শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১
জাকিরুল আহসান।।
তখন দুপুর আড়াইটা। বাবুগঞ্জ কলেজ গেট একটি দোকানে চা পানের উদ্দেশ্যে রূপালী বার্তার নির্বাহী সম্পাদক সাইফ উদ্দিন মিলন। এমন সময় কাছে আসলেন এক বয়স্ক ব্যক্তি। দাড়ি-চুল সবাই সাদা। কাঁধে ব্যাগ, হাতে বেশ কিছু পত্রিকা। সাদাসিধা পোশাক, পায়ে প্লাস্টিকের স্যান্ডেল। বেশভুষা দেখলে মনে হবে গ্রামের কোন এক অশিক্ষিত ও দরিদ্র পরিবারের কেউ।
হঠাৎ তিনি একটি পত্রিকা কেনার আবদার করলেন। পত্রিকাটি নেয়ার পর নানা আলাপচারিতায় পাল্টে গেল সব ধারণা। মূলত তিনি একজন সাবেক কলেজ শিক্ষক। নাম ইসহাক শরীফ। বহু বছর তিনি বাবুগঞ্জের নতুন হাট আবুল কালাম ডিগ্রি কলেজে রসায়ন বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। কিন্তু কেন তিনি আজ পত্রিকার হকার সেই গল্প জানালেন ইসহাক শরীফ।
আপনি সাবেক একজন কলেজ শিক্ষক হওয়ার পরও পত্রিকার হকারি কেন করছেন এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, স্ত্রীও পেশায় কলেজ শিক্ষক। সংসারে দুই সন্তান। ভালোই চলছিল। আমি ইচ্ছে করলে এসব না করেও চলতে পারতাম। কিন্তু সমাজের কিছু দায়বদ্ধতা থেকে মূলত পত্রিকা বিক্রি শুরু করি। তার একটি হচ্ছে মানুষের মাঝে তথ্যজ্ঞান ছড়িয়ে দেয়া।
অন্যটি হচ্ছে, সমাজের যে যুবকরা কর্ম নিয়ে হতাসায় রয়েছে, বলছে চাকরি পাচ্ছে না। তাদের জন্য একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। তা হলো কাজ কোনটাই ছোট নয়। সৎ জীবন যাবনের চিন্তা থাকলে যে কোন কর্ম নিয়েই বেঁচে থাকা যায়।
২০১৬ সালের ১ মে থেকে পত্রিকার হকারীর শুরু করেন তিনি। আর সেটা শুরু হয় ওয়ার্কাস পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার সুবাদে। তখন তিনি দলটির মুখপাত্র সাপ্তাহীক নতুন কথা পত্রিকা বিক্রি করতেন। এর পর ধীরে ধীরে দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো বিক্রি শুরু করেন ইসহাক শরীফ। সেই থেকে তথ্যজ্ঞান ছড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক এই শিক্ষক।
তিনি বলেন, আমার জীবন যাপন অতি সহজ, খরচও খুব কম। দুপুরে বাসায় যাওয়া হয় না, যেখানে থাকি সেখানেই খেয়ে ফেলি বাজেট ২৫ টাকা। এমনকি বাসার খাবারও তেমন আড়ম্বর নয়।
ইসহাক শরীফ বলেন, প্রতিদিন ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরি, খেয়ে দেয়ে সারাদিনের আয় ব্যায়ের হিসেব নিয়ে বসি। সব হিসেব শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ি, ভোর ৪ টায় আবার বিছানা ছাড়ি, এরপর নামাজ শেষ করে সকাল ৬ টায় বেরিয়ে পরি। তারপর সারাদিন চলতে থাকে হকারি। একই ভাবে চলে যাচ্ছে দিন। আর পরিশ্রমের কাজ দেহ মন ভালো থাকে। মনেও থাকে আনন্দে।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রাকুদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইসহাক শরীফ জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সমাজের মানুষের মাঝে তথ্যজ্ঞান ছড়িয়ে দেয়ার কাজটি করে যেতে চান নিরবে। এজন্য রূপালী বার্তার পাঠকদের কাছে দোয়া চেয়েছেন সাবেক এই কলেজ শিক্ষক।