মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ, ১৪৩১
সাফায়েত আল মামুন, আমতলী।।
আমতলীতে আমন জাতের বিআর-২৩, বিআর-৫২, বিআর-১১ ও বিআর-৪৯ বীজের তীব্র সংকট সৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কৃষকের অভিযোগ, কৃত্রিম সংকট তৈরী করে অতিরিক্ত দামে বীজ বিক্রি করছে ডিলারগণ। কিন্তু ডিলার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দাবী করছেন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম।
কৃষকরা দোকানের পর দোকান ঘুরেও কোন ডিলারের কাছে পাচ্ছে না আমনের ৪টি জাতের বীজ। এমনকি ডিলারদের আগাম টাকা দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী এ জাতের বীজ না পেয়ে দিশেহারা কৃষকরা। এদিকে বিএডিসির সরবরাহকৃত এ ৪টি জাতের বীজ বাজারে না থাকার সুযোগে বিভিন্ন কোম্পানীর ডিলাররা বীজের মূল্য তিন থেকে ৪ গুন বাড়িয়ে বিক্রি করছে। আমতলীতে সরকারী ভাবে উল্লেখিত জাতের বীজ সরবরাহ না করলে অনেক জমি অনাবাদি থাকার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। তারা সরকারের নিকট দ্রুত বীজ সরবরাহের দাবী জানিয়েছেন।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আমতলীতে এ বছর আমনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৫শ’ হেক্টর। এতে বীজ ধান প্রয়োজন ৫’শ ৮০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৯৫% কৃষকের ফলন ভালো হওয়ায় বিআর-২৩, বিআর-৫২, বিআর-৪৯ ও বিআর-১১ জাতের বীজ ধানের চাষাবাদ করেন বেশী। উপজেলার মোট জমির অর্ধেক বীজ নিজেদের রয়েছে বাকী অর্ধেক জমির জন্য দুই’শ ৯০ মেট্রিক টন বীজের চাহিদা রয়েছে। আমতলী কৃষি অফিস দুই’শ ৯০ মেট্রিক টন আমন ধানের বীজ বরাদ্দ চেয়ে পটুয়াখালী বিএডিসি কতৃর্পক্ষকে চাহিদা পাঠিয়েছে। কিন্তু বিএডিসি কর্তৃপক্ষ কৃষি অফিসের চাহিদা অনুযায়ী বীজ সরবরাহ করছে না। ইতিমধ্যে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ আমতলীতে ৫৮ মেট্রিক টন বীজ ধান বরাদ্দ দিয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তাদের দেয়া বীজ ধান গত সপ্তাহের তিন দিনে বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানান ডিলাররা।
অনেক কৃষক বলেন, বীজ না পেলে অনেকের জমি অনাবাদি থেকে যাবে। পুরো আষাঢ় মাস জুড়ে আমনের বীজতলা তৈরী করে রেখেছেন। কিন্তু বাজারে বিআর-২২, বিআর-২৩, বিআর- ৫২ (ভিত্তি), বিআর-৪৯, বিআর-১১, বিনা-৭, বিরি-৪০ ও বিরি-৪৪ মোট আট জাতের বীজ রয়েছে। এর মধ্যে বিআর-২৩ ও বিআর-৫২ (ভিত্তি), বিআর-১১ ও বিআর-৪৯ জাতের ধানের চাহিদা বেশী। এ চার জাতের ধানের বীজে ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকদের এ বীজের প্রতি কৃষকের আগ্রহ বেশী।
কৃষকরা অভিযোগ করেন, ডিলার ও বিএডিসি কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেট করে বাজারে বীজের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে অধিক মূল্যে বীজ বিক্রি করছে। অনেক ডিলার বীজ গুদামজাত করে রেখেছে। তাদের চাহিদামত অতিরিক্ত দামে বীজ বিক্রি করছে। এদিকে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর বিভিন্ন জাতের বীজ ধান রয়েছে। সুযোগ বুঝে কোম্পানীর বীজ ডিলাররাঅধিক মুল্যে বিক্রি করছে। বিআর-২৩ ১০ কেজি প্যাকেটের মূল্য ৩৯০ টাকা। প্রাইভেট কোম্পানীগুলো এ বীজ বিক্রি করছে সাড়ে ৮শ’ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা করে। বিআর-৫২, বীজআর-১১ ও বিআর-৪৯ এর সরকারী মূল্য ২৯০ টাকা করে অথচ প্রাইভেট কোম্পানীগুলো বিক্রি করছে ৫৬০ টাকা থেকে ৭শ’ টাকা পর্যন্ত।
রবিবার আমতলী পৌর শহরের হাসপাতাল সড়কের মেসার্স ইউনুস এন্ড সন্স, মামুন এন্টার প্রাইজ ও আরিফ স্টোর, আমতলী কলেজ রোডের গাজী বীজ ভান্ডার ও আমতলী বীজসহ বহু বীজের দোকানে ঘুরে দেখাগেছে কোন ডিলার ও বীজের দোকানে বিআর-২৩ ও বিআর-৫২ (ভিত্তি), বিআর-৪৯ ও বিআর ১১ জাতের বীজ ধান নেই। আমতলী কলেজ রোডের গাজী বীজ ভান্ডার ও আমতলী বীজ ভান্ডারে প্রাইভেট কোম্পানীর বিআর-৫২, বিআর-১১, বিনা-৭ বিআর-৪৯ জাতের বীজ সাড়ে ৯ শ’থেকে ১হাজার টাকায় কৃষকের কাছে বিক্রি করছে।
কাউনিয়া গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান ও রুহুল আমিন বলেন, বিআর-২৩ জাতের বীজের জন্য ডিলারের কাছে গত এক সপ্তাহ পূর্বে টাকা ও পরিচয়পত্র জমা দিয়েছি কিন্তু এখনো বীজ পাইনি। বীজ আদৌ পাব কিনা না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তারা আরো বলেন, দ্রুত বীজ ধানের ব্যবস্থা না করলে অনেক জমি অনাবাদী থেকে যাবে।
আঠারোগাছিয়া গ্রামের বজলুর রহমান বলেন, ছয় বস্তা বিআর-২৩ জাতের ধানের বীজের জন্য আমতলী পৌর শহরের সকল বীজের দোকানে ঘুরেছি কোথাও পাইনি। শুধু ডিলাররা আশ্বাস দিচ্ছে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ বীজ ধান পাঠাবে।
পশ্চিম চাউলা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিআর-২৩ ধানের বীজ উপজেলার কোথাও খুঁজে পাওয়া পাচ্ছে না। যা আছে ডিলাররা গোপনে অধিক মুল্যে বিক্রি করছে। তিনি আরো বলেন বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর বীজ ৮’শ থেকে ৯’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আমতলী হাসপাতাল সড়কের মেসার্স ইউনুস এন্ড সন্সের মালিক বিএডিসি’র ডিলার ইউনুস মিয়া বলেন, বাজারে বিআর-২৩ ধানের কোন বীজ নেই।এছাড়াও বিআর-৫২ ও বিআর-৪৯ বিআর-১১ জাতের বীজের সংকট চলছে। মেসার্স মামুন এন্টার প্রাইজের মালিক বিএডিসি’র ডিলার মোঃ মামুন হাওলাদার বলেন, বীজের প্রচুর চাহিদা আছে কিন্তু বিএডিসি বীজ সরবরাহ না করায় আমরা কৃষকদের দিতে পারছি না।
পটুয়াখালী বিএডিসি কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান বীজ সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, আমতলীতে ৫৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন জাতের আমনের বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত বীজ ইতিমধ্যে সরবরাহ করেছি। সরবরাহকৃত বীজের মধ্যে ২৫.৫ মেট্রিকটন বীজ বিআর-২৩ জাতের। তিনি আরো বলেন, আমতলীতে ৯৫% কৃষকের বিআর-২৩ জাতের বীজের চাহিদা রয়েছে। উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারনে তাদের জন্য বিএডিসি বীজ সংরক্ষণ করে রেখেছে। বন্যার উন্নতি হলে আগামী সপ্তাহে দক্ষিণাঞ্চলে বীজ সরবরাহ করা হবে।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বীজের তীব্র সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, বিএডিসি কর্তৃপক্ষের কাছে ২’শ ৯০ মেট্রিক টন বীজ ধানের চাহিদা দেয়া হয়েছে কিন্তু তারা ৫৮ মেট্রিক টন বীজ বরাদ্দ দিয়েছে। যা কৃষকের চাহিদার তুলনায় খুবই কম।
আমতলী উপজেলা নিবার্হী অফিসার ও সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি মনিরা পারভীন বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস ও পটুয়াখালী বিএডিসি’র সাথে যোগাযোগ করে কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বীজ সংগ্রহ করে সরবরাহ করা হবে , কোন কৃষকের বীজ সংকট থাকবে না।