শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ, ১৪৩১
ডাঃ মো: আলী হাসান।।
পরবর্তি দিনগুলোতে এরকম জরুরি রোগী অনেক এসেছে, কিছু জেলা সদরে পাঠাতে পারতাম, বাকিদের জন্য করার কিছু থাকতো না, চোখের সামনেই তারা মারা যেতো। একদিন পনেরো/ষোল বছর বয়সী এক মেয়ে এলো, ডেলিভারি হয়ে গেছে কিন্তু ফুল পড়েনি, প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। চিকিৎসা তেমন কিছু কঠিন ছিল না, শুধু রক্ত দেয়া আর ফুলটা বের করা। কিন্তু আমাদের সে সুযোগ ছিল না, মেয়েটা ওই বয়সেই মারা গেল।
ইতিমধ্যে আমাদের ওখানে দুজন মহিলা ডাক্তার আসলেন, উনাদের একজন গাইনিতে ট্রেনিং করা আর একজন সার্জারিতে। এ সমস্ত ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় আমরা একত্রে কাজ করতাম, কিন্তু কিছুই করতে পারতাম না কারণ আমাদের শুধু চার হাত পা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। অথচ এ বিষয়গুলো মোকাবিলা করা খুব কঠিন কিছু ছিল না। লাগতো একটা অপারেশন থিয়েটার আর একটা পরীক্ষা করার সাপোর্ট যাতে রক্ত দেবার ব্যবস্থা থাকে। ন্যুনতম এটুকু সুবিধা থাকলে আমাদের যে জনবল ছিল তা দিয়ে আমরা অনেক জীবন বাঁচাতে পারতাম। শুধু দরকার ছিল সঠিক পরিকল্পনা আর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার।
স্বাধীনতার অনেকদিন পার হয়েছে, একত্রিশ শয্যার হাসপাতাল পন্চাশ শয্যায় উন্নিত হয়েছে, অবকাঠামো তৈরি হয়েছে, পদের সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু বাড়েনি যেটা সেটা হলো সেই চিকিৎসাসেবা। পদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে কিন্তু জনবল বাড়েনি। যেখানে জনবল আছে সেখানে প্রয়োজনিয় সুযোগ সুবিধার অভাবে এ জনবল চিকিৎসাসেবায় কোন কাজে আসছে না। খুব সাধারণ একটা উদাহরণ দেই, একজন হাড়জোর বিশেষজ্ঞের দরকার একটা এক্স-রে, বাস্তবতা হলো এতবছর পরেও বেশিরভাগ হাসপাতালে এ সুবিধা এখনও চালু হয়নি। মেশিন আছেতো টেকনিশিয়ান নাই, টেকনিশিয়ান আছেতো মেশিন নাই অথবা অকেজো। এ পরিস্থিতিতে ওই বিশেষজ্ঞের মেডিক্যাল অফিসারের চাইতে বেশি কিছু করার থাকে না। চলবে…
লেখক: (শিশু বিভাগ) এর সাবেক সহকারী অধ্যাপক, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল।