বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ, ১৪৩১
বাগেরহাট প্রতিনিধি।।
‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ প্রকল্পের ক্ষুদ্র ঋণ বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। চিতলমারীর বেকার তরুন তরুনী, গৃহিণী ও দরিদ্র চাষিরা এ প্রকল্প থেকে ঋণ নিয়ে দারিদ্র বিমোচন করেছেন।
এ প্রকল্পের আওতায় হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, মৎস্য চাষসহ বিভিন্ন প্রকল্পে সহজ শর্তে ঋণ নিয়ে অনেক অসহায় নারী-পুরুষ সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের পায়ে দাড়াতে সক্ষম হয়েছে। নিজেদেরকে করেছে স্বাবলম্বী।
‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ প্রকল্পের চিতলমারী উপজেলা অফিস সুত্রে জানাগেছে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে শুসংগঠিত করে সঞ্চয়ের উৎসাহ প্রদান করে সদস্যদের যুবউন্নয়নের মাধ্যমে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মকর্ম সংস্থানের সৃষ্টি করে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করছেন। চিতলমারী উপজেলায় এ পর্যন্ত ২৩০টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠন করা হয়েছে। যার সদস্য সংখ্যা ৯ হাজার ৭৪২ জন। এসব সমিতির এপর্যন্ত তহবিল দাড়িয়েছে ১৩ কোটি ১০ লাখ টাকা।
চিতলমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের কালশিরা গ্রামের কবিতা মন্ডল জানান, ‘আমার বাড়ি, আমার খামার থেকে তিনি উপকৃত হয়েছেন। এখান থেকে ঋণ নিতে কোন কাগজপত্র, ঘুষ দিতে হয়না। সেখান থেকে তিনি সহজ শর্তে দুইদফায় ঋণ নিয়ে একটি হাঁস- মুরগির খামার করেছেন।
একই এলাকার বনানী মন্ডল জানান, এই প্রকল্প থেকে ঋণ নিয়ে তিনি ও তার স্বামী মিলে একটি পাংগাস মাছের খামার গড়ে তুলেছেন। প্রথম দফায় মাছ বিক্রি করে তাদের আসল টাকা উঠে গেছে। এখনও অনেক মাছ রয়েছে। এই মাছ বিক্রি করে তারা লাভবান হবেন। আগামী বছরও তিনি বেশি পরিমানে ঋণ নিয়ে আরো বেশি জমিতে মাছ চাষ করবেন।
হতদরিদ্র কল্পনা ব্রক্ষ জানান, ‘ আমার স্বামী কোন কাজ করতে পারেন না। আমরা অতি দরিদ্র মানুষ। আগে এক সময় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতো। কালশিরা রুহেরকুল গ্রাম উন্নয়ন সমিতি থেকে মাত্র ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আর কিছু কাটা জোগাড় করে একটি গাভি কিনেছিলাম। দুধ বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করেছি। পরে আবার ঋণ নিয়ে আরো গরু কিনেছি। এখন আমার খামারে ৬টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে দুটি গাভিতে দুধ হয়। এখন আর আগের মত সংসারে অভাব নেই।
‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ প্রকল্পের স্থানীয় মাঠ সহকারী ইন্দ্রজিৎ মন্ডল বলেন, চিতলমারী উপজেলার এই এলাকায় হতদরিদ্র মানুষের বসবাস। এখানের মানুষ আগে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিতে নিতে ঋণের জালে জড়িয়ে আরো দরিদ্র হয়ে যাচ্ছিল। তিনি এখানে যোগদানের পর সবাইকে বুঝিয়ে ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ প্রকল্পের অধিনে গ্রাম সমিতি গঠন করেন। এখন থেকে সহজ শর্তে ঋণ নিয়ে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছে। তিনি সদস্যদের ঠিকমত বুঝাতে পারায় সারা দেশের মধ্যে তৃত্বীয় অবস্থান করেছেন বলে জানান।
চিতলমারী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: নিজাম উদ্দিন শেখ জানান, তার ইউনিয়নের অনেক লোক ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ প্রকল্পের থেকে সহজ শর্তে ঋণ নিয়ে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, কৃষিও মৎস্য খামার গড়ে তুলে সফল হয়েছেন।
চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মারুফুল আলম জানান, আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্প দারিদ্র্য বিমোচনে প্রধানমন্ত্রীর একটি অগ্রাধিকারমূলক কর্মসূচি। চিতলমারী এ কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্প দারিদ্র্য দূরীকরণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে।
এ প্রকল্পটি এক সময় দেশ থেকে পুরোপুরি দারিদ্র্য দূরীকরণে মূখ্য ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্টরা।