মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ, ১৪৩১
ভূঁইয়া কামাল মুলাদী (বরিশাল)।।
বরিশালের মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্ত্বরটি সাজিয়েছে কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুলে। হাসপাতালে প্রবেশ করার সময় গেটের সাথে দাঁড়িয়ে আছে সবুজের মাঝে শুধু লাল রঙের মূর্ছনা। প্রকৃতির এই অপরূপ রঙ্গের সাজ দেখে দু’চোখ জুড়িয়ে যায় স্বাস্থ্য সেবা নেয়া রুগী, স্বজন ও প্রকৃতিপ্রেমীদের। চোখে নেমে আশে প্রশান্তি। এ যেন প্রকৃতিজুড়ে কৃষ্ণচূড়ার মন জুড়িয়ে দেয়া।
দূর থেকে দেখলে মনে হয়, বৈশাখের রোদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়েছে রক্তিম পুষ্পরাজি; সবুজ চিরল পাতার মাঝে যেন আগুন জ্বলছে। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় সাধারণত ১২ থেকে ১৫ মিটার হলেও শাখা-পল্লাবে এটির ব্যাপ্তি বেশ প্রশস্ত। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়িযুক্ত। মুকুল ধরার কিছু দিনের মধ্যে পুরো গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়।
স্বাস্থ্য সেবা নেয়া আসা রুগী, স্বজন আর পথচারীরা পথচলা কিছুটা হলেও শ্লথ হয় ফুলের দিকে চেয়ে। প্রখর রোদে পোড়া প্রকৃতি যেন নিজেও তার প্রাণ ফিরে পায় কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটার মাঝে। উষ্ণ আবহাওয়ায় দৃষ্টি ও মনকে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিতে কৃষ্ণচূড়া ফুলের কোনো জুড়ি নেই। গ্রীষ্মজুড়ে পাতাহীন গাছেও অজস্র ধারায় ফুল ফোটে। প্রকৃতির এই রুক্ষ-শুষ্ক মৌসুমে কৃষ্ণচূড়া আসে মানব মনকে শীতল পরশ বোলাতে, ক্লান্তি দূর করে নব উদ্যমে জাগিয়ে তুলতে। এখন আর উপজেলার কোথায় তেমন কৃষ্ণচূড়ার গাছগুলো দেখা যায় না। এক সময় কৃষ্ণচুড়ার লাল ফুলে রঙিন করে তুলতো এলাকাগুলো।
টকটকে লাল ছোপে ভরা কৃষ্ণচূড়া আমাদের মন রাঙিয়ে দেয়। গ্রীষ্মের খরতাপে শরীর মন যখন ক্লান্ত, তখন ক্লান্ত-শ্রান্ত মনকে হঠাৎ বৃষ্টির মতো জুড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে একটি মাত্র গুচ্ছ ফুলের বৃক্ষ-কৃষ্ণচূড়া। ফুল ফোটার সময়কাল একই সময় নয়, ভিন্ন ভিন্ন দেশে এটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আবির্ভূত হয়। ভিনদেশি হওয়ার পরও কৃষ্ণচূড়া আমাদের দেশি ফুলের মাঝে জায়গা করে নিয়েছে। সৌন্দর্য বিলানো ছাড়াও গাছটি গ্রীষ্মকালে ছায়া দিতে বিশেষভাবে পারঙ্গম। কৃষ্ণচূড়া গাছের আরেক নাম যে গুলমোহর, তা কম লোকই জানেন। কিন্তু কৃষ্ণচূড়াকে চেনেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। এখন কৃষ্ণচূড়ার সময়, এই ফুল ফুটে প্রতিটি গাছ লালে লাল হয়ে আছে। এই লালের সমারোহ কৃষ্ণচূড়ারই মহিমা। এর বড় খ্যাতি হলো গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে যখন এই ফুল ফুটে তখন এর রূপে মুগ্ধ হয়ে পথচারীরাও থমকে তাকাতে বাধ্য হন।
কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো বড় ৭-৮টি পাপড়িযুক্ত গাঢ় লাল। ফুলের ভেতরের অংশ হালকা হলুদ ও রক্তিম হয়ে থাকে। পাপড়িগুলো প্রায় আট সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হতে পারে। বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জল সবুজ পাতা একে অন্যরকম দৃষ্টিনন্দন করে তোলে। শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও নাতিষীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ।
মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এর কর্মকর্তা ডাঃ সাইয়েদুর রহমান বলেন, গ্রীষ্মকাল বিশেষ করে বৈশাখ মাস কৃষ্ণচূড়া ফোটার সময়। এসময় মুলাদী ইউএনও অফিস চত্ত্বর, মুলাদী সরকারী মাহমুদজান মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণসহ বিভিন্ন জায়গায় কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফুটতে দেখা যেত। অযত্ন, অবহেলা আর অসেচতনায় কৃষ্ণচূড়া ফুলের প্রতি ভালোবাসার কমতি দেখার কারণে গাছগুলো আজ বিলুপ্তির পথে। এখন আর সেই কৃষ্ণচূড়ার টকটকে লাল ফুলে এলাকা রঙিন হয়নি। কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো ছিলো পরিবেশ সৌন্দর্যের বর্ধন। কিন্তু মানুষ কৃত্রিম হাতের তৈরি ফুলের দিকে ধাবিত হওয়ায় পরিবেশও নষ্ট হতে চলছে। তাই ফুলের সৌন্দর্য ও সুন্দর পরিবেশ গড়ার লক্ষ্য উদ্যোগ নিয়ে কৃষ্ণচূড়া গাছ কিনে হাসপাতাল চত্ত্বরে লাগিয়েছি। আজ গাছটিতে লাল ফুল ফোটে হাসপাতাল চত্ত্বরকে রঙিন করে তুলেছে।
স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা নাজিরপুরের মঈনুল, রাকিব, তাহিরা; সফিপুরের জাকির, মমতাজ ও কলেজ পড়ুয়া সামিদ বলেন, কৃষ্ণচূড়া সম্পর্কে টিভি, ফেইজবুক ও ইউটিউব থেকে জেনেছি কিন্তু আজ বাস্তবে দেখে খুবই ভালো লেগেছে। হাসপাতাল চত্ত্বরে গাছ লাগিয়ে চোখ জুড়ানো পরিবেশ সৃষ্টি করায় কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়েছে।