী এক ব্যক্তির মধ্যস্থতায় বালিপাড়া ইউনিয়ন সিনিয়র মাদ্রাসার অফিস সহকারী এবং ইউনিয়ন আ. লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক এ হাচান হিরনকে ১ লাখ টাকা দেন ইব্রাহীম খলিল। পরে ঐ গ্রুপের প্রধান হিরনসহ স্থানীয় আ. লীগ ও যুবলীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের ১০/১২ জন নেতা কর্মি ঐ টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নেন। এমনকি তাদের মধ্যে একজনের দেয়া তথ্যমতে এ টাকার ভাগ চলে যায় উপজেলা আ.লীগ সভাপতি এম মতিউর রহমানের কাছে। তাকে তারা উপহার স্বরুপ ৫ হাজার টাকার মাছ কিনে বাসায় পৌছে দেন। কারন এ নিয়োগ বানিজ্যের বিষয়টি নিয়ে বৈঠকসহ একাধিকবার তার সাথে যোগাযোগ হয় স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের এ গ্রুপটির।
মাদ্রাসা সভাপতি ইব্র্র্র্রাহিম খলিলের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি সাংবাদিককে জানান, একটি প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তী দিয়ে যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী এ নিয়োগ পক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হয়। এখানে গোপনে বা অনিয়ম বা টাকা পয়সার মাধ্যমে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। স্থানীয় কিছু লোক প্রভাগন্ড সৃস্টি করার জন্য এ ধরনের লিফলেট ছেড়েছে। তবে ক্ষমতাসীন দলের কিছু লোককে ম্যানেজ করার জন্য টাকা পয়সার লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টাকার ভাগ পাওয়া ক্ষমতাসীন দলের একজন প্রতিবেদককে জানান, আমাদের প্রথমে দাবি ছিল আমাদের দলীয় একজন লোককে ঔ মাদ্রাসায় নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু পরে মাদ্রাসা সভাপতি আমাদের ম্যানেজ করার জন্য ১ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে আমি জানতে পেরেছি। আর ঐ টাকা হিরন আমাদের ১০/১২জনকে ভাগ বাটোয়ারা করে দেন। এছাড়া এ টাকা থেকে উপজেলা চেয়ারম্যানকে ৫ হাজার টাকার মাছ কিনে দেয়া হয় বলে তিনি জানান।
অভিযোগের বিষয়ে হিরন সাংবাদিকদের জানান, আমরা কোন ভাবে ম্যানেজ হয়নি। এ নিয়োগ বানিজ্যের ব্যাপারে মানববন্ধন করার প্রক্রিয়াটি আপাতত স্থগিত। সময় এবং অবস্থা বুঝে আমরা এ ব্যাপারে পরে মানববন্ধন করব বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মাদ আল-মুজাহিদ জানান, বালিপাড়ার চান সিরাজিয়া মহিলা আলিম মাদ্রাসায় সম্প্রতি তিন জনের নিয়োগের ব্যাপারে অনিয়মের অভিযোগ তুলে আমার কাছে একটি অভিযোগ পত্র আসে। তবে এটি নিয়ম অনুযায়ী মাদ্রাসা বোর্ড ব্যবস্থা নেবে। বোর্ড যদি বিষয়টি তদন্তের জন্য আমাকে কোন নির্দেশনা দেয় তখন আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারি।