বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ, ১৪৩১
আরিফুর রহমান।।
বরিশালে করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ দেশের সফল প্রতিবন্ধী হিসাবে পুরস্কার প্রাপ্ত সেলিম মিয়ার পাশে দাড়িয়েছেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। জেলা প্রশাসক তার হাতে তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার খাদ্য সামগ্রী ও নগদ টাকা।
এছাড়াও তার যাবতীয় চিকিৎসার দায়িত্ব নেন জেলা প্রশাসক। তবে এই সময়ে একটি স্থায়ী নিবাস তার পরিবারের জন্য সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন বলে জানালেন প্রতিবন্ধিতাকে জয় করা শারীরিকভাবে অসুস্থ সেলিম মিয়া।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে প্রতিদিনি মানুষ কোন না কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তেমনি বরিশাল নগরীর একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী সেলিম মিয়া। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে কুজো হয়ে হাটেন। কিন্তু জীবন যুদ্ধে হাল ছাড়েননি। বেছে নেননি ভিক্ষার পথ। জীবনকে জয় করতে শারীরিক প্রতিবদ্ধকতাকে দূরে ঠেলে সমাজ সেবার সহায়তায় ছোট একটি দোকান দেন। সেটাকে পরবর্তীতে খাবার হোটেলে রূপ দেন। জীবন যুদ্ধের এই সৈনিক ২০১৮ সালে দেশের সফল প্রতিবন্ধী হিসাবে পুরস্কৃত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে গ্রহণ করেন পুরস্কার। কিন্তু করোনা তার জীবনেও হানা দিয়েছে। করোনার প্রভাবে ছোট্ট ব্যবসা চালু রাখতে না পারায় দেনায় জর্জরিত হয়ে ছাড়তে হয়েছে ব্যবসা। শারীরিক অসুস্থতাও চেপে ধরেছে তাকে। উপার্জনের সব রাস্তা যখন বন্ধ হয়ে গেছে তখন তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে জেলা প্রশাসন ও সমাজ সেবা অধিদফতর। সেলিম মিয়া সরকারি একটি ঘর (প্রধানমন্ত্রীর উপহার) ও খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে আকুতি জানান।
সাজ্জাদ পারভেজ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে জেলা প্রশাসককে অবহিত করেন। তাকে সহযোগীতার প্রথমধাপে রবিবার (৮ আগস্ট) নগরীর সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার তার হাতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার খাদ্য সামগ্রী এবং নগদ ৫ হাজার টাকা তুলে দেন। এ সময় সেলিম মিয়ার যাবতীয় চিকিৎসার দায়িত্ব নেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ জানান, নগরীর ফকির বাড়ি রোডের বাসিন্দা সেলিম মিয়া। তার শারীরিক প্রতিবদ্ধকতার কথা বিবেচনা করে বরিশাল সমাজ সেবার সহযোগিতায় ২০১৫ সালে একটি দোকান খুলে দেয়া হয়। পরে সেখান থেকে ছোট আকারে খাবার হোটেল খোলেন তিনি। সেখানেই দ্বিতীয় স্ত্রী ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু করোনাকালিন নিষেধাজ্ঞায় খাবার হোটেল খুলতে না পারায় দেনায় জর্জরিত হয়ে ছাড়তে হয়েছে ব্যবসা। সেলিম মিয়া শারিরিক ভাবে খুবই অসুস্থ। দুই ছেলে থাকলেও কেউ তার খবর নেয় না। প্রথম স্ত্রীও ছেড়ে চলে গেছে অনেক আগে। বৃদ্ধ মাকে নিয়ে ফকির বাড়ি এলাকায় ভাড়া থাকেন। কিন্তু তার এখন উপার্জন ক্ষমতাও নেই। ঘর ভাড়া দিয়ে তার পক্ষে থাকা সম্ভব হচ্ছেনা। এই সময় তার মাথা গোজার জন্য স্থায়ী একটা ঘরের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেন সমাজ সেবা অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ।
অন্যদিকে জেলা প্রশাসকের হাত থেকে উপহার সামগ্রী ও নগদ অর্থ সহায়তা পেয়ে খুশি সেলিম মিয়া।
তিনি জানান, তার দু:সময়ে বরিশাল সমাজ সেবা অফিস তার পাশে এসে দাড়িয়েছিল। সমাজে সম্মানের সাথে বাচাঁর জন্য দিয়েছেন সহজ শর্তে ঋণ। তা দিয়ে সফলও হয়েছিলেন। কিন্তু করোনা সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে তার ছোট্ট ব্যবসা। তারপর আবার শারীরিক অসুস্থতার কারণে হাটাচলা কষ্টসাধ্য হয়ে দাড়িয়েছে। এখন খাওয়াতো দূরের কথা ঘর ভাড়া দিয়ে থাকার পরিস্থিতিও তার নেই। তাই বৃদ্ধা মা ও স্ত্রীসহ যাতে স্থায়ী মাথা গোজার ঠাই হয় সেজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার উপহারের জমিসহ একটি ঘর দেয়ার আকুতি জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার তাকে ঘর দেয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন বলে জানান সেলিম মিয়া।