শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
অনলাইন ডেস্ক।।
ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও করোনাভ্যাকসিন নিতে পারছেন না তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা। জন্মনিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের জটিলতার কারণে টিকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। অথচ করোনাকালীন এই সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করতে দেখা গেছে তাদের অনেককে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদেরও টিকা নেয়ার ক্ষেত্রেবিশেষ ব্যবস্থা থাকা উচিত। অন্যথায় তাদের জীবনের ঝুঁকিতো রয়েছেই পাশাপাশি যাদের সংস্পর্শে যাবেন তারাও জীবন শঙ্কায় পড়তে পারেন। রাজধানীর বিজয় সরণির সিগন্যালে প্রতিদিনের মতো টাকা তুলছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য আশালতা। কথা হয় তার সঙ্গে। বলেন, লকডাউনের সময় খেয়ে না খেয়ে দিন কেটেছে।
কেউ একবার ফিরেও তাকায়নি। টিকাতো অনেক পরের বিষয়। এখনো ভিক্ষা করে খাই। টিকা নেয়ার ইচ্ছা আছে কিন্তু ব্যবস্থা তো সরকার করেনি। আমরাও করোনা থেকে বাঁচতে চাই। তৃতীয় লিঙ্গের এই নারী বলেন, নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন নেত্রকোনায় থাকা পরিবার ছেড়ে ঢাকায় চলে আসি। এরপর থেকে শুরু হয় জীবনযুদ্ধ।
আশালতা বলেন, যখন দেখেছি করোনা টিকার জন্য নিবন্ধন হচ্ছে তখন আগ্রহ নিয়ে রাজধানীর একটি সরকারি হাসপাতালে যাই। যেখানে তারা জাতীয় পরিচয়পত্র চাইলে দিতে পারিনি। পরবর্তীতে স্থানীয় একটি কম্পিউটার কম্পোজের দোকানে দেখি টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করছে। আমিও টাকা নিয়ে গেলাম। কিন্তু সেখানেও একইভাবে জন্মনিবন্ধন-জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে বলে জানায়। কিন্তু আমাদের যে পরিচয়পত্র নেই।
সমাজসেবা অধিদপ্তর বাংলাদেশের হিসাব বলছে, দেশে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। বেসরকারি হিসাব মতে, আড়াই লাখ। যদিও ২০১৪ সালের ২৬শে জানুয়ারি হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এরপরও তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে। ফলে আগ্রহ থাকলেও তারা টিকা নিতে পারছে না। বয়সসীমা নিয়ে বিভ্রান্তি, সুরক্ষা অ্যাপে তৃতীয় লিঙ্গ অপশন না থাকা, নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা না থাকাসহ বিভিন্ন কারণ রয়েছে।
এ বিষয়ে কথা হয় বৈশাখী টেলিভিশনে প্রথম সংবাদ পাঠ করা ট্রান্সজেন্ডার নারী তাসনুভা আনান শিশিরের। তাসনুভা আনান বলেন, আমরা কেন টিকা থেকে বঞ্চিত হবো? টিকাটা যেহেতু খাবার জিনিস না। একটি নির্দিষ্ট বয়সী মানুষদের নিতে হয়। করোনার তো বাবা-মা নেই। টিকা মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। তাছাড়া এমন নয় যে, ভাইরাসটি ট্রান্সজেন্ডারের শরীরে ঢুকবে না। অথবা তার মাধ্যমে অন্য কেউ আক্রান্ত হবে না। জীবন-জীবিকার তাগিদে আমাদের জনগোষ্ঠীর মানুষদের হাট-বাজার, বিয়েবাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন জনসমাগমে যেতে হয়। এক্ষেত্রে তিনি যে রোগটি বহন করে আপনাকে আক্রান্ত করছেন না- এটার নিশ্চয়তা কে দেবেন। এক্ষেত্রে শুধু জাতীয় পরিচয়পত্রের বিকল্প হিসেবে ভেবে দেখার সময় এসেছে।
এ বিষয়ে প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রথমেই সাধুবাদ জানাতে চাই তারা এ বিষয়ে এগিয়ে এসেছে। শুধুমাত্র তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নয়, সমস্ত টিকা ব্যবস্থার মধ্যেই ঘাটতি আছে। তাদের টিকার বিষয়টি নির্ভর করবে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের সক্ষমতার উপর। স্বাস্থ্য বিভাগের সক্ষমতা খুব বেশি নাই। তবে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীরা অনেক সংঘবদ্ধ। যেহেতু তাদের টিকার কথা একবার উঠেছে তাই অচিরেই এ বিষয়ে সরকার তথা স্বাস্থ্য বিভাগ যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন- এমনটি জানান তিনি।