মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ, ১৪৩১
অনলাইন ডেস্ক।।
ছাত্রদলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার শুরুতেই নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শর্তের বেড়াজালে আটকে বায়োডাটা (জীবনবৃত্তান্ত) জমা দিতে না পারা হিজলা উপজেলা ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন পদপ্রত্যাশী। বিয়ে করা এবং ২০০৫ সালের পূর্বে এসএসসি পাশ করায় তাদের বায়োডাটা গ্রহন করেনি বরিশাল জেলা ছাত্রদল।
এদিকে হিজলা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আ: গাফ্ফার তালুকদার অপরদিকে সাবেক সভাপতি দেওয়ান শহীদুল্লাহ পৃথক পৃথভাবে দুটি সুপারিশকৃত তালিকা জমা দেন। যেখানে যার নাম-ই নেই; বিবাহিত এবং ২০০৫ পূর্ববর্তী এসএসসি পাশ করা বহু বিতর্কের হোতা মহসিন সিকদারের বায়োডাটা গ্রহণ এবং কমিটিতে তার অর্ন্তভূক্তের খবরে হতবাক এবং বিস্মিত শর্তের বেড়ালে আটকে পড়া এবং বর্তমান পদ প্রত্যাশী ছাত্রনেতারা। তবে জেলা ছাত্রদল সভাপতি মাহফুজ আলম মিঠু জানিয়েছেন, শর্তের বাইরে কমিটি গঠন হবে না।
স্থানীয় ছাত্রদল নেতাদের প্রশ্ন, হিজলায় ছাত্রদলের কমিটি গঠনে ক্লিন ইমেজধারী, অবিবাহিত এবং ২০০৫ পরবর্তী ছাত্রদের অভাব নেই। তাদের নাম আলোচনার না এনে বিতর্কিত মহসিনকে পদে আনতে মরিয়া হয়ে যাওয়ার পেছনে কারন কি? কার স্বার্থে তাকে নিতে হবে? কি কারণেই বা তাকে নিতে হবে? এমনই প্রশ্ন শর্তের বেড়াজালে বাদ পরা হিজলা ডিগ্রী কলেজ ছাত্রদলের সংগঠনিক সম্পাদক আরমান হোসেন ইমনের।
তিনি জনান, মহসিন সিকদার বিবাহিত এটাই সত্য। সত্য, চিরন্তন সত্য। সাময়িকভাবে লুকিয়ে রাখবে কিন্তু সত্য প্রকাশ পাবেই। এছাড়া মহসিন সম্পর্ক করে সাভার থেকে ঢাকায় এনে বিবাহ করেছে। বিশাল ঢাকা মহানগরীতে কোন কাজী অফিসে কাবিননামা করেছে তা বের করা করো পক্ষে সম্ভব নয়। আর একজনের কাবিননামা অন্য কাউকে কি সরবরাহ করা হয়। বিগত ৫/৬ বছর আগে বিয়ে করা সেই বউ এবং মহসিনের ছবি তুলে রাখতে হবে এমন কোন দিকনির্দেশ নাকি দেওয়া হয়েছে পদ প্রত্যাশী ছাত্রদল কর্মীদের কাছে? যেখানে তার স্ত্রীর বাবা এবং সকল আত্মীয়স্বজনদের নাম প্রকাশ পেয়েছে তাদের কেউ প্রতিবাদ করলো না। স্থানীয় ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা এ বিষয়ে লিখিত দিয়েছে তা যদি কারো কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয় তাহলে ছাত্রদল জেলা এবং কেন্দ্রের নেতাদের দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেনে নিলেই বিতর্কের অবসান ঘটে বলে সাধারণ নেতাকর্মীরা মনে করেনে।
উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কাজী আলতাফ হোসেন বলেন, মহসিন সিকদার একজন নিয়মিত জুয়ারু, ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার ছাত্রলীগ এবং সেচ্ছাসেবলীগ নেতাকর্মীর সাথে তার সখ্যতা। কতিপয় নিয়মিত জুয়ারীদের সাথে সে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ টাকা জুয়া খেলে। বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে যত মামলা হয়েছে তার কোনটারই ঘটনাস্থলে ছিলোনা। বরং ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার মাধ্যমে বিভিন্ন মামলায় নিজের নাম অন্তভূক্ত করে আলোচনায় থেকেছেন। ক্ষমতাসীন দলের ওই নেতার নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা এবং অর্থ খরচ করেছে। ওই নেতার নির্বাচনী বিজয় মিছিলে অগ্রভাবে অংশগ্রহন করেছে, যেই ছবি হিজলার সকল লোকজনের ফেসবুকের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
বিতর্কিত মহসিনকে দিয়ে হিজলা ছাত্রদলের ক্লিন ইমেজ নষ্ট হবে বলে মনে করেন উপজেলা ছাত্রদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। জুয়ারীদের অর্থ খরচ করার কাজ চললে ও সংগঠন চলেনা।
হিজলা ডিগ্রী কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র সহ সভাপতি আঃ হামিদ বলেন, মহসিন সিকদার যে বিয়ে করেছে তা উপজেলার ছোট-বড় সকলের জানা। যে ব্যক্তি ৫/৬বছর পূর্বে বিয়ে করেছে তা শত চেষ্টা করে হলেও ধামাচাপা দিতে পারেনা।
সে তার ভাইদের টাকার মুজার ব্যবসা দেখাশুনা করে। পাশাপাশি উপজেলার মৌলভীরহাটে একটি সকমেটিকস এর দোকান পরিচালনা করে এবং বৃহত্তর বরিশালে মুজা মার্কেটিং করে। তার স্ত্রীকে নিয়ে সে ঢাকা থেকে হিজলা আসার সময় লঞ্চে আমার সাথে পরিচয় করিয়েছিলো। তখন ছাত্রদল কমিটি গঠনে অবিবাহিত শর্ত ছিলোনা। ওইসময় শর্তের বিষয়টি উল্লেখ থাকলে আমার সাথে পরিচয় করাতো না। আমি মনে করি মহসিনের অনেক যোগ্যতা রয়েছে, কিন্তু বিবাহিত এবং ২০০৫ পূর্ববর্তী ব্যাচ। তাই বিতর্কিত কাউকে দিয়ে কমিটি গঠন না করে উপজেলায় অনেক ক্লিন ইমেজধারী ছাত্রনেতা রয়েছে। তাদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হলে সংগঠন হবে বিতর্ক মুক্ত এবং শক্তিশালী। আর তা নাহলে একাধীক গ্রুপে বিভক্ত হবে ছাত্রদল। আর এজন্য দায়ী হবে জেলা ছাত্রদল।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত হিজলা উপজেলা ছাত্রদল নেতা মহসিন সিকদারের ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
বরিশাল জেলা ছাত্রদল সভাপতি মাহফুজ আলম মিঠু’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সংগঠনের যেসকল শর্ত রয়েছে অমান্য করার প্রশ্নই আসেনা। বিয়ে এবং ২০০৫ পূর্ববর্তী কোন ছাত্র কমিটিতে স্থান পাবে না।