বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ, ১৪৩১
হেলেন রহমান আঁখি
মেহেদী হাসান পেশায় একজন সাংবাদিক। বর্তমান সময়ে শহরে যে ক’ জন সাংবাদিক নামকরা বা জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে তন্মধ্যে মেহেদী হাসান অন্যতম। ফেসবুকের সুবাদে একদিন পরিচয় হয় তার সাথে এক লেখিকার। সে আবার শিক্ষক ও কবি। বাচ্চাদের পড়ায় আর কবিতা লেখে। ক্রমে ক্রমে সাংবাদিকের সাথে ভালো সখ্যতা গড়ে ওঠে। কবিতা শোনান, যখন-তখন কথা বলার প্রবণতা এখন সময়ের বড় দাবী।
সাংবাদিক দেখতে যথেষ্ট সুদর্শন। অবশ্য লেখিকা মন্দ নয়। সেও বেশ ভালো দেখতে।ও….! লেখিকার নাম বলা হয়নি। সঞ্চিতা রহমান। সঞ্চিতা বেশ হাসিখুশি, সরল এবং প্রাণচঞ্চল বলাচলে। ভালোই কথাবার্তা হয় দু’ জনার। একদিন তারা সিদ্ধান্ত নিল দেখা করবার। মেয়েটি পড়ল সবুজ রংয়ের সিল্কের শাড়ি আর ছেলেটি পড়ল মেরুন রংয়ের পাঞ্জাবী। ভালো একটা রেস্টুরেন্টে বসল তারা। বেশ আন্তরিকতায় তাদের প্রথম আলাপ হলো সম্পন্ন। তারপর শুধুই মুগ্ধতা বেড়ে চলল। হঠাৎ মেয়েটি কেমন যেন খেয়ালী হয়ে উঠল। যে খেয়ালী পনা ছেলেটির আত্মসম্মানবোধ কে স্পর্শ করল।ছেলেটি বেশ কষ্ট পেয়ে কঠোর হয়ে উঠলো।
আজকাল দু’ জনাতে ততটা আর কথা হয় না। মেয়েটি মাঝে মাঝে নক করলে কখনও সাড়া মেলে,কখনও আবার সাড়া মেলে না। মেয়েটি জানাল- সে ছেলেটিকে খুব ফিল করে। ছেলেটি সেকথা শুনতে ততটা আগ্রহী নয়। আজকাল মেয়েটি রিং করলে ভিডিওতে ছেলেটি কয়েক সেকেন্ড দেখে নিজেকে আড়াল করে, মাঝে মধ্যে নিজেও দেখা দেয়। এভাবে অনিশ্চিত বিচ্ছিন্নতার মধ্য দিয়ে কাটছে সময়। মেয়ে টি বুঝতে পারল- সে সাংবাদিক কে খুব ভালোবাসে! তার মনেহচ্ছে আজকাল- যদি সাংবাদিক কে মনভরে সে দেখতে পারত বা পেত তবে মিটত তার তৃষিত মনের ক্ষুধা।
একদিন সাংবাদিক নিউজ স্পটে। হঠাৎ কিছু মাস্তান টাইপের লোক তাকে আক্রমণ করে। টিভিতে প্রচার হচ্ছে,ফেসবুকে স্ট্যাটাস এলো তার এ দুর্ঘটনার ওপর। দিশেহারা মত লেখিকা ছুটে গেল সাংবাদিক কে দেখার জন্য। সাংবাদিকের দু’ টো চোখই নষ্ট হয়ে গেল। শরীর ক্ষত-বিক্ষত।লেখিকা ডাক্তারের সাথে কথা বলল। এবং সেখানে পরিচয় দিল সাংবাদিক আর সে খুব ভালো বন্ধু। ভাবল- সাংবাদিকের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে চোখের কারণে, এটা হতে পারে না। লেখিকা সিদ্ধান্ত নিল- সাংবাদিক কে একটি চোখ দান করবে। আকস্মিক ধরা পড়লো- সাংবাদিকের শরীরের রক্তক্ষরণের কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দিয়েছে। কাকতালীয়ভাবে
সাংবাদিক আর লেখিকার রক্তের গ্রুপ এক ও অভিন্ন।লেখিকা ডাক্তারকে বললো- যতক্ষণ পর্যন্ত সাংবাদিকের রক্তশূন্যতা পূরণ না হয় ততক্ষণ আমার শরীর হতে রক্ত নিতে পারেন।সাংবাদিক মহান” আল্লাহর ” ইচ্ছায় একটু সুস্থ হয়ে উঠলো।দু’ দিন পর তার চোখ অপারেশন হতে চলেছে। লেখিকা চায় না- সাংবাদিক জানুক যে লেখিকা তাকে চোখ দান করছে।চাওয়া অনুযায়ী লেখিকার ডাক্তাররা সাংবাদিক কে বলল না তার রক্ত কিংবা চোখ কে দিল বা কোথা হতে সংগ্রহ করা হলো।
চোখ খোলার আগে লেখিকা একবার সাংবাদিক কে দেখার জন্য গেল।কপালে- গালে হাত দিতে সাংবাদিক নিজের অজান্তে বলে উঠলো …লেখিকা!
কথা বলল না লেখিকা। চোখে পানি লয়ে ওপাশে সরে গেল।সাংবাদিক ডাক্তারের কাছে জানতে চাইল- এতটা তার জন্য কে করল!
ডাক্তার বলল- সে আপনার শুধু শুভাকাঙ্ক্ষী ই নয় সাংবাদিক সাহেব, বোধ করছি সে আপনাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।
সাংবাদিক নাম জানতে চাইল না আর। বুঝল কে হতে পারে এ শুভাকাঙ্ক্ষী তার।ডাক্তার বলল- সাংবাদিক সাহেব! আপনাকে একটা চিঠি দিতে বলেছে লেখিকা।
সুপ্রিয় সাংবাদিক সাহেব!
খুব ভালোবাসি আপনাকে। কিছুটা অভিমান আপনাকে অভিমানী করে তুলেছে আজকাল। তবে এখন হতে আমি প্রশান্তি পাব একথা ভেবে যে আমার মনের মানুষ আমার চোখে পৃথিবী কে দেখবে। আপনি একদিন খুব আলোড়ন সৃষ্টি করবেন আপনার কর্মে।সেদিন আমার এ উৎসর্গ হবে সার্থক। আমায় প্রশ্ন করবেন না কখনও
কেন আমি এমন করলাম। আপনার সাফল্যে একদিন মুছে যাবে আমার জীবনের সকল গ্লানি…. এ স্বপ্ন আমৃত্যু লালন করবো….লেখিকা
সাংবাদিক খুশিতে, আত্মতৃপ্তিতে উচ্ছ্বাস লয়ে গেল লেখিকার বাড়িতে। যেয়ে দেখে লেখিকার বিয়ে হয়ে গেছে! সাংবাদিক বলল- আমি না হয় আপনার প্রতি একটু অভিমানী ছিলাম। সেজন্য আপনি এতটা শাস্তি আমায় দিতে পারেন না লেখিকা। এতটা কষ্টের কারণ আপনি হতে পারেন না। কি হবে আমার সাফল্য আর বেঁচে থেকে!যে জীবনে নাই আপনি, হলেন অন্যকারো?
পরজনমে আপনার হব সাংবাদিক সাহেব। সেথায় অপেক্ষা করবেন তো! নাকি সে জনমেও অভিমানী হয়ে দূরে সরিয়ে দেবেন লেখিকাকে?
এটি একটি ছোট গল্প