শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১
ভূঁইয়া কামাল, মুলাদী (বরিশাল)।।
শরৎ এলেই প্রকৃতি হেসে ওঠে প্রাণের সজীবতায়। এক সময় গ্রামাঞ্চলের আনাচে-কানাচে দৃষ্টিনন্দন শরতের ধবধবে সাদা কাশফুল ফুটত প্রচুর পরিমাণে। বিশেষ করে নদীর ধার ঘেঁষে এসব কাঁশফুলের দেখা মিলত অনায়াসে। কিন্তু বর্তমান সময়ে গ্রামেগঞ্জে পতিত জমিও কমে গেছে, কাশফুলও তেমন দেখা যায় না।
বরিশালের মুলাদী ডাক্তার ভুলু সেতুর পূর্বপাশে বালুমাঠে দেখা মিলল কাশফুলের। শরৎকাল অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে সাধারণত কাশফুল ফুটে থাকে। তবে সেপ্টেম্বরের মাঝমাঝি বা শেষের দিকে কাশফুলের বেশি দেখা মেলে। শ্রাবণ মাস শেষে ভাদ্র মাসের শুরুতে তথা শরতের আগমনে বর্ষা ঋতুকে বিদায় জানিয়ে প্রকৃতি শরৎকালকে বরণ করে। আর শরৎকে স্বাগত জানাতে মেতে ওঠে কাশফুল। কাশফুলের শুভ্রতা ভয় দূর করে শান্তির বার্তা বয়ে আনে। এ জন্যই শুভ কাজে ব্যবহার করা হয় কাশফুলের পাতা কিংবা কাশফুল।
কাশফুল, স্বচ্ছ নীল আকাশে সাদা মেঘ আর মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। এগুলো শুনলেই মনের আঙ্গিনায় ভেসে উঠে শরৎকালের নাম। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা শরৎ ছাড়া আর কে ভাসাতে পারে? তাইতো শরৎতের বন্দনায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিমোহিত হয়ে লিখেছেন অসংখ্য গান, কবিতা। তবে শরৎতের সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ কাশফুল। আকাশের সাদা মেঘের সঙ্গে কাশফুলের মৃদু বাতাসে দোল খাওয়া প্রকৃতিতে শুধুই মুগ্ধতা ছড়ায়। আর সেই শরৎতের কাশফুলে প্রাণমুগ্ধ হয়েছে ডাক্তার ভুলু সেতুর পূর্ব পার্শ্বে বালুর মাঠটি। ঋতু বদলের সঙ্গে প্রকৃতির ভিন্নতা ঘটে।
শরৎতের আগমনে বালুর মাঠটি কাশফুলে ভরে গেছে। বালুর মাঠটিতে রয়েছে খেলার মাঠ। পাশের কাশফুলের সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে দর্শনার্থীদের। এ ছাড়াও ছুটির দিনগুলোতে দেখা মিলে হাজারও দর্শনার্থীদের। পশ্চিম আকাশে সূর্য যাওয়ার পূর্বক্ষণে মাঠটিতে ভিড় বাড়ে দর্শনার্থীদের। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে যায়, কেউবা প্রিয়তমাকে নিয়ে। হালকা বাতাসে কাশফুলের দোলের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেয় তারা। কেউবা সেই অনুভূতিগুলোকে ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি করে। আবার কেউবা সঙ্গে সঙ্গে ফ্রেমবন্দি ছবি যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে জানান দেয় শরৎ এসেছে ধরায় ৷
বর্ষার শেষে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর কাশফুলের শুভ্র সৌন্দর্য নিয়ে শরৎ আসে। নীল আকাশে সাদা মেঘের সারি সারি ভেলা আর মর্তে সুশোভিত কাশফুলের মেলা মোহিত করে মানুষের মন। কাশফুলের এই সৌন্দর্যে বিমোহিত না হওয়া মানুষের সংখ্যা নেই বললেই চলে। আর তাই তো শরৎকে নিয়ে মানুষের এত জল্পনা-কল্পনা। শরৎতের এই দৃষ্টিনন্দন দিনে মুলাদীর এই বালুর মাঠটি হয়ে ওঠে এক আনন্দের, প্রাণের মেলায় এমনটায় অনূভূতি প্রকাশ করছিলেন দর্শানার্থী আহনাফ রহমান সামিদ, রাফিউর রহমান সিরাত, নুসরাত, সাইফুল ইসলাম, সুজন, শাহদাৎ, সিরাজ, মাইনু্িদ্দন, মার্জিয়া, কুলসুম ও বির্থী।
তারা আরও বলেন, শরৎ মনে জাগিয়ে দেয় কাশফুল, স্বচ্ছ নীল আকাশে সাদা মেঘ আর দিগন্তবিস্তৃত সবুজের কথা। কাশফুলের গন্ধ নেই, কাশফুল প্রিয়জনের জন্য উপহার হিসেবে দেওয়ার ফুলও নয়। তবে কাশফুলের মধ্যে রয়েছে রোমাঞ্চকর উন্মাদনা। যা দেখে ব্যক্তিমন ভালো হয়ে যায়। কাশফুলের এই শুভ্রতা এবং স্নিগ্ধতা ছুঁয়ে যাক প্রতিটি হৃদয়।
উপজেলার প্রবীণ বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যাংককার মোঃ খলিলুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আগে পথে প্রান্তরে যেখানে সেখানে দেখা মিলত কাশফুলের। কিন্তু মানুষ বাড়ছে। বর্ধিত মানুষের খাদ্যের জোগান দিতে পতিত জমিও চলে যাচ্ছে চাষের আওতায়। পতিত জমি না থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে কাশবন আর কাশফুল। গ্রামাঞ্চলে অপরিকল্পিত দালানকোঠা, নদী ভাঙ্গন ও কৃষি চাহিদায় কাশফুল হারিয়ে যেতে বসছে। আবহাওয়াজনিত কারণে অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে শরৎকালে কাশফুলের তেমন দেখা মিলছে না।