বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ, ১৪৩১
রূপালী স্বাস্থ্য।।
মাসিকের সময় কিছু পরিমাণে পেটে ব্যথা করতেই পারে, এতে ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু যদি এমন ব্যথা হয় যেটা সহ্য করা কঠিন ব্যাপার হয়ে দাড়ায় তাহলে চিন্তার ব্যাপার। কিশোরী বয়সে মাসিক সম্পর্কে সম্যক ধারনা দেওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে মা, বড় বোন কিংবা অন্য নিকটাত্মীয়দের দায়িত্ব অনেক। বিষয়টি সেকেন্ডারি স্কুল পর্যায়ে পাঠ্য রয়েছে ঠিকই, তবে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষিকার খোলামেলা বৈজ্ঞানিক আলোচনা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
সঠিক তথ্য জানা থাকলে ভীতি কমবে। ভীতি কমলে ব্যথার তীব্রতা কম অনুভূত হবে। এছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, অশান্তির সঠিক সমাধান করা ইত্যাদি বিষয়ে খেয়াল রাখা। ঋতুস্রাব বা মাসিকের সময় তলপেটে কোনব্যথা বা কষ্টদায়ক অনুভূত হয় না, এমন নারীর সংখ্যা কম। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এ ব্যথার পরিমান যখন এমন হয় যে তা দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত করে, তখনই কেবল এটাকে অসুস্থতা বা ডিজমেনোরিয়া বলে গণ্য করা হয়। ডিজমেনোরিয়া দুই ধরনের প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি।
প্রাইমারি ডিজমেনোরিয়া: সাধারণত ১৮-২৪ বছরের তরুণীরা এতে বেশি ভোগেন। এর নির্দিষ্ট কোন কারণ জানা নেই, তবু কারণ হিসেবে কিছু বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়ে থাকে। যেমন, মাসিকের সময় ব্যথার প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যাওয়া, ঘরে-বাইরে অশান্তি, পরীক্ষার চাপ, বেকারত্ব, ভগ্নস্বাস্থ্য ইত্যাদি।
এ ছাড়া গবেষণায় কিছু হরমোনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তবে অন্তত একবার গর্ভধারণ এবং স্বাভাবিক প্রসবের পর এ সমস্যাটি আপনা আপনি সেরে যায়। গর্ভধারণ ও প্রসবের মাধ্যমে জরায়ু পরিপক্বতা লাভ করে এবং সাধারণত এরপর ডিজমেনোরিয়া হয় না।
মাসিক শুরুর সঙ্গে এ ব্যথা শুরু হয় এবং প্রথম দিনের পর আর ব্যথা থাকে না। তলপেটে মোচড়ানো ধরনের ব্যথা হয়। কোমরে ব্যথা হতে পারে, উরু বা থাইয়ের ভেতরের অংশেও ব্যথা হতে পারে। এ সময় ব্যথার প্রভাবে রোগীকে বিমর্ষ দেখায়। তার বমি ভাব অথবা বমি হতে পারে।
সেকেন্ডারি ডিজমেনোরিয়া: অনেকের গাইনি রোগের কারণে মাসিকের সময় ব্যথা হতে পারে, যেমন তলপেটের ইনফেকশন, জরায়ুর টিউমার, পলিপ, জন্মগত ত্র“টি ইত্যাদি। বিবিধ কারণ থাকায় মাসিকের সময় ব্যথার ধরনও ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত মাসিক চক্রের শেষ সপ্তাহে তলপেটে ভার ভার অনুভূত হয়। মাসিক শুরুর তিন-চার দিন আগে থেকেই ব্যথা হয়।
মাসিক শুরু হলে ব্যথা কমতে থাকে। সেকেন্ডারি ডিজমেনোরিয়ার জন্য আলাদা কোন চিকিৎসা নেই প্রথমে অন্তর্নিহিত রোগটি সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে। এরপর সে রোগের চিকিৎসাতেই ভালো হবে প্রতি মাসের এ যন্ত্রণা।
মাসিকে পেটে ব্যথা সমাধান-
সাধারণ পদ্ধতিঃ কোন বোতলে গরম পানি ভরে বা কাপড় গরম করে তলপেটে ২০/২৫ মিনিট ছেকা লাগাতে হবে। এটা সপ্তাহে টানা ৫ দিন করে করতে হবে। এতে ধীরে ধীরে মাসিকের সময় ব্যথা কমে যাবে।
সিজ বাথঃ ৩ মিনিট গরম পানিতে কোমর ডুবিয়ে বসে থাকতে হবে। পরের ২/১ মিনিট ঠাণ্ডা পানিতে। এভাবে ২০/২৫ মিনিট সিজ বাথ নিতে হবে। এটা সপ্তাহে টানা ৩/৪ দিন নিতে হবে। শুধু পানি বা পানিতে কিছু লবন, বেকিং সোডা বা ভিনেগারও ব্যবহার করা যায়।
কেজেল ব্যায়ামঃ কেজেল ব্যায়াম/কেজেল এক্সারসাইজ প্রস্রাবের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং তলপেটের নিম্নভাগের মাংশপেশীর সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে। কেজেল ব্যায়াম শ্রেনী মেঝের পেশীকে দৃঢ় এবং শক্তিশালী করে যা জরায়ু, মূত্রথলি এবং পরনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে সাহায্য করে। আপনি প্রায় যে কোন সময়ে শুয়ে বা বসে কেজেল ব্যায়াম করতে পারেন। কেন কেজেল ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ সেটা আগে বুঝতে হবে। অনেক কারণে আপনার শ্রেণী মেঝের মাংসপেশী দুর্বল হয়ে যেতে পারে। গর্ভাবস্থা থেকে সন্তান প্রসব, বয়স বৃদ্ধি পেলেও এমন হতে পারে। এ কারণে শ্রোণী অঙ্গ থেকে যোনির অনেক পেশী ঢিলা হয়ে নিচের দিকে নেমে যেতে পারে। এতে প্রস্রাবের চাপ সহ্য করার ক্ষমতা কমে যাওয়াসহ আরো অনেক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
ডা: কে.এম. জাহিদুল ইসলাম
এমবিবিএস(ঢাকা), বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এমএস (অর্থোপেডিক সার্জারী) অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল) ঢাকা।