শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
রূপালী স্বাস্থ্য।।
মলাশয়ের নিন্মাংশ বা মলদ্বারের শিরাগুলো ফুলে গেলে সেগুলোকে অর্শ বা পাইলস বলে। এই অর্শ মলদ্বারের অভ্যন্তরেও হতে পারে আবার বাইরেও হতে পারে।
কারণসমূহ-
১. দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া
২. শাকসবজি ও অন্যান্য আশঁযুক্ত খাবার এবং পানি কম খাওয়া
৩. শরীরের অতিরিক্ত ওজন
৪. গর্ভাবস্থা
৫. লিভার সিরোসিস
৬. মল ত্যাগে বেশি চাপ দেয়া
৭. অতিরিক্ত মাত্রায় লেকজেটিভ (মল নরমকারক ওষুধ) ব্যবহার করা বা এনেমা (শক্ত মল বের করার জন্য বিশেষ তরল মিশ্রণ ব্যবহার করা) গ্রহণ করা
৮. টয়লেটে বেশি সময় ব্যয় করা
৯. বৃদ্ধ বয়স
১০. পরিবারে কারও পাইলস থাকা
১১. ভার উত্তোলন, দীর্ঘ্য সময় বসে থাকা ইত্যাদি।
লক্ষণসমূহ-
১. পায়খানার সময় ব্যথাহীন রক্তপাত হওয়া
২. মলদ্বারের ফোলা বাইরে বের হয়ে আসতে পারে, নাও পারে। যদি বের হয় তবে তা নিজেই ভেতরে চলে যায় অথবা হাত দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া যায়। কখনও কখনও এমনও হতে পারে যে, বাইরে বের হওয়ার পর তা আর ভেতরে প্রবেশ করানো যায় না বা ভেতরে প্রবেশ করানো গেলেও তা আবার বের হয়ে আসা।
৩. মলদ্বারে জ্বালাপোড়া, যন্ত্রণা বা চুলকানি হওয়া
৪. কোন কোন ক্ষেত্রে মলদ্বারে ব্যথাও হতে পারে।
করণীয়-
১. কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং নিয়মিত মলত্যাগ করা
২. পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজী ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া এবং পানি (প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস) পান করা
৩. সহনীয় মাত্রায় অধিক পরিশ্রম না করা
৪. প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানো
৫. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা
৬. টয়লেটে অধিক সময় ব্যয় না করা
৭. সহজে হজম হয় এমন খাবার গ্রহণ করা
৮. ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া লেকজেটিভ বেশি গ্রহণ না করা
৯. মল ত্যাগে বেশি চাপ না দেয়া
১০. দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া হলে তার চিকিৎসা নেয়া
অর্শ বা পাইলস রোগে গ্রহণীয় কিছু খাবারঃ শাকসবজি, ফলমূল, সব ধরণের ডাল, সালাদ, দধি, পনির. গাজর, মিষ্টি কুমড়া, লেবু ও এ জাতিয় টক ফল, পাকা পেপে, বেল, আপেল, কমলা, খেজুর, ডিম, মাচ, মুরগীর মাংস, ভূসিযুক্ত (ঢেঁকি ছাঁটা) চাল ও আটা ইত্যাদি।
অর্শ বা পাইলস রোগে বর্জনীয় কিছু খাবারঃ খোসাহীন শস্য, গরু, খাসি ও অন্যান্য চর্বিযুক্ত খাবার, মসৃণ চাল, কলে ছাঁটা আটা, ময়দা, চা, কফি, চীজ, মাখন, চকোলেট, আইসক্রীম, কোমল পানীয়, সব ধরণের ভাজা খাবার যেমনঃ পরোটা, লুচি, চিপস ইত্যাদি।
অর্থ বা পাইলস রোগের চিকিৎসাঃ
১.মলদ্বারের বাইরের অর্শ যা হাতে অনুভব করা যায় তবে ব্যথা বা রক্তপাত হয়না।
২.মলদ্বারের ভিতরের বা বাইরের অর্শে ব্যথা হলে।
৩.মলদ্বারের ভিতরের অর্শ হতে ব্যথাহীন রক্তপাত হলে এবং মলদ্বারের ভিতরের অর্শ যদি বাইরে বের হয়ে আসে এবং তা নিজেই ভেতরে চলে যায় অথবা হাত দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া যায়।
৪.উপরোক্ত চিকিৎসা যদি যথেষ্ট উন্নতি না হয় তাহলে-
অর্শ মলদ্বারের বাইরে হলেঃ
ক. অর্শ ছোট হলে ইনজেকশন দিয়ে অর্শ কেটে ফেলা হয়।
খ. অর্শ বড় হলে বা তাতে রক্ত জমাট বেঁধে গেলে অপারেশন করা হয়।
অর্শ মলদ্বারের ভিতরে হলেঃ
ক. যদি এমন হয় যে মলদ্বারের ভিতরের অর্শ বাইরে বের হয় না বা বের হয় তবে তা নিজেই ভেতরে চলে যায় সেক্ষেত্রে চিকিৎসা-
১. স্কে¬রোথেরাপি যাতে অর্শে ইনজেকশন দেওয়া যায়।
২. ব্যান্ড লাইগেশন যাতে একটি চিমটার সহায়তায় অর্শকে টেনে ধরে রাবার ব্যান্ড পরিয়ে দেওয়া হয়
খ. যদি এমন হয় যে মলদ্বারের ভিতরের অর্শ যদি বের হয়ে আসে এবং বের হওয়ার পর তা আর ভেতরে প্রবেশ করানো যায় না বা হাত দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করানো গেলেও পরে তা আবার বের হয়ে আসে, সেক্ষেত্রে চিকিৎসা-
অপারেশন-
১. পুরনো পদ্ধতিতে অর্শ অপারেশন
২. অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে মলদ্বার না কেটে অর্শ অপারেশন করা হয় (লংগু)
৩. ডায়াথারমি পদ্ধতিতে অর্শ অপারেশন।
ডা: কে.এম. জাহিদুল ইসলাম
এমবিবিএস(ঢাকা), বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এমএস (অর্থোপেডিক সার্জারী) অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল) ঢাকা।