বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ, ১৪৩১
ভূঁইয়া কামাল, মুলাদী (বরিশাল) ।।
বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নে আড়িয়ালখাঁ সেতু নির্মাণের দুই বছরেও হয়নি সংযোগ সড়ক। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাসহ উপজেলার সাধারণ মানুষ। সেতু নির্মাণের আগে চলাচলের জন্য নদীতে নৌকা ছিলো একমাত্র ভরসা। সেতু হওয়ার পরে নৌকায় পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সংযোগ সড়ক না হওয়ায় অনেক কষ্ট করে সেতুতে উঠতে হচ্ছে সবাইকে। বিশেষ করে নারী, শিশু ও অসুস্থ লোকজন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বেশি।
জানা গেছে, মুলাদী উপজেলার ও পার্শ্ববর্তী থানা কালকিনি হয়ে ঢাকার সাথে যোগাযোগ দ্রুত ও উন্নত করার লক্ষে ২০১৪ সালে আড়িয়ালখাঁ নদীতে সেতু নির্মানের কাজ শুরু হয়। নাজিরপুর ইউনিয়নের রামারপোল এলাকায় প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণ করা শেষ হয় ২০১৯ সালে। স্থানীয়দের আশা ছিলো, সেতু হওয়ার পরে গাড়ী চলাচল শুরু হবে এবং স্থানীয় বাসিন্দারা সহজেই ঢাকা ও বরিশাল যাতায়াত করতে পারবেন। কিন্তু সেতুটির সংযোগ সড়ক না হওয়ায় দুই বছরেও উদ্বোধন করা হয়নি। সেতুটি উদ্বোধন না হলেও মানুষ চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলে সাথে সাথে নদী পাড়াপারের নৌকা বন্ধ হয়ে যায়।
সংযোগ সড়ক না হওয়ায় সেতুটিতে ওঠার জন্য স্থানীয়রা বালুর বস্তা দিয়ে ব্যবহার করলেও কোনো প্রকার গাড়ী চলাচল করতে পারে না। রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়ে হয় ভুক্তভোগীদের।
নাজিরপুর গ্রামের জয়নাল আবেদীন বলেন, সেতুর হওয়ার পরে সংযোগ সড়কের জন্য টাকা বরাদ্দ হয়েছিলো শুনে ছিলাম। সড়কে বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছিলো। বর্ষায় বালু নেমে যাওয়ায় আর কোনো কাজ হয়নি। অসুস্থ ও বৃদ্ধদের পার হতে হলে অনেক কষ্ট শিকার করতে হয়।
নাজিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আমিনুর রহমান বলেন, উপজেলায় আড়িয়ালখাঁ সেতুতে গাড়ী চলাচল শুরু হলে মুলাদী, হিজলা, কাজিরহাট থানাসহ বেশ কয়েক এলাকার মানুষ সহজেই রাজধানী ঢাকায় যাওয়া আসা করতে পারবে। সেতুটি চলাচলের উপযোগী হলে ৫/৬ ঘন্টায় ঢাকা যাওয়া যাবে। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও সেতুটির সংযোগ সড়ক না থাকায় পায়ে হেটেও চলাচল করা যাচ্ছে না। অনেক কষ্ট করে উঠতে হয়। এতে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে বেশি।
নাজিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বাদল খান বলেন, সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা প্রয়োজন। সেতু হওয়ার আগে নৌকায় সহজেই যাতায়াত করা যেত। মানুষের আশা ছিলো সেতু হলে নৌকা পারাপারের দুর্ভোগ কমবে। কিন্তু সেতু হওয়ার পরে নৌকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। সেতুর সংযোগ সড়কে বালু ফেলে রাখা হয়েছে। এতে চলাচল করা যায় না। আবার কোন কোন জায়গায় মাটি না থাকায় অনেক কষ্ট করে সেতুতে উঠতে হয়।
এলাকার নাজিরপুর ইউনিয়নের কাচিরচর গ্রামের ও মুলাদী আল-রাজী ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ মু. আব্দুল্লাহ আহাদ ভূঁইয়া বলেন, সেতুটির সংযোগ সড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান বলেন, কারিগরি সমস্যার কারণে সংযোগ সড়কে বালু দিয়ে রাখা যাচ্ছিলো না। তাই সংযোগ সড়ক নির্মাণে বিলম্ব হচ্ছে। নতুন ভাবে প্রায় ৭ কোটি টাকার সংযোগ সড়কের দরপত্র দেওয়া হবে। আশা করা যায় আগামী অর্থ বছরের আগেই এই সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ শুরু হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের বরিশাল জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফ মো. জামাল উদ্দিন জানান, সংযোগ সড়কের নকশায় কিছুটা ত্রুটি ছিলো। সেই অবস্থায় সংযোগ সড়কটি করা হলে বিলীন হয়ে যেত। এখন নতুন করে নকশা পরিবর্তন করে সংযোগ সড়ক করা হবে। দ্রুত সংযোগ সড়কের কাজ করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।