বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ, ১৪৩১
লাইফস্টাইল ডেস্ক।।
জীবনের পথ কণ্টকাকীর্ণ, কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এতে রয়েছে চড়াই-উৎরাই ও বাঁধা-বিপত্তি। জীবনে খারাপ সময় আসতেই পারে। ভুলে গেলে চলবে না রাতের পরেই দিন আসে। প্রয়োজন ধৈর্য্য ও নিজেকে ভালোবাসা। কিন্তু জীবনে একের পর এক ব্যর্থতায় অনেকেই ভেঙ্গে পড়েন, মানসিক যন্ত্রণায় এক পর্যায়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের মানুষের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। আত্মহত্যা কিন্তু হুট করেই কেউ করে না। এটি প্রতিরোধযোগ্য বিষয়। সঠিক সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে অবশ্যই আত্মহত্যা ঠেকানো সম্ভব।
আত্মহত্যার পরিসংখ্যান: পৃথিবীতে বছরে আট লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে থাকেন। অবিশ্বাস্য শুনালেও সত্যি, প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন আত্মহত্যা করেন। বাংলাদেশে বছরে গড়ে ১০ হাজার জন আত্মহত্যা করেন। বাংলাদেশ পুলিশের পরিসংখ্যান মতে, গত জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সারা দেশে ৭৩৯১টি আত্মহত্যার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এসব আত্মহত্যার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, তুচ্ছ কারণ ও পারিবারিক কলহ এবং পরকীয়াসহ নারী ঘটিত কারণে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটেছে।
পাশ্চাত্যে মধ্য বা শেষ বয়সী মানুষেরা একাকিত্বে বেশি ভোগেন, যার কারণে সেখানে ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী একাকী পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশে তরুণীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তুলনামূলক বেশি।
বাংলাদেশে আত্মহত্যার যত কারণ: বাংলাদেশে যৌতুক ও পারিবারিক নির্যাতন, আবেগ নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা, দাম্পত্য কলহ, উত্ত্যক্তকরণ, প্রেম ও পরীক্ষায় ব্যর্থতা, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব, আত্মহত্যার উপকরণের সহজপ্রাপ্যতা, মানসিক অসুস্থতা, মাদকে আসক্তি ইত্যাদি কারণে বেশির ভাগ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে।
হতাশাজনিত বিষয় বড় কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে আত্মহননের জন্য। গেম খেলতে না দেওয়া, নতুন মোবাইল ফোন বা পোশাক কিনে না দেওয়ার মতো ঘটনায়ও অভিমানে আত্মহত্যার ঘটনা হচ্ছে। নৈতিক স্খলন, তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার, ব্ল্যাকমেলিংয়ের কারণেও আশঙ্কাজনক হারে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েই চলছে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে যা করবেন-
একাকিত্ব নয়: কখনোই একা থাকবেন না। পরিবার, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে নিজের কষ্ট ভাগাভাগি করে নিন। পারিবারিক বন্ধনগুলো দৃঢ় করুন। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করুন কিংবা ফোনে ভিডিও কলে কথা বলুন। পরিবারে প্রত্যেকের সঙ্গে গুণগত সময় কাটান।
বিচ্ছেদে হতাশ হবেন না: নিজের যত্ন নিতে হবে। আপনার দেহ-মন-আত্মার পরিচর্যা করুন। প্রেমের সম্পর্কে বিচ্ছেদ হলে শোক সইতে হবে, কিন্তু ক্লান্ত-হতাশ হবেন না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় না হয়ে কষ্টদায়ক অনুভূতিগুলো ধীরে ধীরে কমিয়ে আনুন। প্রয়োজনে পরিবার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সহায়তা নিন, কান্না করুন, ক্রোধ প্রকাশ করুন, এতে নিজেকে হালকা করতে পারবেন। একটু ব্রেক নিন। নিজেকে কখনো গুটিয়ে নেবেন না। যত দ্রুত আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন তত দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।
নিজেকে সময় দিন: নিজে রান্না করুন, ভালো খাওয়াদাওয়া করবেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরবেন, শরীরচর্চা করুন, রুটিন করে ঘুমাবেন। সাইকেল চালান, নিজের ঘরটাকে নতুন করে সাজিয়ে নিন। প্রকৃতির কাছাকাছি কোথাও ঘুরতে যাবেন। এতে মনের আরোগ্য দ্রুত হবে।
নতুন কিছু করতে শিখুন: নতুন মানুষ, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন সাপোর্ট গ্রুপে যোগ দিন। বাগান করতে পারেন। সৃষ্টিশীল ও গঠনমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করুন নিজেকে। বই পড়ুন, বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সিনমো হলে গিয়ে মুভি দেখুন।
নিজের ওপর আস্থা রাখুন: নিজের ওপর আস্থা রাখতে হবে। মনে রাখবেন, এই আপনি জীবনের অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এসেছেন, অনেক দূরের পথ হেঁটে এসেছেন, থেমে থাকেননি। বর্তমানেও আপনি টিকে যাবেন সে আস্থাটুকু রাখুন। নেতিবাচক চিন্তা না করে জীবনমুখী হোন। ভাবতে শিখুন, আমার এখনো ভবিষ্যৎ আছে।
সন্তানের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিন: সন্তানদের ক্ষেত্রে প্রতিটি মা-বাবাকে বাচ্চার কল্যাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোনো বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে সন্তানদের জন্য কোনটি মঙ্গলজনক হবে, সেটি গুরুত্ব দিতে হবে। কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকলে সেটির নিরসন করুন। তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। সন্তান যদি কোনো কারণে অভিমান করে তাহলে তাদের কাছে থাকুন, বুকে জড়িয়ে নিন। পিঠ চাপড়ে দিন, চুমু দিন। ঘনিষ্ঠভাবে ধরে রাখুন। বুঝাতে চেষ্টা করুন, প্রয়োজনে আপনি তার জন্য সব করবেন।
সবশেষে মদ, মাদক কখনোই গ্রহণ করবেন না। ঘুমের ওষুধ খেতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এক্ষেত্রে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে। যেকোনো ধরনের মানসিক সমস্যা বা আত্মহত্যার ইঙ্গিত পেলে দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হবেন। মনে রাখবেন আপনার জন্ম হয়েছে জীবনে হেরে যাওয়ার জন্য নয়। বরং জীবনকে বারবার পুনর্নির্মাণ করে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণ করার জন্য। কারণ আপনি পারেন, আগেও সব জটিলতাকে জয় করে সামনে এগিয়ে গিয়েছেন। তাই আত্মহত্যা নয়, জীবনকে উপভোগ করুন।