শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ, ১৪৩১
রূপালী স্বাস্থ্য।।
বর্তমানে অনেক রোগ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে ক্যান্সার অত্যন্ত ভীতি সৃষ্টি করে। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে বেশির ভাগ মানুষ অসচেতন যে, কিভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায় বা এর প্রকোপ কমানো যায়। আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতে, শতকরা ৮০ ভাগ ক্যান্সার কিছু জানা কারণে হয় এবং বেশির ভাগ কারণ প্রতিরোধ করা যায়। এদের মধ্যে ৩০ ভাগ আমাদের ব্যবহারের কারণে এবং ৩৫ থেকে ৫০ ভাগ হয় খাদ্যের কারণে। তাই এদের বেশির ভাগ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ।
ক্যান্সার কী? ক্যান্সার হলো কোনো একটা কোষ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে অনেকগুলো কোষে পরিণত হওয়ার ফলে তৈরি হয়। ক্যান্সার তৈরির জন্য প্রয়োজন কতগুলো পদার্থ, যাদের বেশির ভাগ আসে খাদ্য থেকে। স্বাভাবিকভাবে এসব কার্সিনোজেন সহজে নষ্ট হয় খাদ্যের ভিটামিন ও অন্যান্য দ্রব্যের মাধ্যমে। যখন এসব ক্যান্সার তৈরি দ্রব্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় ও কোষের গঠন পরিবর্তন করে DNA পরিবর্তন হয়ে, তখনই ক্যান্সার তৈরি হয়।
আঁশজাতীয় খাবারের ভূমিকা: ব্রিটিশ চিকিৎসক ডেনিস প্রত্যক্ষ করেছেন, আঁশজাতীয় খাবার খাদ্যনালীর ক্যান্সার কমায়। যেসব মানুষ আঁশযুক্ত খাবার অর্থাৎ উদ্ভিজ্জ খাবার বেশি খায়, তাদের Colon Cancer কম হয়। অপর দিকে প্রাণিজ খাবার বেশি গ্রহণ করলে ক্যান্সার উৎপাদনকারী পদার্থ বেশি তৈরি হয় ও কোলন ক্যান্সার বেশি হয়। এ ছাড়াও গোশত ও দুধ Ovarian ক্যান্সার ও ঙাধৎরধহ ক্যান্সারের সাথে সম্পৃক্ত।
চর্বিজাতীয় খাবার কিভাবে ঝুঁকি বাড়ায়: যেসব খাদ্য শরীরে ক্যান্সার তৈরিতে সহযোগিতা করে, চর্বিজাতীয় খাবার তাদের অন্যতম। চর্বি থেকে হরমোন তৈরি হয় বিশেষ করে Estrogen স্তন ক্যান্সার (Breast Cancer) – এর ঝুঁকি বাড়ায়। আমেরিকার ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট প্রত্যক্ষ করেছে, যারা শতকরা ৩৭ ভাগ চর্বিজাতীয় খাবার গ্রহণ করে, তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ বেশি। আর যারা খঅদ্যের ৩০ ভাগের নিচে চর্বিজাতীয় খাবার গ্রহণ করে, তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ৩০ ভাগ কমে যায়।
খাদ্যে শাক-সবজির গুরুত্ব কী? এক দিকে সবজিতে যেমন আশ থাকে যা চর্বি কমায়। অপর দিকে এরা ক্যান্সার প্রতিরোধ উপাদান তৈরি করে। যেমন ক্যারোটিনয়েড, বিটাক্যারোটিন যা ক্যান্সার তৈরিতে বাধা দেয়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে সবজি খাবারে থাকলে তা Colon Cancer, ফুসফুসের ক্যান্সার, মূত্রথলির ক্যান্সার ইত্যাদি কমায়। এ ছাড়া কফি, Broccoli, এসবে থাকে ফ্লাবোনস ও ইনডোনস যা ক্যান্সার প্রতিরোধী হিসেবে কাজ করে।
যেসব খাদ্যে ভিটামিন ‘সি’ থাকে তা গ্রহণ করলে (Esophagus) খাদ্যনালীর ক্যান্সার ও পাকস্থলীর ক্যান্সার কমায়। ভিটামিন সি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি Nitrate কনভার্সন কমায়, যা ক্যান্সার সৃষ্টি করে। ফলে পাকস্থলীর ক্যান্সার কমায়। ভিটামিন ই, বিটাক্যারোটিন এদের মতো সিলেনিয়াম অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা শস্য জাতীয় খাবারে পাওয়া যায়।
অ্যালকোহল: অ্যালকোহল এমন একটি পদার্থ, যা অনেকগুলো ক্যান্সার তৈরির উপাদান হিসেবে কাজ করে। যেমন- Breast, Stomach, Esophagus, Larynx, Pharynx, Liver ইত্যাদি ক্যান্সার তৈরিতে ভূমিকা রাখে। আর ধূমপানের সাথে যৌথভাবে করলে আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। তাই যতটুকু সম্ভব অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কম।
ডা: কে.এম. জাহিদুল ইসলাম
এমবিবিএস(ঢাকা), বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এমএস (অর্থোপেডিক সার্জারী) অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল) ঢাকা।