শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১
রূপালী বার্তা।।
২০১৮ সালের ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। দায়িত্ব গ্রহণ করেন একই বছরের ২৩ অক্টোবর। নগরবাসীর জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র একবছর দুইমাসের মতো সময়। নগর পিতা নয়, একজন সেবক হিসেবে প্রথমেই দৃষ্টি দিলেন নগর ভবনের দিকে। অল্প সময়ের মধ্যেই পাল্টে দিলেন নগরভবনের চিত্র।
জানা গেছে, মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ চেষ্টা করেছেন- নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কিভাবে দায়িত্ববোধ, কর্তব্য ও জবাবদিহীতার জায়গাটি তৈরী করা যায়। তাহলে নগরবাসী তাদের প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন না। তাই অবকাঠামোগত পরিবর্তন বাদ দিয়ে তিনি নগর ভবনকে ঢেলে সাজাতে শুরু করলেন।
তিনি মনে করেন, তাঁর সহযোদ্ধা অর্থাৎ কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মানষিকতার পরিবর্তন ও তাদের দাবি করার আগেই তাদের আশাগুলো পূরণ করা গেলেই নগরবাসীর সেবা করা সম্ভব। শুরু করলেন শুদ্ধি অভিযান। এতে কিছু দুষ্ট প্রকৃতির স্টাফ পড়লেন বিপাকে। এতদিন প্রভাব খাটিয়ে আর দলীয় আনুগত্য নিয়ে যারা নামকাওয়াস্তের পদোন্নতি নিয়েছিলেন তাদের ফিরতে হলো মূল পদে। দীর্ঘদিন ধরে অঘোষিতভাবে চলা আলিস্যা ভাতা বন্ধ হয়ে গেলো।
মেয়র সকল স্টাফের বেতন তাদের নিজ নিজ একাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধের উদ্যোগ নিলেন। যারা রাতের ঘুম ও আরামকে হারাম করে এই নগরকে পরিস্কার করেন সেই পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা দাবি করার আগেই তাদের বেতন একলাফে তিন হাজার বাড়িয়ে ৬ হাজার টাকা থেকে হলো ৯ হাজার টাকা। খুশীতে মাতোয়ারা এসকল পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা এখন মনের আনন্দে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। আগে নিয়মিত বেতন না পাওয়ার কারণে অনেক বাড়িওয়ালা সিটি স্টাফদের বাড়ি ভাড়া দিতেন না। মুদি দোকানী বাকি দিতে চাইতেন না। এখন স্টাফদের বেতন নিয়মিত পরিশোধ করা হচ্ছে।
দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিকরা নিয়মিত বেতন পাওয়াটাই ভাগ্য বলে মনে করতেন, বোনাস পাওয়ার বিষয়টি স্বপ্নেও দেখতেন না। সেই শ্রমিকরা এখন বর্ধিত বেতন পাচ্ছেন, আবার বেতনের অর্ধেক হিসেবে বোনাসও পাচ্ছেন। এছাড়া নগর ভবনে কর্মরত দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বিসিসির কোন স্টাফ অবসর নেয়ার পর তার জীবদ্দশায় সকল বকেয়া নিতে পেরেছেন বলে নজির আগে পাওয়া যায়নি। এমনকি মৃত্যুর পরেও তার ন্যায্য পাওনা পরিবারের সদস্যরা পেয়েছেন বলে শোনা যায়নি। কিন্তু রের্কড গড়েছেন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। একদিনে ৪২ জন স্টাফের যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করেছেন তিনি।
এ পর্যন্ত বিসিসির কতজন স্টাফ চিকিৎসা ও মৃত্যুর পর বড় অংকের আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন তার হিসাব নেই। পোষ্য কোঠায় চাকুরীও পেয়েছেন অনেকে।
এখন ঘড়ির কাটা ৯টায় পৌঁছালেই কর্মকর্তা-কর্মচারী ছোটেন নগর ভবনে। বিসিসির বেশিরভাগ স্টাফ সৎ জীবনযাপন করছেন। তাদের ভাষ্যমতে- নিয়মিত বেতন, বোনাস পাচ্ছি। বেতনের সাথে সাথে প্রফিডেন্ট ফান্ডের টাকাও ব্যাংকে চলে যাচ্ছে।
নগরবাসী আগ্রহ নিয়ে কর পরিশোধ করেছেন। আগে মালামাল ক্রোকের ভয় দেখিয়েও সম্ভব হত না। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষ আর সিনিয়র সিটিজেনরা নগর ভবনের ১০২ নম্বর রুমে গিয়ে যাবতীয় সেবা গ্রহনের সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের এক রুম থেকে অন্য রুমে ছোটাছুটি করতে হয় না। গভীর নলকূপ বসানোর কাজের জন্য অর্থের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। অসুস্থ রোগী, প্রতিবন্ধী এবং যাদের বাড়ির ছাদে বাগান আছে, সেইসব পরিবার হোল্ডিং করের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় পাচ্ছেন। আর এ কাজের অংশীদার হতে পেরে কর্পোরেশনের স্টাফরা নিজেদের ধন্য মনে করছেন। মেয়রের সুরে সুর মিলিয়ে তারাও বলছেন- একটি সুন্দর আগামীর বরিশাল গড়তে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাবো।